Advertisement
E-Paper

বিয়ে হল বিধবা বিনীতার, সাক্ষী থাকল বৃন্দাবন

২০১৩-য় কেদারনাথের জলপ্রলয়ে স্বামীকে হারিয়েছিলেন বিনীতা। রাকেশ নামের এক যুবক কিছু কাল পরে লুকিয়ে বিয়ে করেন বিনীতাকে।

সুমিত্রা রায়

শেষ আপডেট: ১৬ অক্টোবর ২০১৭ ২৩:৫৬
সাতপাকে বাঁধা পড়লেন বিনীতা। পিছনে বৃন্দাবনের আবাসিকরা।

সাতপাকে বাঁধা পড়লেন বিনীতা। পিছনে বৃন্দাবনের আবাসিকরা।

বিনীতার বিয়ে উপলক্ষে গোপীনাথ মন্দিরের বারান্দার এক কোনায় জড়ো হয়েছিলেন মহিলারা। আজ, সোমবার তাঁর বিয়ে ছিল।

২০১৩-য় কেদারনাথের জলপ্রলয়ে স্বামীকে হারিয়েছিলেন বিনীতা। রাকেশ নামের এক যুবক কিছু কাল পরে লুকিয়ে বিয়ে করেন বিনীতাকে। দিল্লি থেকে প্রায় ৪০০ কিলোমিটার দূরে ছোট্ট গ্রাম তালওয়ারিতে শোরগোল পড়ে গিয়েছিল এই ঘটনায়। বিধবার বিয়ে— এহেন অনাচারের ঘটনায় প্রতিবাদের ঝড় উঠেছিল বিনীতার বাপের বাড়ির গ্রাম কুমরিতেও। আজ তাঁরা সমস্ত দ্বিধা কাটিয়ে লোক সমাজের সামনে ঘোষণা করে তাঁদের বিয়ের কথা।

আরও পড়ুন: সাড়ম্বরে বিধবার বিয়ে দিচ্ছে বৃন্দাবন

আরও পড়ুন: স্কুটারে চেপে বিয়ে সারলেন ইনি

বৃন্দাবনের গোপীনাথ মন্দিরে সকাল থেকেই তোড়জোড় শুরু হয়ে যায়। বৃন্দাবনে প্রায় ৬০-৭০ বছর ধরে থাকা বিধবা মায়েরাই যেন বিনীতার সহেলি হয়ে উঠেছিলেন এ দিন। বিরাট মন্দির চত্বরের মাঝখানে ফুল আর রঙ্গোলিতে সাজানো হয় ছাদনাতলা। মন্দিরের সিঁড়ি থেকে ছাদের কার্নিশের ধারগুলো সাজিয়ে দেওয়া হয় রঙিন মাটির প্রদীপ দিয়ে। রংবেরঙের আলোর চাদরে ঢেকে যায় মন্দিরের আকাশ। মন্দিরের পূজারি তদারকি করেন সব কিছু। মন্দিরের পিছনের অংশে ভিয়েনের ব্যবস্থা করা হয়েছিল। বিরাট ফুটন্ত কড়াইয়ে টগবগ করে ফুটছিল দুধ সাদা রসোগোল্লা। থরেথরে সাজানো ছিল রাবড়ির ট্রে। পাশেই পেল্লায় কাঁসার রেকাবির ওপর জড়ো করা হয় স্বর্ণময়ী অমৃতি। দেশি ঘিয়ের গন্ধ, আর গোলাপ ফুলের সুবাস যেন মিলেমেশে একাকার হয়ে গিয়েছিল।

