উত্তরকাশীর ভাঙা সুড়ঙ্গে চলছে উদ্ধারকাজ। —ফাইল চিত্র।
‘‘কাকা, কেমন আছ?’’ সামান্য বিরতি। উত্তর এল— ‘‘ভাল।’’
তেরো দিন ধরে সুড়ঙ্গে আটক কাকার কণ্ঠস্বর শুনে স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেললেন বিনয় তালুকদার।
কোচবিহারের তুফানগঞ্জের চেকাডেরা গ্রামের বাসিন্দা মানিক তালুকদার ‘নবযুগ’ নামে একটি সংস্থার হয়ে সিল্কিয়ারার সুড়ঙ্গে আড়াই বছরের বেশি সময় কাজ করছিলেন। বছর পঞ্চাশের মানিক পেশায় ইলেকট্রিক্যাল কর্মী। সুড়ঙ্গের ভিতরে বিদ্যুতের লাইন পাতার কাজ ছিল তাঁর। ১২ নভেম্বর সুড়ঙ্গে ধস নামায় যে ৪১ জন কর্মী আটকা পড়েছেন, তাঁদের মধ্যে বাংলার তিন জনের মধ্যে রয়েছেন মানিক।
খবরটা প্রথম তিন-চার দিনে জানতেই পারেনি তালুকদার পরিবার। পরে সংবাদমাধ্যমে মানিকের আটকা পড়ার খবর পেয়ে অসুস্থ হয়ে পড়েন স্ত্রী সোমা। ছেলে কলেজপড়ুয়া। তাই ভাইপো বিনয়কেই সিল্কিয়ারায় আসতে হয়েছে আত্মীয় গৌতম চন্দকে নিয়ে। দু’জনেরই অভিযোগ, বিপর্যয়ের পর থেকে ক্রমাগত ভুল তথ্য দিয়ে তাঁদের বিভ্রান্ত করা হচ্ছে। আজ সকালে সুড়ঙ্গের মুখে হাপিত্যেশ করে দাঁড়িয়ে থাকতে থাকতে ক্ষোভ উগরে দিয়ে বিনয় বললেন, ‘‘প্রথমে তো ঘটনার কথা আমাদের জানানোই হয়নি। বুধবার রাতে দেহরাদূন পৌঁছে যোগাযোগ করতে আমাদের বলা হল, ওখানেই থেকে যেতে। শ্রমিকদের বুধবার গভীর রাতে উদ্ধার করে বৃহস্পতিবার সকালেই নাকি দেহরাদূনে নিয়ে আসা হবে। কোথায় কী! বৃহস্পতিবার সকালে বলা হল, দুর্ঘটনাস্থলে চলে আসতে। কাল দুপুরে এখানে পৌঁছলেও কখন কাকা উদ্ধার হবেন, তা নিয়ে বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন কথা বলা হচ্ছে।’’ কাকা যে মেসে থাকতেন, সেই ঘরেই উঠেছেন বিনয়েরা। শুচ্ছেন কাকার খাটেই।
তবে একমাত্র স্বস্তির কথা হল, সুড়ঙ্গে বন্দি কাকার সঙ্গে আজ সকালে কথা বলতে সক্ষম হয়েছেন বিনয়। আটক শ্রমিকদের সঙ্গে যোগাযোগ ব্যবস্থা গড়ে তুলেছে উদ্ধারকারী দল। কী কথা হল কাকার সঙ্গে? বিনয় বললেন, ‘‘কাকা সুস্থ আছেন। বাড়ির সবাইকে চিন্তা করতে বারণ করেছেন। আমি জানাই, বাড়িতে সকলেই ভাল আছে।’’ সুড়ঙ্গে তেরো দিন ধরে বন্দি শ্রমিকদের শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্য নিয়ে স্বাভাবিক ভাবেই প্রশ্ন উঠেছে। সরকারের দাবি, নিয়মিত মনোবিদেরা কথা বলছেন শ্রমিকদের সঙ্গে। বিনয় বললেন, ‘‘কথা শুনে মনে হল, কাকা সুস্থ আছেন। স্বাভাবিক ভাবে কথা বলছেন। এমনকি ওঁর ঘরে কী খাবার রয়েছে, তা-ও আমাদের বিশদে জানিয়ে সে সব খেতে বলেছেন। জনে জনে বাড়ির সকলের খোঁজ নিয়েছেন। বলেছেন চিন্তা না করতে।’’
উদ্ধারকাজে কী ভাবে নিত্যনতুন বাধা এসে পড়ছে, কেন আশা দিয়েও শ্রমিক পরিবারকে আশাহত করতে হচ্ছে, সরকার তা বোঝাতে কসুর করছে না। কিন্তু বিনয়দের অস্থির মন এত ব্যাখ্যা মানতে নারাজ। প্রতিটা দিনের শেষেই তো তাঁদের প্রত্যাশার ভাঁড়ার শূন্য! ভরসা শুধু একটাই— পাহাড়ের গর্ভে অন্তত সুস্থ রয়েছে ঘরের মানুষটা।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy