মণিপুরে সংঘর্ষের ২৭ মাসে প্রধানমন্ত্রী একটি বারও সেখানে আসেননি, এমনকি মণিপুরের মন্ত্রী-বিধায়কদের সঙ্গেও দেখা করেননি। তা নিয়ে সমালোচনা-প্রতিবাদ চলছে বিস্তর! কিন্তু রাজ্যের তাবড় নেতামন্ত্রীরা তাঁর সাক্ষাৎ না পেলেও, বিদেশে নরেন্দ্র মোদীর সুরক্ষার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নিচ্ছেন মণিপুরের এক কন্যাই। নাম তাঁর আদাসো কাপেসা। মণিপুর ও উত্তর-পূর্ব থেকে তিনিই প্রথম এসপিজিতে নিযুক্ত কমান্ডো এবং বলা হচ্ছে, প্রধানমন্ত্রীর নিরাপত্তার দায়িত্ব পাওয়া প্রথম মহিলা এসপিজি কমান্ডো হওয়ার কৃতিত্বও অর্জন করেছেন কাপেসা।
মোদীর সাম্প্রতিক ব্রিটেন সফরের সময়ে তাঁর ডান দিকে, পিছনে দাঁড়ানো এক মহিলা সকলের নজর কাড়েন। সচরাচর দেশের এক নম্বর হাই প্রোফাইল মানুষের নিরাপত্তা বলয়ে তুখোড় এসপিজি কমান্ডো ভিন্ন কারও থাকার কথা নয়। ওই ছবি ভাইরাল হয়ে পড়ে। নেটিজ়েনরা বলেন, এত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকায় এক মহিলার নিয়োগ গর্বের বিষয়। পরিচয় খোঁজা শুরু হয় ওই তরুণীর। জানা যায়, ওই অফিসারের নাম এমেইমেইফি আদাসো কাপেসা। তিনি মণিপুরের কন্যা হলেও মাও নাগা জনগোষ্ঠীর সদস্য। এখন তিনি স্পেশাল প্রোটেকশন গ্রুপ বা এসপিজিতে ডেপুটেশনে নিযুক্ত। সেনাপতি জেলার কাইবি গ্রামের বাসিন্দা আদাসো এর আগে পিথোরাগড়ের ৫৫তম ব্যাটালিয়নে সশস্ত্র সীমা বলে ইন্সপেক্টর (জেনারেল ডিউটি) পদে নিযুক্ত ছিলেন। দুর্দান্ত কর্মদক্ষতার কারণে তাঁকে এসপিজিতে প্রশিক্ষণের জন্য নির্বাচিতকরা হয়েছিল।
এসপিজি হল দেশের সবচেয়ে মর্যাদাপূর্ণ নিরাপত্তা বাহিনী, যেখানে শুধুমাত্র সেরা কমান্ডোদেরই নির্বাচন করা হয়। এসপিজি সদস্যরা তীব্র শারীরিক, কৌশলগত এবং মানসিক প্রশিক্ষণের মধ্যে দিয়ে যান। আদাসো কঠোর সেই প্রশিক্ষণ সাফল্যের সঙ্গে সম্পন্ন করেন। সেনাপতি জেলার মানুষ আদাসোর কৃতিত্বে বেজায় খুশি। তাঁদের মতে, নিরলস পরিশ্রম, শৃঙ্খলা এবং সাহসের পরিচয় দিয়ে প্রত্যন্ত, অনামা গ্রাম থেকে দেশের শীর্ষ নিরাপত্তা বাহিনীতে স্থান পেয়ে, এমনকি খোদ প্রধানমন্ত্রীরনিরাপত্তার ভার অর্জন করে আদাসো মণিপুরকে গর্বিত করেছেন। মণিপুরের মানুষ বলছেন, প্রধানমন্ত্রীর নিরাপত্তা বলয়ে আদাসো কাপেসার দায়িত্ব পাওয়া শুধু তাঁর ব্যক্তিগত অর্জন নয়, তা ভারতীয় প্রতিরক্ষা এবং আধাসামরিক পরিষেবাগুলিতে ক্রমবর্ধমান লিঙ্গসাম্যের প্রতীক। কিছু দিন আগে পর্যন্ত এসপিজি ছিল একটি সম্পূর্ণ পুরুষ ইউনিট। এই অভিজাত স্কোয়াডে আদাসো কাপেসার প্রবেশ উত্তর-পূর্বের আরও বেশি সংখ্যক মেয়েকে নিরাপত্তা বাহিনীতে যোগ দেওয়া ও কমান্ডো হওয়ারউৎসাহ দেবে।
এই খবরটি পড়ার জন্য সাবস্ক্রাইব করুন
5,148
1,999
429
169
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)