Advertisement
E-Paper

উবের ক্যাব নিয়ে দিল্লি জয়ে নেমেছেন এই রাজপুত রমণী

এ যেন এক রাজপুত মহিলার দিল্লি বিজয়ের কথা! না। ইতিহাসের কোনও হারিয়ে যাওয়া পাতা ফিরে দেখা নয়। বলা হচ্ছে আজকের রাজধানীর কথাই। গুলেশ চহ্বান নামের এই রাজপুত মহিলা ন’য়ের দশকের গোড়ায় মাত্র ১৬ বছর বয়সে বিয়ে করে রাজধানীতে আসেন।

অপরাজিতা মৈত্র

শেষ আপডেট: ১৭ অগস্ট ২০১৬ ১৮:৪৮
গুলেশ চৌহান। নিজস্ব চিত্র।

গুলেশ চৌহান। নিজস্ব চিত্র।

এ যেন এক রাজপুত মহিলার দিল্লি বিজয়ের কথা!

না। ইতিহাসের কোনও হারিয়ে যাওয়া পাতা ফিরে দেখা নয়। বলা হচ্ছে আজকের রাজধানীর কথাই।

গুলেশ চহ্বান নামের এই রাজপুত মহিলা ন’য়ের দশকের গোড়ায় মাত্র ১৬ বছর বয়সে বিয়ে করে রাজধানীতে আসেন। বিভিন্ন ঘটনার ঘাত প্রতিঘাতে আজ তিনি দিল্লি এনসিআর (ন্যাশানাল ক্যাপিটাল রিজিয়ান)-এ উবের এর একমাত্র মহিলা ক্যাব চালক।

বৈশালীর বাড়ি থেকে রোজ ভোর ৬টায় বেড়িয়ে পড়েন তিনি, তার পর যখন যেখানে বুকিং আসতে থাকে সেই মতোই গোটা শহর ঘুরে বেড়াতে হয়। বাড়ি ফিরতে ফিরতে ঘড়ির কাঁটা ছুঁয়ে যায় রাত ১১টা।

কবে থেকে কীভাবে শুরু হল গুলেশের এই জীবনসংগ্রাম? হটাৎ ক্যাব ড্রাইভিংই বা কেন? গুলেশের নিজের কথায়, “গাড়ি চালাতে অনেক দিন থেকেই পারতাম। শীলা দীক্ষিত যখন মহিলা বাস ড্রাইভাররা নতুন বাস চালাবে বলে ঘোষণা করেন, সেই সময়ই কমার্শিয়াল ড্রাইভিং লাইসেন্স করাই”।

২০০৩ সালে স্বামীর মৃত্যু। তারপরেই সংসার চালানোর তাগিদটা বেড়ে যায়। উবেরে কাজ করার আগে বাচ্চাদের স্কুলের গাড়িও চালিয়েছেন গুলেশ। শুধু তাই নয়, ঘর মোছা, কাপড় কাচার কাজের সাথে হোম ডেলিভারিতে খাবার দেওয়ার কাজও করতে হয়েছে। কয়েক বছর আগে খাবার পৌছতে গিয়ে হটাৎই স্কুটিতে অ্যাক্সিডেন্ট হয়, সাড়া শরীরে অসংখ্য স্টিচ পড়ে। তখন মানসিক ভাবে ভেঙ্গেও পড়েন কিছুটা। কিন্তু হার মানেননি। এর আগে কয়েক জায়গায় মহিলা বলে কাজ পাননি গুলেশ। তার পর ক্যাব ড্রাইভিং-এর কথা যখন জানতে পারেন, নতুন উদ্যমে কাজের খোঁজ শুরু হয় তখনই।

দিনের বেশিরভাগ সময় কাটে রাস্তায় রাস্তায়, বিভিন্ন রকমের যাত্রীকে নির্দিষ্ট গন্তব্যে পৌঁছে দিতে। অসংখ্য মানুষের বিস্মিত জিজ্ঞাসায় এখন অনেকটাই অভ্যস্ত সে— গাড়িতে চেপে একজন মহিলাকে ড্রাইভিং সিটে দেখে অবাক হন বেশিরভাগ মানুষ। তবে অবাক হওয়ার সাথে সাথে খুশিও হন তাঁরা, অনেক সময় বিদেশি যাত্রীরাও চেপেছে তাঁর গাড়িতে। নিজের অভিজ্ঞতার কথা বলতে গিয়ে গুলেশ জানাচ্ছেন, “একবার তো এক যাত্রী গাড়ি থেকে নেমে আমায় স্যালুট করেন, আমার নিজেরই চোখে জল চলে এসেছিল তাতে। এ ছাড়া প্রায় প্রতেকেই নিজেদের ফোনে আমার ছবি তুলে নিয়ে যান, আসলে একজন মহিলাকে ক্যাব ড্রাইভিং করতে দেখে অবাক হয় কম বেশি সবাই”।

দিল্লিতে বিভিন্ন ঘটনায় মহিলাদের সুরক্ষা নিয়ে যখন বার বার প্রশ্ন উঠছে তখন একজন মহিলা ড্রাইভার হিসাবে কী মনে করেন গুলেশ? তাঁর কথায়, “দিনে ১৫-১৬ ঘণ্টা আমাকে রাজধানীর বিভিন্ন জায়গায় যেতে হয়। এর মধ্যে অনেক সময়ই অনেক জায়গায় প্রথমবার যেতে হয়। অনেক রাতেও কাজের জন্য বাড়ির বাইরেই থাকতে হয় আমায়। আর যাত্রীদের বেশির ভাগ পুরুষই হন। তাদের থেকে কখনও কোনও খারাপ ব্যবহার আমি পাইনি। অনেক সময় অনেক ঘটনা ঘটে ঠিকই, কিন্তু তার জন্য গোটা শহরকে দোষ দেওয়া যায় না।”

নিজের নম্র ব্যবহারে সব যাত্রীদেরই মন জিতে নিয়েছেন গুলেশ। ‘উবের’-এও কাজের ফিডব্যাক হিসাবে ফাইভ স্টার পান বেশিরভাগ সময়ই।

২০০৩ থেকে সংসারের যাবতীয় দায়িত্ব গুলেশের। বাড়িতে ছেলে রয়েছে, তা ছাড়াও আছেন ক্যানসার আক্রান্ত মা। রোজগারের বেশির ভাগ টাকাই মা’র চিকিৎসার খরচ চালাতে বেরিয়ে যায়। গুলেশের স্বপ্ন নিজের একটা গাড়ি কেনার। বললেন, “অন্যের গাড়ি চালিয়ে মাসে ১ লাখ টাকার বেশি আয় হয়, যা থেকে গাড়ির মেন্টেন্যান্স আর উবেরের টাকা বাদে যা টাকা থাকে সেটা আমি পাই, কিন্তু প্রতি মাসে মার ওষুধ কিনতেই তার বেশির ভাগ শেষ হয়ে যায়। কিছু টাকা জমিয়ে নিজের একটা গাড়ি কেনার ইচ্ছে। গাড়ি কেনার জন্য অনেক যায়গায় লোনের অ্যাপ্লাই করলেও সে ভাবে সাড়া পাইনি কোথাও।”

এখন নিজের একটা গাড়ি, মা’র চিকিৎসা, আর সদ্য গ্র্যাজুয়েট ছেলের একটা চাকরির আশায় রাজধানীতে উবের এর একমাত্র মহিলা ক্যাব ড্রাইভার।

আরও পড়ুন:
রাজভবনের নীচে বিশাল বাঙ্কারের খোঁজ মিলল মহারাষ্ট্রে

Gulesh Chowhan Woman Uber Driver
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy