Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪

বাঙালি বউয়ের ভূতের দাওয়াই, প্রাণে বাঁচতে ৩০ বছর ধরে নতুন বউ সেজে রয়েছেন চিন্তাহরণ

উত্তরপ্রদেশের জালালপুর জেলার হজখাস গ্রামের বাসিন্দা চিন্তাহরণ চৌহান। গায়ে বিয়ের জমকালো শাড়ি, কানে ঝুমকো, নাকে নথ, হাতে চুড়ি। এই তাঁর রোজের পোষাক। কিন্তু কেন? জিজ্ঞেস করায় উত্তর এল, ‘‘আমার পরিবারের ১৪ জনকে হারিয়েছি অতীতে এই পোশাকেই মৃত্যুকে জব্দ করতে পেরেছি।’’

প্রতীকী চিত্র

প্রতীকী চিত্র

সংবাদসংস্থা
লখনউ শেষ আপডেট: ০৩ নভেম্বর ২০১৯ ১৬:১৮
Share: Save:

একের পর এক মৃত্যু দেখতে হয়েছে তাঁকে। পরিজনকে হারানোর শোক তো রয়েছেই। তার সঙ্গে এসে জুড়েছে মৃত্যুভয়। মৃত্যুর হানাদারি রুখতে তাই চিন্তাহরণ চৌহান বেছে নিয়েছিলেন অদ্ভুত এক পন্থা। গত ৩০ বছর চিন্তাহরণ চৌহান সারাদিন নতুন বউয়ের মতো সেজে থেকেছেন। তাঁর ধারণা, স্বপ্নে পাওয়া এই দাওয়াইয়ের কারণেই মৃত্যু তাঁর দিকে থাবা বসায়নি। আর এই বেঁচে থাকার নিদান তাঁকে দিয়েছেন তাঁর মৃত বাঙালি বউ।

উত্তরপ্রদেশের জালালপুর জেলার হজখাস গ্রামের বাসিন্দা চিন্তাহরণ চৌহান। গায়ে বিয়ের জমকালো শাড়ি, কানে ঝুমকো, নাকে নথ, হাতে চুড়ি। এই তাঁর রোজের পোষাক। কিন্তু কেন? জিজ্ঞেস করায় উত্তর এল, ‘‘আমার পরিবারের ১৪ জনকে হারিয়েছি অতীতে। এই পোশাকেই শেষমেশ মৃত্যুকে জব্দ করতে পেরেছি।’’

চৌহানের বর্তমান বয়েস ৬৬। মাত্র ১৪ বছর বয়েসে তিনি প্রথম বিয়ে করেন, মাস খানেকের মধ্যে তাঁর স্ত্রী মারা যান। সেই বেরিয়ে পড়া ভাগ্যান্বেষণে। বয়েস যখন ২১ এর কোঠায় তখন বাংলায় আসেন চৌহান। কাজ জোটে দিনাজপুরের এক ইটভাটায়। শ্রমিকদের খাবারের জোগানদার হিসেবে কাজ করতেন তিনি। এখানেই এক দোকানদারের সঙ্গে ক্রমে বন্ধুতা গাঢ় হলে তাঁর মেয়েকে বিয়ে করেন চৌহান। তবে পরিবার থেকে আপত্তি জানালে বউকে রেখেই ফিরে যান গ্রামে। এক বছর বাদে দিনাজপুরে এসে চৌহান জানতে পারেন, এই ‘বিশ্বাসঘাতকতা’ সহ্য করতে না পেরে তাঁর স্ত্র্রী মারা গিয়েছেন। চৌহান বিপদে পড়েন গ্রামে ফিরে তৃতীয়বার বিয়ে করার পরেই।

আরও পড়ুন:লক্ষ্য কাশ্মীরে অস্থিরতা তৈরি, শীতে ফিদায়েঁ হামলা চালাতে পারে পাক জঙ্গিরা, সতর্কবার্তা গোয়েন্দাদের
আরও পড়ুন:হিতে বিপরীত! বৃষ্টিতে আরও ভয়াবহ দিল্লির দূষণ, কাল থেকে ফের জোড়-বিজোড় নীতি

চৌহান বলেন, ‘‘গ্রামে ফিরে বিয়ে করেই আমি অসুস্থ হয়ে পড়ি, একে একে আমার চারপাশের সবাই মারা যায়। আমার বাবা রামজীবন, আমার বড়ভাই, তাঁর স্ত্রী, তাঁদের ছেলেমেয়েরা, আমার ছোটভাই সকলে মারা যায় একে একে।’’ চৌহান মনে করেন, এই গোটা ঘটনার পিছনে ছিল তাঁর বাঙালি বউয়ের অশরীরী আত্মা। সংবাদমাধ্যমকে তিনি বলেন, ‘‘একদিন রাতে আমার বাঙালি বউ আমার স্বপ্নে আসে। কাঁদতে থাকেন আমার বিশ্বাসঘাতকতার জন্যে। আমি তাঁর কাছে ক্ষমা চাই। তখন তিনি আমায় বলেন, নববধূর সাজে থাকতে হবে আমায় বাকি জীবন। সেভাবেই আছি তারপর থেকে। মৃত্যুভয় আমায় নিষ্কৃতি দিয়েছে।’’

চৌহানের বক্তব্য শুধু মৃত্যুকে জয়ই নয়, এর পর থেকে তাঁর স্বাস্থ্যেরও উন্নতি হয়েছে। তৃতীয়া স্ত্রী গত হয়েছেন অনেকদিন, তবে তাঁর দুই সন্তান রমেশ, দীনেশও ভাল আছে।

আশেপাশের লোকজন কী ভাবে দেখে এই ঘটনাকে? উত্তরে চৌহান বলেন, ‘‘প্রথম প্রথম আমায় নিয়ে সকলে হাসত। কিন্তু ক্রমে সবাই বিষয়টি নিয়ে হাসিমজা বন্ধ করেছে। আমাকে সবাই ভালবাসে এখানে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Bride Man Dressing as Bride Marriage
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE