Advertisement
E-Paper

গুঁড়িয়ে দেওয়া ব্রাহ্ম মন্দির স্মরণে তৈরি হবে স্মারক

পরিত্যক্ত ব্রাহ্ম মন্দির ভেঙে সেই জায়গায় তৈরি হয়েছিল শিলচর মহিলা মহাবিদ্যালয়। কিন্তু ইতিহাসকে অস্বীকার না করে, প্রায় পাঁচ দশক পর কর্তৃপক্ষ ওই কলেজ চত্ত্বরেই একটি ব্রাহ্ম-স্মারক তৈরির সিদ্ধান্ত নিলেন। মন্দিরটি যেখানে ছিল সেখানেই তৈরি করা হবে স্মারকটি। কলেজ কর্তৃপক্ষের কথায়, শিলচরে ‘ব্রাহ্ম’ ঐতিহ্যকে স্মরণ করা ও সমকালীন প্রজন্মকে সে সম্পর্কে অবহিত করাই এর লক্ষ্য। শিলচরে ব্রাহ্মসমাজ গড়ে উঠেছিল ১৮৭৯ সালে। প্রাচীন নথিতে সে বছরের ২৮ জানুয়ারি ব্রাহ্ম সমাজের সভার প্রথম উল্লেখ পাওয়া যায়।

উত্তম সাহা

শেষ আপডেট: ৩১ মার্চ ২০১৫ ০৩:৫৫
নীলিম শ্যামের আঁকা সেই ব্রাহ্ম মন্দির। মহিলা মহাবিদ্যালয়ের সৌজন্যে পাওয়া ছবি।

নীলিম শ্যামের আঁকা সেই ব্রাহ্ম মন্দির। মহিলা মহাবিদ্যালয়ের সৌজন্যে পাওয়া ছবি।

পরিত্যক্ত ব্রাহ্ম মন্দির ভেঙে সেই জায়গায় তৈরি হয়েছিল শিলচর মহিলা মহাবিদ্যালয়। কিন্তু ইতিহাসকে অস্বীকার না করে, প্রায় পাঁচ দশক পর কর্তৃপক্ষ ওই কলেজ চত্ত্বরেই একটি ব্রাহ্ম-স্মারক তৈরির সিদ্ধান্ত নিলেন। মন্দিরটি যেখানে ছিল সেখানেই তৈরি করা হবে স্মারকটি। কলেজ কর্তৃপক্ষের কথায়, শিলচরে ‘ব্রাহ্ম’ ঐতিহ্যকে স্মরণ করা ও সমকালীন প্রজন্মকে সে সম্পর্কে অবহিত করাই এর লক্ষ্য।

শিলচরে ব্রাহ্মসমাজ গড়ে উঠেছিল ১৮৭৯ সালে। প্রাচীন নথিতে সে বছরের ২৮ জানুয়ারি ব্রাহ্ম সমাজের সভার প্রথম উল্লেখ পাওয়া যায়। ১৮৮৩ সালের ১ এপ্রিল সমাজ তত্‌কালীন সরকারের কাছ থেকে ২০ বছরের জন্য সংশ্লিষ্ট জমিটির বন্দোবস্ত নিয়েছিলেন। ১৮৯৭-৯৮ সালে সেখানে মন্দির নির্মাণ ও পুকুর খনন করা হয়। প্রথমে সমাজের অছি পরিষদের সদস্য সংখ্যা ছিল ৭। ১৯০০ সালের ২৭ জুনের সাধারণ সভায় তা বেড়ে ৯ হয়। শহরের বেশ কিছু প্রভাবশালী ও বিদগ্ধ ব্যক্তি নিয়মিতভাবে এই মন্দিরে গিয়ে উপাসনা করতেন। বার্ষিক উত্‌সবেও অনেক মানুষ জড়ো হতেন। ভিন রাজ্য থেকেও আসতেন অনেকে। কিন্তু দেশ জুড়েই যখন ব্রাহ্ম সমাজের ক্রিয়াকর্মে ভাটা পড়ে, শিলচরের মন্দির পরিচালনায়ও তখন দেখা দেয় বিশৃঙ্খলা। মন্দিরের দরজাও ধীরে ধীরে বন্ধ হয়ে যায়। ব্রাহ্ম মন্দির পরিত্যক্ত হয়। বিপ্লবী উল্লাসকর দত্ত ১৯৫১ সালে পাকাপাকি ভাবে শিলচর চলে এলে কিছুদিনের জন্য এই মন্দির আবার প্রাণ ফিরে পেয়েছিল। উল্লাসকরকে সংবর্ধনাও দেওয়া এই মন্দিরেই। তবে তাও বেশি দিন স্থায়ী হয়নি। সময় শিলচরে একটি মহিলা মহাবিদ্যালয় তৈরির কথাবার্তা চলছিল। ১৯৬৩ সালে শিলচর নর্মাল স্কুলে অস্থায়ী ভাবে মহিলা কলেজের পঠনপাঠন শুরু হয়। পরে শিলচরের তত্‌কালীন ব্রাহ্ম সমাজ মন্দির-সহ তাদের পুরো জমিটাই মহিলা মহাবিদ্যালয়ের স্থায়ী ভবনের জন্য দান করে। ১৯৬৮ সালে ওই জমিতে চলে আসে মহিলা মহাবিদ্যালয়। সে বছরই প্রায় সত্তর বছরের পুরনো ব্রাহ্ম মন্দিরটি ভাঙার কাজ শুরু করেন তত্‌কালীন কলেজ কর্তৃপক্ষ।

‘শিলচরের কড়চা’ গ্রন্থে কালীপ্রসন্ন ভট্টাচার্য লিখেছেন: শহরে তখন এই মন্দির ভাঙা নিয়ে অতি ক্ষীণ প্রতিবাদ উঠেছিল। কিন্তু তাতে কোন কাজ হল না। রায়সাহেব রুক্মিণী কুমার দাস তাঁর সাধ্যমতো বাধা দিয়েছিলেন। কিন্তু কোন লাভ হল না। একদিন মন্দিরের গায়ে হাতুড়ির ঘা পড়ল। কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই চোখের সামনে থেকে ছোট সুদৃশ্য মন্দিরটি অদৃশ্য হয়ে গেল। নিশ্চিহ্ন হয়ে গেল শিলচরের একটি ঐতিহাসিক নিদর্শন। অমলেন্দু ভট্টাচার্য সম্পাদিত ‘দেবব্রত দত্তের নির্বাচিত প্রবন্ধ সংকলন’ গ্রন্থে ‘কাছাড় ব্রাহ্ম সমাজ’ নামে একটি প্রবন্ধ রয়েছে। সেখানে দেবব্রত দত্ত লিখেছেন: ব্রাহ্ম মন্দির স্থাপন করিয়া যাঁহারা নিরাকার ব্রহ্মের উপাসনা করিতে উদ্যোগী হইয়াছিলেন তাঁহাদের মধ্যে কিন্তু ২/১ জন ব্যতীত কেহই আনুষ্ঠানিকভাবে ব্রাহ্মধর্ম গ্রহণ করেন নাই। ... ট্রাস্টিরা সকলেই ছিলেন সরকারি কর্মচারী এবং চাকুরি ব্যাপদেশেই তাঁহারা শিলচর শহরে আসিয়াছিলেন। ট্রাস্টিদের মধ্যে কেবল সারদাচরণ নন্দীই আনুষ্ঠানিকভাবে ব্রাহ্মধর্ম গ্রহণ করিয়াছিলেন।...তবে ইহা সত্য যে কাছাড়ের সামাজিক ও সাংস্কৃতিক ইতিহাস হইতে কাছাড় ব্রাহ্ম সমাজকে বাদ দেওয়া চলিবে না। মহিলা মহাবিদ্যালয়ের ইতিহাসের শিক্ষিকা দেবশ্রী দত্ত জানান, “বিপিনচন্দ্র পাল প্রথম শিলচর আসেন ১৮৯৮ সালে। কিন্তু সে বার তিনি স্বাধীনতা সংগ্রামী হিসেবে নন, এসেছিলেন ব্রাহ্ম ধর্ম প্রচারের জন্য।”

মহাবিদ্যালয় পরিচালন সমিতির বর্তমান সভাপতি সমরকান্তি রায়চৌধুরী বলেন, “ইতিহাসকে মাথায় রেখেই আমরা ব্রাহ্ম স্মারক তৈরির সিদ্ধান্ত নিয়েছি। শিলচরে ব্রাহ্ম সমাজের কাজকর্ম ও এখানে যে আদৌ কোনও দিন একটি ব্রাহ্ম মন্দির ছিল, সে কথা হয় এখানকার মানুষ জানে না, নয়তো সে কথা ভুলতে বসেছে।” কলেজ-অধ্যক্ষ মনোজ পাল জানান, “এটি আসলে আমাদের প্রস্তাবিত বড়সড় প্রকল্পের একটি অংশ। এই অঞ্চলের সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য পুনরুজ্জীবনে আমরা কাজ করতে চাইছি। এখানে একটা মিউজিয়াম গড়ার ইচ্ছে রয়েছে। সেই জন্য ইন্দিরা গান্ধী ন্যাশনাল সেন্টার ফর আর্টস-এর সঙ্গে কথাবার্তাও হয়েছে। তাঁরা এ ব্যাপারে সায় দিয়েছেন। এখন নির্দিষ্ট কিছু প্রস্তাব যাবে তাঁদের কাছে। এর মধ্যে অন্যতম এই ব্রাহ্ম-স্মারক।” একে বাদ দিয়ে এই অঞ্চলের সাংস্কৃতিক অতীতকে বোঝা সম্ভব নয় বলে মনে করেন মনোজবাবু। কলেজ-সভাপতি অবশ্য জানিয়েছেন, “আইজিএনসিএ প্রকল্পের ভিতরে হোক কিংবা বাইরে, ব্রাহ্ম-স্মারকটি অবশ্যই আমরা তৈরি করব।”

Memento Brahma temple Uttam Saha Silchar Bipin Chandra Pal history Silchar women college social work
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy