নরটিয়াং দুর্গামন্দির। ছবি: কৃষ্ণেন্দু সরকার
সপ্তমীর দিনে হাতাহাতি-মারপিট ছ’শো বছরের প্রাচীন নরটিয়াং দুর্গামন্দিরে। দুই গোষ্ঠীর অশান্তি ঠেকাতে গিয়ে জখম এএসপি-সহ অন্তত ১৯ জন পুলিশকর্মী।
হিন্দুদের ৫১টি শক্তিপীঠের মধ্যে একটি নরটিয়াংয়ের দুর্গা মন্দির। কথিত আছে, সতীর বাম জঙ্ঘা পড়েছিল এখানে। দেবী এখানে ‘জয়ন্তী’ নামে পূজিতা। ভৈরবের নাম ‘ক্রামাদিশ্বর’। জয়ন্তী থেকেই এসেছে জয়ন্তিয়া পাহাড়। জয়ন্তিয়ারাজ জাসো মানিক কোচ রাজা নরনারায়ণের কন্যা লক্ষ্মী-নারায়ণকে বিয়ে করেন। স্ত্রীর প্রভাবেই হিন্দু ধর্ম নেন জাসো। এক রাতে দুর্গা পীঠস্থান নরটিয়াংয়ে মন্দির গড়তে রাজাকে স্বপ্নাদেশ দেন। পাহাড়ের মাথায় ওই মন্দিরকে কেন্দ্র করে দুর্গ, অস্ত্রাগারও ছিল।
মন্দিরের পুজো বংশানুক্রমে করে আসছিল মুসকুট ও দেশমুখ পরিবার। ২০১৭ সালে মলয় এবং এ বছর উত্তম দেশমুখের মৃত্যু হয়। মে মাসে মলয়বাবুর পুত্র অনি মুসকুট দেশমুখের বদলে স্বপন ভট্টাচার্যকে পুরোহিত হিসেবে নিয়োগ করা হয়। কিন্তু স্থানীয় উপজাতিদের দাবি, উপজাতি পরিবারের সদস্য পূজারীর হাতেই পুজোর ভার তুলে দিতে হবে।
সেপ্টেম্বরে উপজাতীয় ভক্ত ও পুরোহিত পরিবার মন্দির বন্ধ করে দেয়। এ নিয়ে মেঘালয় হাইকোর্টে মামলা দায়ের হয়। গত মাসে স্বপনবাবুর পক্ষের ও বিরোধী পক্ষের ভক্তদের মধ্যে হাতাহাতি বাধে। বেশ কয়েকজন মহিলা ভক্ত জখম হন। পুজোর মুখে হাইকোর্ট নির্দেশ দেয়, মন্দির বন্ধ করা চলবে না। পুজোও বন্ধ হওয়া চলবে না। পুরোহিত কে হবেন, সে ব্যাপারে স্থানীয় ভক্তরাই সিদ্ধান্ত নেবেন।
এর পর ষষ্ঠীর দিন কড়া পুলিশ পাহারায় স্বপনবাবুকে মন্দিরে আনা হয়। ফের অশান্তি হয়। গত কাল অশান্তি চরমে ওঠে। দুই পুরোহিতের সমর্থকদের মধ্যে দফায় দফায় মারপিট হয়। এসপি লাকাডোর সিয়েম জানান, নরটিয়াং থানার এসআই রোমিত সিংকনের মাথায় ১৩টি সেলাই পড়েছে। জখম হয়েছে চোখ। তাঁর অবস্থা আশঙ্কাজনক। কনস্টেবল এপ্রিলসন মারাকও মাথায় চোট নিয়ে আশঙ্কাজনক অবস্থায় আইসিইউতে ভর্তি। এএসপি পি সিয়েমের মাথা ফেটেছে। দুই তরফে জখম হয়েছেন ৪০ জনের বেশি। জেলাশাসক গোটা গ্রামে ১৪৪ ধারা জারি করেছেন। বিরাট পুলিশ ও আধাসেনা বাহিনী মোতায়েন করা হয়েছে। প্রধান পুরোহিত ইউ লিংডোর নেতৃত্বে, থমথমে পরিবেশে, হাতেগোনা ভক্তর উপস্থিতিতে এ দিন অষ্টমী পুজো সম্পন্ন হয়।