নরেন্দ্র মোদী এক কালে তাঁকে ‘মৌনমোহন’ নাম দিয়েছিলেন। সেই মৌনতা-খ্যাত মনমোহন সিংহই আজ প্রধানমন্ত্রী মোদীকে ‘নীরবতা’ নিয়েই খোঁচা দিলেন। দিল্লিতে নিজের বই প্রকাশ অনুষ্ঠানে প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রীর মন্তব্য, ‘‘আমি প্রধানমন্ত্রী হিসেবে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হতে ভয় পেতাম না।’’
ঠিক এই প্রশ্ন তুলেই সম্প্রতি একাধিক বার মোদীকে নিশানা করছেন রাহুল গাঁধী। প্রশ্ন তুলেছেন, কেন প্রধানমন্ত্রী সাংবাদিকদের মুখোমুখি হন না? কেন তিনি প্রশ্নের উত্তর দিতে ভয় পান? কিছু দিন আগে নিজের হায়দরাবাদের সাংবাদিক সম্মেলনের ছবি দেখিয়ে টুইট করে রাহুল মোদীকে পরামর্শও দিয়েছিলেন, ‘‘সাংবাদিক সম্মেলন করে দেখুন। আপনার দিকে প্রশ্ন ধেয়ে আসতে দেখলে মজাই পাবেন।’’
ঘটনা হল, সাড়ে চার বছর প্রধানমন্ত্রীর পদে থেকে মোদী একবারও সাংবাদিক সম্মেলন করেননি। তাঁর জমানায় বিদেশ সফরে সাংবাদিকদের প্রতিনিধিদল যাওয়াও বন্ধ হয়ে গিয়েছে। ফলে বিদেশ থেকে ফেরার সময় সাংবাদিক বৈঠকের প্রথাও উঠে গিয়েছে। ফ্রান্সে গিয়ে রাফাল-চুক্তি করে ফেরার সময় বা পাকিস্তানে নওয়াজ শরিফের বাড়িতে আচমকা বিয়ের অনুষ্ঠানে যোগ দিয়ে ফেরার সময়েও মোদীকে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হতে হয়নি।
মনমোহন আজ সেখানেই ঘা দিয়েছেন। বলেছেন, ‘‘আমি প্রধানমন্ত্রী হিসেবে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলতে ভয় পেতাম না। আমি নিয়মিত সাংবাদিকদের মুখোমুখি হতাম। এমনকি বিদেশ সফর থেকে ফেরার সময়ও আমি বিমানে সাংবাদিক সম্মেলন করতাম।’’ অথচ প্রধানমন্ত্রী হিসেবে মনমোহনের বিরুদ্ধে মোদীদের সবথেকে বড় নালিশ ছিল তাঁর নীরবতাই। আজ নিজের সমস্ত লেখা ও প্রধানমন্ত্রী হিসেবে বক্তৃতার পাঁচ খণ্ডের সঙ্কলন ‘চেঞ্জিং ইন্ডিয়া’ প্রকাশ অনুষ্ঠানে মনমোহন বলেন, ‘‘লোকে বলে আমি
নীরব প্রধানমন্ত্রী ছিলাম। আমার মনে হয়, এই বইয়ের অধ্যায়গুলি নিজেরাই তার জবাব দেবে।’’ রিজার্ভ ব্যাঙ্কের সঙ্গে সরকার সম্প্রতি যে ভাবে টানাপড়েনে জড়িয়েছিল, সে প্রসঙ্গও ওঠে অনুষ্ঠানের ফাঁকে। মনমোহন তখন বলেন, ‘‘সরকার আর আরবিআইয়ের সম্পর্ক অনেকটা স্বামী-স্ত্রীর মতো। মতান্তর হলে তা নিজেদের মধ্যে আলোচনা করেই মেটানো দরকার।’’
২০০৪-এ সনিয়া গাঁধী প্রধানমন্ত্রীর পদ প্রত্যাখ্যান করায় মনমোহন সিংহ প্রধানমন্ত্রী হন। তাই তাঁকে ‘অ্যাক্সিডেন্টাল প্রাইম মিনিস্টার’ বলে থাকেন অনেকে। মনমোহন এ দিন বলেন, ‘‘আমি ঘটনাচক্রে প্রধানমন্ত্রী হয়েছিলাম বলে লোকে বলে। আমি কিন্তু তারও আগে ‘ঘটনাচক্রে’ অর্থমন্ত্রী হয়েছিলাম।’’
বই প্রকাশ অনুষ্ঠানে অর্থনীতিবিদ কৌশিক বসুর সঙ্গে আলোচনায় নিজের কেরিয়ার নিয়ে খোলামেলা ভাবে কথা বলছিলেন তিনি। মনমোহনের বক্তব্য, ‘‘আমি নিজের জমানায় ঠিক কাজ করেছি না বেঠিক, ইতিহাসই তা বলবে। আমার কোনও খেদ নেই। দেশ যা দিয়েছে, তা ফিরিয়ে দিতে পারব না।’’