E-Paper

সোনম কাণ্ড: গতি পেল ইনারলাইন পারমিটের দাবি

উত্তর-পূর্বে অরুণাচল, মিজ়োরাম, নাগাল্যান্ড ও মণিপুরে আইএলপি চালু আছে। আইএলপি না থাকায় স্থানীয় খাসি ও জয়ন্তিয়া সংগঠনগুলি শিলং পর্যন্ত রেলপথ চালু করতে দেয়নি।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ১৫ জুন ২০২৫ ০৮:৫১

গ্রাফিক: আনন্দবাজার ডট কম।

মেঘালয়ের সংগঠনগুলি কয়েক বছর ধরে আন্দোলন চালিয়ে যা করতে পারল না, এক দিনের জন্য মেঘালয়ে এসেই সেই কাজ অনেকটা এগিয়ে দিল মধ্যপ্রদেশের সোনম রঘুবংশী। তিন সঙ্গী-সহ সোহরায় এসে, স্বামী রাজা রঘুবংশীকে হত্যা করে নির্বিঘ্নে রাজ্য ছেড়ে পালিয়েছিল সোনমেরা। ঘটনার জেরে রাজ্যে ইনারলাইন পারমিটবা আইএলপি চালু করার দাবি জোরদার হল।

রাজ্য মন্ত্রিসভা সিদ্ধান্ত নিল, মেঘালয় বাসিন্দাদের সুরক্ষা ও নিরাপত্তা আইন বা এমআরএসএসএ বাস্তবায়নে সক্রিয় পদক্ষেপ করা হবে এবং তার প্রথম ধাপ হিসেবে, পর্যটক ট্র্যাকিং অ্যাপের মাধ্যমে মেঘালয়ে আসা পর্যটকদের আগাম নিবন্ধন এবং বিভিন্ন পরিচয়পত্র, গাড়ির নম্বর, হোটেলের তথ্য আপলোড করা বাধ্যতামূলক হচ্ছে।

উত্তর-পূর্বে অরুণাচল, মিজ়োরাম, নাগাল্যান্ড ও মণিপুরে আইএলপি চালু আছে। আইএলপি না থাকায় স্থানীয় খাসি ও জয়ন্তিয়া সংগঠনগুলি শিলং পর্যন্ত রেলপথ চালু করতে দেয়নি। রঘুবংশীকাণ্ডের পরে মেঘালয়ের রাজনৈতিক দল কেএইচএনএএম কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহকে মেঘালয়ে আইএলপি চালু করার অনুরোধ জানিয়ে স্মারকপত্র পাঠাল। সেই সঙ্গে এই উদাহরণ সামনে রেখে হিন্নেইত্রেপ যুব পরিষদ ও মেঘালয় সামাজিক সংগঠনের কনফেডারেশন বা কমসো ‘নো আইএলপি, নো রেস্ট’ স্লোগান দিয়ে বিক্ষোভ দেখানো শুরু করেছে। তাদের দাবি, উত্তরপ্রদেশ এবং মধ্যপ্রদেশের ব্যক্তিরা গোপনে রাজ্যে এসে খুন করে চলে যাচ্ছে। পুলিশ কিছু জানতে পারছে না। রাজ্যবাসী খামোকা কলঙ্কিত হচ্ছেন। যৌথ মঞ্চের সভাপতি রায়কুপার সিনরেম বলেন, “রঘুবংশীদের ঘটনা দেখাল যে কেউ, যে কোনও উদ্দেশ্যে, কারও চোখে না পড়ে অস্ত্র নিয়ে রাজ্যে আসতে পারে, এক বা একাধিক খুন বা অন্য অপরাধ করে সহজেই চলে যেতে পারে। আইএলপি থাকলে এই লোকেদের রেকর্ড থাকত এবং মেঘালয় পুলিশ আগেই জানতে পারত যে সোনম ও রাজা কবে এসেছেন, কোথায় উঠেছেন, কত দিনের জন্য এসেছেন এবং কেউ রাজ্য ছেড়ে একা চলে গিয়েছে কি না। তাঁদের আধারও পুলিশের হাতে থাকত।” তারা প্রতিটি জেলায় বিশেষ তদন্ত দল গঠন করে বাংলাদেশি অনুপ্রবেশকারীদের শনাক্ত এবং বহিষ্কারের ব্যবস্থা করার দাবিও তুলেছে।

রি ভয় যুব ফেডারেশন ও আচিক যুব কল্যাণ সংস্থার মতে, রাজ্যের পর্যটন-প্রধান অঞ্চলে আইএলপি পর্যটকদের আগমন নিয়ন্ত্রণ করা, এলাকার নিরাপত্তা নিশ্চিত করা এবং রাজ্যের সাংস্কৃতিক ও পরিবেশগত ঐতিহ্য রক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে।মুখ্যমন্ত্রী কনরাড সাংমার নেতৃত্বে মেঘালয় মন্ত্রিসভা সিদ্ধান্ত নিল, পর্যটক ও স্থানীয় বাসিন্দাদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে পর্যটক ট্র্যাকিং অ্যাপের মাধ্যমে পর্যটকদের আগাম নিবন্ধন বাধ্যতামূলক করা হবে।

পর্যটন মন্ত্রী পল লিংডো বলেন, “আইএলপি নিয়ে রাজ্য বিধানসভা ইতিমধ্যেই সর্বসম্মত প্রস্তাব গ্রহণ করেছে এবং বিষয়টি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের বিচারাধীন। তবে এমআরএসএসএ আইনের আওতার ভিতরেই আমরা সুরক্ষামূলক পদক্ষেপ গ্রহণ করতে পারি। সোহরায় আমরা যা অভিজ্ঞতা অর্জন করেছি তার ফলশ্রুতিতে এবং পর্যটকের ছদ্মবেশে অপরাধীদের মেঘালয়ে প্রবেশের সম্ভাবনা কমিয়ে আনার জন্য মন্ত্রিসভা সিদ্ধান্ত নিয়েছে, পর্যটকদের অ্যাপে নিজেদের পরিচয়, পরিচয়পত্র, ভাড়া করা গাড়ি বা স্কুটারের বিবরণ, হোটেল-হোম স্টের বিবরণ সব বাধ্যতামূলকভাবে আপলোড করতে হবে।”

লিংডো আরও জানান, “আমরা খাসি, গারো, ইংরেজি এবং হিন্দিতে পারদর্শী আগ্রহী তরুণদের পর্যটক বন্ধু প্রকল্পে যোগদানের জন্য একটি বিজ্ঞপ্তি জারি করেছি এবং আগামী দুই মাসের মধ্যে আমরা ১০০ জন পর্যটক বন্ধু নিয়োগ করব।”

এ দিকে, সোহরাকাণ্ডের পরে রাজা ও সোনমের পরিবার, বিভিন্ন সংবাদমাধ্যম তথা সামাজিক মাধ্যমে প্রভাবশালী ব্যক্তিরা মেঘালয়বাসীদের সম্পর্কে যে সব মানহানিকর মন্তব্য করেছেন তা নিয়ে মামলা করার হুমকি দিয়েছিল সরকার। কিন্তু মন্ত্রিসভার বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয়েছে, সকলেই যেহেতু নিজেদের ভুল বুঝতে পেরেছে এবং অনেকেই ক্ষমাও চেয়েছে, তাই রাজ্য কারও বিরুদ্ধে কোনও আইনি ব্যবস্থা নেবে না।

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

Meghalaya Murder Case Inner Line Permit meghalaya police investigation

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy