Advertisement
১৬ মে ২০২৪

শতবর্ষ পরে দাঁড়ালেন ‘নিজের’ মূর্তির সামনে

সেই শিলং মেল নেই। নৌকায় ব্রহ্মপুত্র পার করে গুয়াহাটি আসতে হয় না।

কবির সাজে: শিলংয়ে শুক্রবার। —নিজস্ব চিত্র।

কবির সাজে: শিলংয়ে শুক্রবার। —নিজস্ব চিত্র।

 রাজীবাক্ষ রক্ষিত
শিলং শেষ আপডেট: ১২ অক্টোবর ২০১৯ ০৩:১০
Share: Save:

ইলশেগুঁড়ি মাখা ব্রুক সাইডে ‘আঠারো কোঠা’র বাংলোটির দিকে পাইনঘেরা পাকদণ্ডী বেয়ে ধীর পায়ে এগিয়ে আসছেন মেরুন জোব্বা পরা দীর্ঘদেহী মানুষটি। পিছনে আট থেকে আশি সমবেত কণ্ঠে গান ধরেছেন, আকাশ ভরা সূর্য তারা, বিশ্বভরা প্রাণ...। নিজের মূর্তির সামনে থমকে খানিক দেখলেন। বললেন, পরিবারের বাকিদের ভিতরে নিয়ে যেতে। ধীর পায়ে নিজেও ঢুকে গেলেন বাংলোর মধ্যে। পুরোটাই পুনর্নির্মাণ। কবি ও তাঁর পরিবারের ছদ্মবেশে অভিনয়। তবু ১৯১৯ সালের ১১ অক্টোবরের সেই মুহূর্তটা নিখাদ আবেগে জীবন্ত হয়ে উঠল ২০১৯ সালের একই তারিখের বিকেলে।

সেই শিলং মেল নেই। নৌকায় ব্রহ্মপুত্র পার করে গুয়াহাটিও আসতে হয় না। সরু পাহাড়ি রাস্তা নয়, এখন প্রসারিত গুয়াহাটি-শিলং রোডে ২৪ ঘণ্টা গাড়ি ছোটে। নোবেলজয়ী কবি ১৯১৯ সালের ১০ অক্টোবর ডাকবাংলোয় জায়গা না পেয়ে জাহাজে কষ্ট করে রাত্রিবাস করছেন, পান্ডুর ঘাটে চরম কাদাগোলা জলে স্নান করছেন- এমন ঘটনা আজকের দিনে অভাবনীয়। শতবর্ষ আগের সেই স্মৃতিকে স্মরণ করে ২০১৯-এর ১১ অক্টোবরের রাতে কবি স্মরণ, সমবেত সঙ্গীত, আবৃত্তিতে শ্রদ্ধা জানান হয় গুয়াহাটির পাণ্ডুতে।

বিস্তর হ্যাপা পার করে রবীন্দ্রনাথ, রথীন্দ্রনাথ, প্রতিমাদেবী, দিনেন্দ্রনাথ ও কমলাদেবীরা ১২৫ টাকা গাড়ি ভাড়া দিয়ে শেষমেষ ১১ অক্টোবর পা রেখেছিলেন শিলংয়ে। ওঠেন ‘আঠার কোঠা’র ব্রুকসাইড বাংলোয়। আজ সকালে রাজ্য সংস্কৃতি দফতর ও মালবিকা বিশারদের উদ্যোগে ও বিকেলে আইসিসিআরের উদ্যোগে সেই ব্রুক সাইডে কবি স্মরণ অনু্ষ্ঠিত হয়।

নাইট ত্যাগ করে লেখা কবির চিঠি পাঠ করে শোনালেন প্রাক্তন মন্ত্রী মানস চৌধুরী। প্রস্তাব দেন, নতুন বিধানসভা ভবন তৈরির পরে ব্রুক সাইড বাংলোর পাশে থাকা অস্থায়ী বিধানসভার নাম রবীন্দ্র ভবন রাখা হোক। খাসি ভাষায় অনুদিত হোক রবীন্দ্র রচনাবলি। এ দিন কিন্তু তাঁদের ভাষাতেই রবীন্দ্রসঙ্গীত গাইলেন খাসিরা। আসাম বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন উপাচার্য জয়ন্তভূষণ ভট্টাচার্য বলেন, ‘‘নাইট ত্যাগের পরে ব্রিটিশ রাজের সঙ্গে দূরত্ব বাড়াতেই হয়ত তিনি শারদোৎসবের সময়ে কলকাতা থেকে আরও দূরে থাকতে চাইছিলেন। তাতে দুই পক্ষেরই ভাল হল। এখান থেকে গুয়াহাটি হয়ে শ্রীহট্টে যান তিনি। সেখানেই মণিপুরী নাচ দেখে মুগ্ধ হন। মণিপুরী ধ্রুপদী নৃত্যের মর্যাদা পাওয়ার পিছনে তাঁর অনেক ভূমিকা।’’ রবীন্দ্র বিশেষজ্ঞ ঊষারঞ্জন ভট্টাচার্য মনে করান, তেজস্বী পুরুষ কে সি দে ইংরেজদের রক্তচক্ষুর পরোয়া না-করে তাঁর বাংলোয় নাইটত্যাগী কবিকে থাকতে দিয়েছিলেন। তাঁর স্মৃতিধন্য সিধলি প্যালেস আগেই ভাঙা পড়েছে। সম্প্রতি বিক্রি হয়ে গিয়েছে জিৎভূমিও। সরকারি পৃষ্ঠপোষকতায় ব্রুক সাইড তার ঐতিহ্য নিয়ে এখনও টিকে আছে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Rabindranath Tagore
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE