Advertisement
E-Paper

রাইফেল ধরা হাতেই তুলি তুলে নেন জাগুয়ার কম্যান্ডো

ওঁদের হাতে একে-৪৭। কিন্তু ওই হাতেই কখনও কখনও ওঠে তুলি! ওঁরা আধুনিক আগ্নেয়াস্ত্র দিয়ে যেমন জঙ্গি মোকাবিলা করেন, ঠিক একই দক্ষতায় আবার রং-তুলি দিয়ে ফুটিয়ে তোলেন পাখির ছবি, নদীর ছবি, সূর্যাস্তের ছবি, সবুজ জঙ্গলের ছবি।

আর্যভট্ট খান

শেষ আপডেট: ০৬ জুলাই ২০১৬ ১৬:০৫
তুলি হাতে ব্যস্ততা।

তুলি হাতে ব্যস্ততা।

ওঁদের হাতে একে-৪৭। কিন্তু ওই হাতেই কখনও কখনও ওঠে তুলি! ওঁরা আধুনিক আগ্নেয়াস্ত্র দিয়ে যেমন জঙ্গি মোকাবিলা করেন, ঠিক একই দক্ষতায় আবার রং-তুলি দিয়ে ফুটিয়ে তোলেন পাখির ছবি, নদীর ছবি, সূর্যাস্তের ছবি, সবুজ জঙ্গলের ছবি।

ওঁরা ঝাড়খণ্ড পুলিশের মাওবাদী জঙ্গি দমনের ‘স্পেশালিস্ট কম্যান্ডো’, জাগুয়ার জওয়ান। জঙ্গি মোকাবিলায় ওঁদের প্রায়ই বেরিয়ে পড়তে হয় পলামু, লাতেহার, গুমলার জঙ্গলে। কিন্তু এই যুদ্ধের ফাঁকেও ওঁদের কয়েক জন কিন্তু ভোলেননি ছোটবেলার সেই ‘রং-তুলি’। রাঁচি থেকে ২৫ কিলোমিটার দূরে, কাটিটারের কাছে টেন্ডার গ্রামে কয়েক একর জায়গা জুড়ে জাগুয়ার শিবিরে ঘুরলে চোখে পড়ে সৌন্দর্যায়নের ছোঁয়া। ক্যাম্পের শহিদ চকের দেওয়ালে আঁকা প্রকৃতির ছবি, শহিদ চকের পাশে ছোট পাহাড়ের পাথরে আঁকা আছে তাঁদের জঙ্গল অভিযানের কাহিনি। জাগুয়ার বাহিনীর ডেপুটি কমান্ড্যান্ট আর কে সিংহ গর্বের সঙ্গে বলেন, ‘‘এই ছবিগুলি কিন্তু আমাদের কয়েক জন কম্যান্ডোরই আঁকা। কাজের অবসরে, শরীরচর্চার অবসরে ওরা ছবি আঁকে। ওরা যেমন ভাল যোদ্ধা, তেমনই চিত্রকর।’’

কয়েক জন কম্যান্ডো-চিত্রকরের সন্ধান পাওয়া গেল ক্যাম্পাসের মধ্যে, প্রশাসনিক ভবনের একতলার একটা ঘরে। সেটাই ওদের আর্টরুম। একটা আর্টপেপারে কয়েকটা পাখির ছবি আঁকছেন জাগুয়ার জওয়ান পঙ্কজ সিংহ। তাঁর কথায়, ‘‘লাতেহারের জঙ্গলে এক বার একটা জঙ্গি অভিযানে গিয়ে এই পাখিগুলি চোখে পড়েছিল। সেই পাখিই এখন মনে করে আঁকার চেষ্টা করছি।’’


পাথরের গায়ে কম্যান্ডোদের আঁকা ছবি।

জঙ্গি-অভিযানে গিয়ে পাখি দেখার সুযোগ পান? ঘন জঙ্গলে যেখানে পদে পদে বিপদ, ল্যান্ডমাইন বিস্ফোরণের আশঙ্কা, যখন তখন জঙ্গল ফুঁড়ে জঙ্গিদের ছোড়া গুলি এসে লাগতে পারে বুকে, সেখানে ফুল-পাখি-নদী দেখার সুযোগ মেলে? দীপক থাপা নিজের আঁকা থামিয়ে উত্তর দিলেন, ‘‘ঝাড়খণ্ডের জঙ্গলের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য যেন উপচে পড়ছে। এ জঙ্গল যেন ছবির দেশ। তাই অভিযান চলাকালীনও মাঝেমধ্যেই চোখে পড়ে যায় নানা ধরনের ছবি। এই সব ছবিই আমরা কখনও আর্ট পেপারে, কখনও আমাদের ক্যাম্পের দেওয়ালে, কিংবা পাথুরে পাহাড়ে ফুটিয়ে তোলার চেষ্টা করি।’’

দীপক, পঙ্কজদের ছোট থেকেই ছবি আঁকার নেশা ছিল। স্কুলেই ছবি আঁকার প্রথম প্রশিক্ষণ। পেটের তাগিদে এই গুলি-বন্দুকের পেশায় আসতে হয়েছে। কিন্তু ভালবাসাটা রয়েই গিয়েছে। কম্যান্ডো ভোলা কারমালি বলতে থাকেন, ‘‘আমাদের যখন অভিযান থাকে না তখনও কিন্তু নানা ধরনের কাজ থাকে। আজ সকালে রাইফেল নিয়ে ১০ কিলোমিটার দৌড়েছি। তারপর হাতে কিছুটা ফাঁকা সময়। এই ঘরে এসে জুটেছি।’’


সেজে উঠেছে পাঁচিলও।

টেন্ডার গ্রামের চারিদিকে ছোট ছোট পাহাড়ে ঘেরা বিস্তীর্ণ জাগুয়ার ক্যাম্প। কোথাও ফায়ারিং অনুশীলন হচ্ছে, কোথাও আবার জঙ্গলের রাস্তায় মাইন পোঁতা থাকলে কী কী সাবধানতা নিতে হবে তার প্রশিক্ষণ চলছে। ক্যাম্প ঘুরিয়ে দেখাতে দেখাতেই দীপক খানিকটা দার্শনিক হয়ে যান। বলেন, ‘‘হয়তো আমাকে আজ মাঝরাতেই অভিযানে বেরোতে হবে। না-ও ফিরতে পারি। কিন্তু যখন ভাবি, আমি না থাকলেও ক্যাম্পের দেওয়ালে আঁকা আমার ছবিগুলো থেকে যাবে, তখন বেশ ভাল লাগে।’’

Commando Painter
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy