স্বাধীনতা দিবসের দিন তাঁর জাতীয় পতাকা উত্তোলনের ভিডিয়ো ছড়িয়ে পড়েছিল সমাজমাধ্যমে। ছত্তীসগঢ়ের কাঁকের জেলার পাহাড়-জঙ্গলে ঘেরা ওই প্রত্যন্ত গ্রামে দীর্ঘ কয়েক দশক পরে উড়েছিল জাতীয় পতাকা। আর সেই ‘অপরাধে’ মণীশ নুরেতি নামে ওই গ্রামবাসীকে বাড়ি থেকে তুলে নিয়ে গিয়ে নৃশংস ভাবে কুপিয়ে খুন করল মাওবাদী জঙ্গিরা।
কাঁকের জেলা পুলিশ জানিয়েছে, ছোটবেতিয়া থানা সীমানার অন্তর্গত বিনাগুন্ডা গ্রামের বাসিন্দা মণীশ গত ১৫ অগস্ট গ্রামের শিশু এবং অন্যান্য কয়েক জন বাসিন্দাকে নিয়ে স্বাধীনতা দিবস উদ্যাপন করেছিলেন। একদা মাওবাদী মুক্তাঞ্চল (‘রেড করিডোর’ নামে পরিচিত) ছোটবেতিয়ায় ত্রিবর্ণ পতাকা উত্তোলন এবং ‘বন্দেমাতরম’ স্লোগান দেওয়ার সেই ভিডিয়োয় দেখা গিয়েছিল তাঁকে।
আর সেই ভিডিয়ো থেকেই মণীশকে শনাক্ত করে নিষিদ্ধ সংগঠন সিপিআই (মাওবাদী)-র সশস্ত্র শাখা পিএলজিএ (পিপলস লিবারেশন গেরিলা আর্মি)। এর পর বুধবার রাতে ঘাতক বাহিনী হানা দেয় বিনাগুন্ডা গ্রামে। পুলিশ জানিয়েছে, মণীশের পাশাপাশি আরও দুই গ্রামবাসীকে বাড়ি থেকে তুলে নিয়ে জঙ্গলে যায় মাওবাদী বাহিনী। তার পর জাতীয় পতাকা তোলার অভিযোগে গণআদালতে তিন জনের বিচার শুরু করা হয়। অন্য দুই গ্রামবাসীকে মারধর করে ছেড়ে দিলেও গণআদালতে মণীশকে ‘দোষী’ সাব্যস্ত করে মৃত্যুদণ্ডের সাজা দেওয়া হয়। এর পর সেখানেই কুপিয়ে খুন করা হয় তাঁকে।
প্রসঙ্গত, যৌথবাহিনীর ধারাবাহিক অভিযানের জেরে গত এক বছরে ছত্তীসগঢ়ের বস্তার ডিভিশনের সাতটি জেলায় কোণঠাসা হয়ে পড়েছে মাওবাদীরা। মাওবাদী পলিটব্যুরো সদস্য রামচন্দ্র রেড্ডি ওরফে চলপতি, সাধারণ সম্পাদক নাম্বালা কেশব রাও ওরফে বাসবরাজু ওরফে গগন্না, কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য নরসিংহচলম ওরফে সুধাকর, চৈতন্য ভেঙ্কট রবি ওরফে অরুণা-সহ একাধিক নেতা-নেত্রী নিরাপত্তাবাহিনীর সঙ্গে সংঘর্ষে নিহত হয়েছেন। পিএলজিএ-র হাত থেকে বিস্তীর্ণ এলাকা পুনরুদ্ধারও করা হয়েছে। কিন্তু এখনও বস্তার ডিভিশনে ১৬ জন নেতা-নেত্রী-সহ পিএলজিএ-র বেশ কয়েকটি ‘দলম’ সক্রিয় বলে পুলিশের দাবি। কাঁকের জেলার পুলিশ সুপার আইকে এলেসেলা জানিয়েছেন, বিনাগুন্ডা গ্রামে হামলাকারী মাওবাদীদের খোঁজে তল্লাশি অভিযান শুরু হয়েছে।