—ফাইল চিত্র।
ভারত ও রাশিয়ার বিদেশমন্ত্রী এবং প্রতিরক্ষামন্ত্রী পর্যায়ের (টু প্লাস টু) সর্বপ্রথম বৈঠকেই সাফল্যের মুখ দেখা গিয়েছে বলে দাবি দিল্লির। সোমবার প্রতিরক্ষা ক্ষেত্রে দুটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ চুক্তিতে স্বাক্ষর করেছে দু’দেশ। দীর্ঘমেয়াদি সামরিক সহযোগিতার ক্ষেত্রেও আগামী দশ বছরের জন্য সমঝোতা হয়েছে মস্কো-দিল্লির। গোটা বিষয়টি ঘটল আমেরিকার ‘ক্যাটসা’ (কোনও দেশের রাশিয়া থেকে উচ্চ প্রযুক্তির এবং বড় পরিমাণে যুদ্ধাস্ত্র ও যুদ্ধসরঞ্জাম কেনার ক্ষেত্রে আমেরিকার নিষেধাজ্ঞা সংক্রান্ত আইন) আইনকে কার্যত অগ্রাহ্য করেই।
প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিংহ এবং রাশিয়ার প্রতিরক্ষামন্ত্রী সের্গেই সোইগু আজ প্রথম যে চুক্তিটি সই করেন তা প্রায় ৬ লক্ষ এ কে-২০৩ রাইফেল ভারতে যৌথ উৎপাদন সংক্রান্ত। উত্তরপ্রদেশের অমেঠীতে রূপায়িত হবে ৫ হাজার কোটি টাকার প্রকল্প। পাশাপাশি ২০৩১ সাল পর্যন্ত ভারত-রাশিয়ার সামরিক প্রযুক্তি সহযোগিতার একটি চুক্তিও সই করেন দু’দেশের প্রতিরক্ষামন্ত্রী।
বৈঠকের পরে রাজনাথ টুইট করে বলেন, “প্রতিরক্ষা-সহযোগিতার ক্ষেত্রে কার্যকরী, ফলপ্রসূ এবং সর্বাত্মক দ্বিপাক্ষিক আলোচনা হয়েছে আজ। রাশিয়ার সঙ্গে বিশেষ কৌশলগত সম্পর্ক রয়েছে আমাদের। যা দেশের জন্য অত্যন্ত মূল্যবান।” আরও একটি টুইট করে রাজনাথের বক্তব্য, “ভারতের প্রতি বরাবরই রাশিয়ার গভীর সমর্থনে আমরা কৃতজ্ঞ। আমরা আশা করছি আমাদের যৌথ সহযোগিতা গোটা অঞ্চলে শান্তি, সমৃদ্ধি এবং সুস্থিতি নিয়ে আসবে।” চিনকে কটাক্ষ করে রাজনাথের বক্তব্য, ‘‘অতিমারি, প্রতিবেশী বলয়ে সামরিক শক্তিবৃদ্ধির পাশাপাশি ২০২০ সালের গ্রীষ্ম থেকে উত্তর সীমান্তে বিনা প্ররোচনায় আগ্রাসন চ্যালেঞ্জ বাড়িয়েছে। কিন্তু ভারত তার রাজনৈতিক দৃঢ়তা ও দেশবাসীর কর্মদক্ষতার ফলে সেই চ্যালেঞ্জ অতিক্রম করবে।’’
বৈঠকের শুরুতেই আলোচনার সুর বেঁধে দেন বিদেশমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর। বলেন, “আমরা এমন সময়ে মিলিত হচ্ছি যখন আন্তর্জাতিক ভূরাজনৈতিক পরিস্থিতি টলোমলো। পরম মিত্র এবং কৌশলগত ভাবে শরিক রাষ্ট্র হিসেবে ভারত এবং রাশিয়া নিজ নিজ স্বার্থ রক্ষার্থে পরস্পরের সঙ্গে সংযুক্ত রয়েছে।” দু’দেশের রাজনৈতিক এবং সামরিক নেতৃত্বের সংযোগের দিকটিকে তুলে ধরে জয়শঙ্কর বলেছেন, “এই বৈঠকে একটি মঞ্চ তৈরি হল যেখানে পারস্পরিক রাজনৈতিক-সামাজিক বিষয়গুলি নিয়ে আলোচনা সম্ভব।”
কূটনৈতিক সূত্রের মতে, আমেরিকাকে পুরোপুরি অগ্রাহ্য করে যে ভারত রাশিয়ার সঙ্গে এই বিস্তৃত সহযোগিতার রাস্তায় হাঁটছে, বিষয়টি এমন নয়। সবটাই আমেরিকাকে জানিয়েই করা হচ্ছে বলে সূত্রের খবর। চিনের সঙ্গে যখন সীমান্তে সংঘাত চলছে, তখন এই প্রতিরক্ষা সরঞ্জাম ভারতের কাছে কৌশলগত ভাবে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। সূত্রের খবর, এই বিষয়টি আমেরিকার প্রশাসনকে বোঝাতে সমর্থ হয়েছে মোদী সরকার। দু’সপ্তাহ আগেই এই নিয়ে নয়াদিল্লিতে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী দীর্ঘ এবং গুরুত্বপূর্ণ বৈঠক করেন আমেরিকার সেনেটর জন কর্নিনের সঙ্গে। কর্নিন হলেন সেই দু’জন সেনেটরের এক জন যাঁরা সম্প্রতি আমেরিকার প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের কাছে আবেদন করেছেন, ভারতকে নিষেধাজ্ঞার আওতার বাইরে রাখতে। তাঁদের যুক্তি, ভারতের বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা জারি করা হলে তা দু’দেশের কৌশলগত সম্পর্কের পক্ষে ক্ষতিকর হবে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy