দিল্লির কলাবতী হাসপাতালের সামনে বসে অনবরত কেঁদে চলেছেন ওপিল সিংহ। সকলকে ডেকে দেখাচ্ছেন নিজের মোবাইলের সেই ছবিটা। মোবাইলের কাচ ফেটে চৌচির। তারই পর্দায় উঁকি দিচ্ছে গোলাপি জ্যাকেট পরা হাসিমুখের রিয়া সিংহ। পাশে লাল জ্যাকেট পরে ওপিল। গোলাপি জ্যাকেট পরে সেই সাত বছরের কন্যা শনিবার প্রাণ হারিয়েছে দিল্লি স্টেশনে। ওপিল জানালেন, ওভারব্রিজে ওঠার সময় ভিড়ে আটকে পড়ে শিশুটি। তার মাথায় একটা পেরেক গেঁথে যায়। তাতেই সব শেষ।
৩৫ বছরের ওপিল আদতে উত্তরপ্রদেশের উন্নাওয়ের বাসিন্দা। দিল্লিতে শ্রমিকের কাজ করেন। উন্নাওয়ে বাড়ি ফেরার জন্য ট্রেন ধরতে শনিবার গিয়েছিলেন নয়াদিল্লি স্টেশনে। তিনি জানান, পরিবার নিয়ে ১৪ নম্বর প্ল্যাটফর্মে নামছিলেন। ভিড় দেখে মনটা কু ডেকেছিল। সঙ্গে সঙ্গে বাড়ি ফিরে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেন। তাঁর কথায়, ‘‘ভিড় দেখে স্ত্রীকে বলি, চলো বাড়ি যাই। ছোট ছোট বাচ্চাদের নিয়ে এই ভিড়ে কোথায় যাব?’’ ফিরে যাওয়ার জন্য আবার ফুটব্রিজ ধরে সপরিবারে উপরে উঠছিলেন ওপিল। আচমকা গোল! তিনি বলেন, ‘‘সিঁড়ি দিয়ে উপরে উঠছিলাম। আর মাত্র ছ’টি সিঁড়ি বাকি ছিল। হঠাৎ দেখি উপর থেকে হুড়মুড়িয়ে পাঁচ-ছ’ হাজার মানুষ নীচে নামছেন। নিজেদের সামলাতে পারিনি। এক জনের উপর অন্য জন পড়ে যান। তখনই মেয়ের মাথায় পেরেকটা গেঁথে যায়। রক্ত জমাট বেঁধে যায়। ওর শরীরটা নিমেষে কালো হয়ে যায়।’’
আরও পড়ুন:
রেলের তরফে জানানো হয়, ঘটনার সময় ১৪ নম্বর প্ল্যাটফর্মে দাঁড়িয়ে ছিল পটনাগামী মগধ এক্সপ্রেস। ১৫ নম্বর প্ল্যাটফর্মে দাঁড়িয়েছিল নয়াদিল্লি-জম্মু সম্পর্ক ক্রান্তি এক্সপ্রেস। নয়াদিল্লি স্টেশনে এই ১৪ এবং ১৫ নম্বর প্ল্যাটফর্মের সংযোগকারী ফুটব্রিজেই ঘটে দুর্ঘটনা।
ভিড় যখন সরে, ওপিল দেখেন কালো হয়ে গিয়েছে মেয়েটার শরীর। কোলে নিয়ে দৌড় দেন। সাহায্য করেন দু’জন কুলি। পরিবর্তে ১০০ টাকা করে নিয়েছিলেন তাঁরা। স্টেশনের বাইরে বেরিয়ে দেখেন কোনও অ্যাম্বুল্যান্স নেই। তত ক্ষণে ভিড়ের মধ্যে তাঁর পকেট থেকে খোয়া গিয়েছে মোবাইল আর টাকা। কোনও মতে একটি অটো ধরে মেয়েকে নিয়ে কলাবতী হাসপাতালে পৌঁছোন। চিকিৎসকেরা বলেন, ‘‘আর একটু আগে এলে বাঁচানো যেত।’’ মৃতদের পরিবারকে ১০ লক্ষ টাকা ক্ষতিপূরণ দেওয়ার কথা ঘোষণা করেছে রেল। ওপিল বলেন, ‘‘ওই টাকায় আমার মেয়েকে কি ফেরাতে পারব!’’