Advertisement
০৩ মে ২০২৪
Man carrying Daughter on Lap

দেখাশোনার লোক নেই, মা-হারা ৮ মাসের সন্তানকে কোলে নিয়েই টোটো চালান অসহায় বাবা!

কী ভাবে মেয়েকে মানুষ করবেন তা ভেবেই দিশাহারা হয়ে পড়েছিলেন কমলেশ। তাঁর কথায়, “বুঝতে পারছিলাম না কী করব, কোথা থেকে শুরু করব। সন্তানকে দেখাশোনা করতে গিয়ে চাকরিটাও চলে গিয়েছিল।”

Kamalesh with his daughter

মেয়ে সরস্বতীকে কোলে নিয়ে টোটো চালাচ্ছেন কমলেশ বর্মা। ছবি: সংগৃহীত।

সংবাদ সংস্থা
বালিয়া শেষ আপডেট: ২১ এপ্রিল ২০২৩ ১৪:০৭
Share: Save:

তিনিই মা। তিনিই বাবা। একরত্তি সন্তানের জন্য একসঙ্গে দুটো দায়িত্বই পালন করে চলেছেন তিনি। এই কাহিনি এক অসহায় বাবার।

কমলেশ বর্মা। বয়স ৩২। পরিবার বলতে পক্ষাঘাতগ্রস্ত মা এবং ৮ মাসের এক কন্যাসন্তান সরস্বতী। সন্তান জন্মের কয়েক মাস পরেই কমলেশের স্ত্রী অন্তিম মারা যায়। তার পর থেকে মা, আট মাসের দুধের শিশু আর একমাত্র রোজগারের সঙ্গী টোটোই তাঁর জগৎ।

কমলেশরা চার ভাই। তার মধ্যে দু’জনের আগেই মৃত্যু হয়েছে। দুই ভাই আলাদা থাকেন। পক্ষাঘাতগ্রস্ত মা আর সন্তানকে নিয়ে উত্তরপ্রদেশের বালিয়ায় একটি ঘুপচি ঘরে থাকেন কমলেশ। স্ত্রী অন্তিমের মৃত্যুর পর থেকে সন্তানের দেখাশোনার পুরো দায়িত্বই এখন তাঁর। সন্তানের দেখাশোনা করা, শয্যাশায়ী মায়ের সেবা করা, টোটো নিয়ে বেরোনো, সবই একা হাতে সামলান কমলেশ।

সর্বভারতীয় সংবাদমাধ্যম দৈনিক ভাস্করকে কমলেশ বলেন, “৩ বছর আগে বিয়ে হয়েছিল আমার। সে সময় একটি কারখানায় কাজ করতাম। মাসে ৮-১০ হাজার টাকা উপার্জন হত। তাতে ভাল ভাবে সংসার চলে যেত। আট মাস আগে আমাদের কোল আলো করে সরস্বতী আসে। স্ত্রী আর আমি খুব আনন্দে দিন কাটাচ্ছিলাম। কন্যাসন্তান হওয়ায় অনেকেই আমাদের দু’জনকে নানা কটু কথা শুনিয়েছিল। কিন্তু আমরা তাতে খুব একটা পাত্তা দিতাম না। মেয়েকে নিয়েই আমাদের সময় কেটে যেত।”

কমলেশ আরও জানান, তিনি স্থির করে নিয়েছিলেন যে কারখানার কাজ ছেড়ে আরও বেশ টাকা উপার্জনের পথ খুঁজবেন। স্ত্রীও তাতে সায় দিয়েছিলেন। সব কিছু ঠিকঠাকই এগোচ্ছিল। কিন্তু তার মধ্যেই আচমকা স্ত্রী অসুস্থ হয়ে পড়েন। তার পরই তাঁর মৃত্যু হয়। কমলেশের কথায়, “স্ত্রী মারা যাওয়ায় খুব ভেঙে পড়েছিলাম। মেয়েটার জন্য খুব চিন্তা হত। কী ভাবে ওকে মানুষ করব। ওই একরত্তি দুধের শিশুটি জানতেও পারেনি তাঁর মা আর নেই। অগত্যা কোনও পথ খুঁজে না পেয়ে মেয়ের দেখাশোনার দায়িত্ব নিজেই নিলাম। বৌদিদের বলেছিলাম সরস্বতীকে দেখাশোনার জন্য। কিন্তু ওঁরা মুখ ফিরিয়ে নিয়েছিলেন।’’

কী ভাবে মেয়েকে মানুষ করবেন তা ভেবেই দিশাহারা হয়ে পড়েছিলেন কমলেশ। তাঁর কথায়, “বুঝতে পারছিলাম না কী করব, কোথা থেকে শুরু করব। সন্তানকে দেখাশোনা করতে গিয়ে চাকরিটাও চলে গিয়েছিল। ফলে আরও সমস্যায় পড়েছিলাম। কিন্তু মেয়েকে তো বাঁচিয়ে রাখতে হবে! টাকাপয়সা যা ছিল সবই খরচ হয়ে গিয়েছিল। একটা সময় ধার করে মেয়ের জন্য দুধ কিনতে হয়েছে।”

কমলেশের এই পরিস্থিতি দেখে তাঁর শ্যালক সাহায্য করতে এগিয়ে আসেন। তিনি কমলেশকে একটি টোটো কিনে দেন। এক বন্ধুর সাহায্যে টোটো চালানো শেখেন কমলেশ। এখন সেই টোটোই তাঁর উপার্জনের একমাত্র উপায়। কমলেশের রোজের রুটিন হল, ভোরে ওঠা। রান্না করা। তার পর মায়ের সেবা করা। মাকে খাইয়ে, সব ব্যবস্থা করে, মেয়ের জন্য খাবারের আয়োজন করা। মেয়েকে খাইয়ে তাকে সঙ্গে নিয়েই বেরিয়ে পড়েন যাত্রী খুঁজতে। মেয়েকে কোলের সঙ্গে বেঁধে নেন কমলেশ। আর এ ভাবেই ৫০ কিলোমিটার টোটো চালান। দিনে ৮০০-১০০০ টাকা আয় হয় কমলেশের। এ ভাবেই একাধারে তিনি একরত্তি সরস্বতীর মা এবং বাবার দায়িত্ব পালন করে চলেছেন। কমলেশ বলেন, “যখন কোনও যাত্রী পাই না, তখন টোটোতে বসেই মেয়ের সঙ্গে খেলি, সময় কাটাই।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Toto driver Balia
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE