প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা প্রতি বছর পাঠাতেন। এ বছরও তার অন্যথা করল না বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকার। প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূসের নির্দেশে এ বছরও যথারীতি আম পাঠানো হল ভারতে। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর উদ্দেশে পাঠানো হাজার কেজি আম সোমবারই নয়াদিল্লিতে পৌঁছে যাওয়ার কথা। একই সঙ্গে পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কেও আম পাঠানো হচ্ছে। বাংলাদেশের আম যাচ্ছে ত্রিপুরাতেও। নয়াদিল্লিতে বাংলাদেশ দূতাবাসকে উদ্ধৃত করে এই তথ্য জানিয়েছে সে দেশের সংবাদমাধ্যম।
এ বছর বাংলাদেশের বিখ্যাত হাড়িভাঙা আম ভারতে পাঠিয়েছেন ইউনূস। দেশের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলে, বিশেষত রংপুরে এই আম পাওয়া যায়। বাংলাদেশের বিভিন্ন প্রান্তে তো বটেই, বিদেশেও এই আম রফতানি করে থাকে ঢাকা। এক-একটি হাড়িভাঙা আমের ওজন ২০০ থেকে ৪০০ গ্রাম পর্যন্ত হতে পারে। রসালো, আঁশবিহীন এই আম বাংলাদেশে অত্যন্ত জনপ্রিয়। বাংলাদেশ থেকে পাঠানো আমকে সুসম্পর্কের বার্তা হিসাবেই দেখা হয়।
আরও পড়ুন:
ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যে এই ‘আম-কূটনীতি’ অনেক পুরনো। হাসিনা প্রতি বছর জুন-জুলাই মাসে ভারতে আম পাঠাতেন। প্রধানমন্ত্রী, রাষ্ট্রপতির কাছে যেত সেই আম। আসত পশ্চিমবঙ্গেও। কখনও সেই ঝুলিতে থাকত হিমসাগর বা ল্যাংড়া আম, কখনও আবার থাকত সুস্বাদু আম্রপালি। ২০২৪ সালের অগস্ট মাসে বাংলাদেশে হাসিনা সরকারের পতন ঘটেছে। গণবিক্ষোভের চাপে পদত্যাগ করে দেশ ছাড়তে বাধ্য হয়েছেন প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী। তার পর থেকে তিনি ভারতে আশ্রয় নিয়েছেন। বাংলাদেশে ইউনূসের নেতৃত্বে গড়ে উঠেছে অন্তর্বর্তী সরকার। আগামী বছর সেখানে সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে পারে।
হাসিনার পদত্যাগ এবং ইউনূসের ক্ষমতায় আসার পর থেকে ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের কিছুটা অবনতি হয়েছে। অভিযোগ, বাংলাদেশে বেড়েছে সংখ্যালঘুদের উপর নির্যাতন। যা নিয়ে একাধিক বার উদ্বেগ প্রকাশ করেছে নয়াদিল্লি। আবার হাসিনার প্রত্যর্পণ চেয়ে ভারতকে চিঠি দিয়েছে ঢাকাও। ইউনূস ক্ষমতায় আসার পর চিন সফর সেরে ফেলেছেন। এই পরিস্থিতিতে গত এপ্রিল মাসে ব্যাঙ্ককের বিমস্টেক সম্মেলনে মোদীর সঙ্গে দেখা হয় ইউনূসের। তাঁরা আলোচনা করেন। অন্তর্বর্তী সরকার ক্ষমতায় আসার পর মোদীর সঙ্গে এটাই ছিল ইউনূসের প্রথম মুখোমুখি সাক্ষাৎ। গণতান্ত্রিক, স্থিতিশীল, প্রগতিশীল বাংলাদেশের প্রতি ভারতের সমর্থনের কথা ইউনূসকে জানান মোদী। দুই দেশের মধ্যে সহযোগিতার কথা তুলে ধরেন। জানান, ভারত দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের ক্ষেত্রে সবসময় জনগণকেন্দ্রিক দৃষ্টিভঙ্গিতে বিশ্বাস করে। এর পর কিছু দিন আগে ভারতের বিদেশ মন্ত্রক জানিয়েছিল, অনুকূল পরিস্থিতিতে ঢাকার সঙ্গে সমস্ত বিষয় নিয়ে আলোচনার জন্য ইচ্ছুক নয়াদিল্লি। তার পরেই আসতে চলেছে হাজার কেজি আম।