বিয়ের সাজে সাজছেন বিনীতা।

নববধূর সাজে বিনীতাকে বেশ দেখাচ্ছিল। খুশিতে উজ্জ্বল হয়ে উঠেছিল তাঁর শীর্ণকায় মুখখানি। খুশিতে ঝলমলে দেখাচ্ছিল বিধবা মায়েদের মুখগুলিও। তারই মাঝে মুহূর্তের জন্য উদাস হয়ে ওঠে কিছু মুখ। কত বছর আগে ছোট বয়সে বিধবার বেশে তাঁদেরও ঘর ছেড়ে বেরিয়ে পড়তে হয়েছিল পথে। স্বামীর মৃত্যুর পরেই বিতাড়িত হতে হয়েছিল শ্বশুর বাডি থেকে। ঠাঁই হয়নি বাপের বাড়িতেও। আজ তাঁদেরই মতো একজন অল্প বয়সী একটি মেয়ে জীবনের এত বড় অভিশাপ মুক্ত হচ্ছে সেই খবর ছড়িয়ে পড়ে বৃন্দাবনের অলিতে গলিতে, বিধবাদের আলো আঁধারি ঘরগুলিতেও। গোধুলি লগ্নের আগেই ধবধবে সাদা পরিপাটি শাড়ি পড়া বিধবা মায়েরা দলে দলে জড়ো হন মন্দিরে। প্রায় সকলেরই হাতে ছিল শাড়ি চাপা উপহারের প্যাকেট। দরজা বন্ধ একটি ঘরের মধ্যে লাল ওড়নায় চমৎকার দেখাচ্ছিল বিনীতাকে । ঘরের মোটা পাঁচিলের ঘুলঘুলি দিয়ে পরন্ত বেলার তীর্যক আলো এসে পড়ছিল তাঁর নাকের নথটিতে। শেরওয়ানি স্যুট পড়া বছর তিনের ছোট্ট ছেলেটি হা করে তাকিয়ে ছিল তার মায়ের নতুন রূপের দিকে। বিনীতা ও রাকেশের দুটি ছেলে মেয়ে। তারাও এ দিন মা বাবার বিয়ের সাক্ষী ছিল। বয়সের পার্থক্য যাই হোক না কেন বৃদ্ধা বিধবা মায়েরা বিয়ের আসরে মজেন চটুল রসিকতায় । ছড়া কেটে সুর করে বলে ওঠেন একজন, ‘আহা কি কাহিনি ছেলে কোলে মা এল বিয়ের পিঁড়িতে ...’। লজ্জায় লাল বিনীতা, হাসিতে গড়িয়ে পড়ে বিধবা মায়েরা। গয়না-শাড়ি বিয়ের সমস্ত তত্ত্ব নেড়েচেড়ে দেখছিলেন সবাই। সত্তরোর্ধ এক বৃদ্ধা কনুইয়ে ঠেলা দিয়ে আর এক জনকে বললেন, “কিরে বসে পড়বে নাকি তুইও ? বৈদিক মন্ত্রের উচ্চারণ, মালা বদল , সাত ফেরা থেকে আংটি বদল কোনও আচারই বাদ যায়নি অনুষ্ঠানে। প্রাচীন এই মন্দির শহরে বিধবার বিয়ে এমন ঘটনা আগে ঘটেছে বলে কেউ জানে না । আলোয় আলোয় উজ্জ্বল গোপীনাথ মন্দির। বেজে উঠল সানাই। বধূ বিনীতার কাঁপা হাতে আংটি পড়িয়ে দেন রাকেশ । অথচ এই ঘটনায় এক বারের জন্যও কেঁপে ওঠেনি ধর্মের নানা মতের এই মন্দির নগরীর মানুষের মন। মন্দিরের বাইরে বাগান সেজে ওঠে প্রদীপে প্রদীপে টুনি লাইটের সজ্জায়। সকলের অনুরোধে প্রথম মোমবাতি জ্বালিয়ে দিল বিনীতাই। বৃন্দাবনের গোপীনাথ মন্দিরই সাক্ষী থাকল এদেশের অভুতপূর্ব ঐতিহাসিক ঘটনার।

Vrindavan Widow's Marriage Radha Gopinath Mandir বৃন্দাবন
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy