কেটে গিয়েছে ১০০ দিন। কাশ্মীরে পর্যটনস্থানগুলির মধ্যে অন্যতম পহেলগামের বৈসরন উপত্যকায় জঙ্গিদের হামলায় পর্যটকদের হানার পরে পাকিস্তানে জঙ্গি শিবিরের বিরুদ্ধে অভিযান চালিয়েছে ভারত। আবার সম্প্রতি সংসদে সেই অভিযান নিয়ে আলোচনা শুরু সময়ে উপত্যকায় বাহিনীর সঙ্গে সংঘর্ষে নিহত হয়েছে তিন জঙ্গি। যাদের মধ্যে সুলেমান শাহ পহেলগামে পর্যটকদের উপরে হামলার মূল চক্রী বলে দাবি নরেন্দ্র মোদী সরকারের।
কিন্তু তাতে কাশ্মীরের মানসিক যন্ত্রণা কমছে কই?
এখনও পহেলগাম ও অন্য পর্যটনস্থলগুলির পথ শূন্য। যে সব হোটেলগুলি পর্যটকে ভর্তি হয়ে গিয়েছিল সেগুলি ফাঁকা। কড়াসুরক্ষায় অমরনাথ যাত্রা হলেও পহেলগাম এলাকা দ্রুত পেরিয়ে গিয়ে হাঁফ ছেড়ে বাঁচছেন যাত্রীরা। স্থানীয়দের মতে, আতঙ্ক যায়নি। কেবল রূপ বদলেছে।
পহেলগামে জঙ্গিদের রুখতে গিয়ে নিহত হয়েছিলেন ঘোড়াওয়ালা আদিল। সেখানকারই আর এক ঘোড়াওয়ালা আব্দুল রহমানবললেন, ‘‘পাকিস্তানে অভিযান,জঙ্গি-দমনের ফলে কি নিহত ব্যক্তিরা ফিরে আসবেন? আমরা কথাবলতে ভয় পাই। এই নৈঃশব্দ্য শান্তি নয়। যন্ত্রণা।’’
উপরাজ্যপালের অধীন প্রশাসন জানাচ্ছে, গোটা উপত্যকায় নিরাপত্তা বাড়ানো হয়েছে। বিভিন্ন পর্যটনস্থল ঘরলেই দেখা যাচ্ছে বাহিনীর গতিবিধি। কিন্তু সশস্ত্র বাহিনীর উপস্থিতি স্থানীয়দের উদ্বেগ কমাতে পারছে না।
ডাল হ্রদের কাছেই থাকেন স্কুলশিক্ষক মহসিন। বাড়ির সামনেই দাঁড়িয়ে বললেন, ‘‘যন্ত্রণার পাশাপাশি এক ধরনের ক্লান্তিও আছে। আমরা এমন অনেক ঘটনা দেখেছি। পার্থক্য হল এ বার ঘটনাটা ঘটেছে আমাদের জীবিকার কেন্দ্রস্থল যে এলাকা সেখানে।’’
প্রশাসন অবশ্য দাবি করছে, বৈসরন উপত্যকায় হামলাকারী জঙ্গিদের মৃত্যু বড় সাফল্য। পর্যটক ও স্থানীয়দের বিশ্বাস ফেরাতে উপত্যকার বিভিন্ন এলাকায় মন্ত্রিসভার বৈঠক করেছেন জম্মু-কাশ্মীরের মুখ্যমন্ত্রী ওমর আবদুল্লা। কিন্তু তার বিশেষ প্রভাব পড়েনি বলে দাবি স্থানীয়দের।
জম্মু-কাশ্মীরের পর্যটন দফতরের দাবি, গত বছরের এই সময়কালের তলনায় পহেলগামে ৭০ শতাংশ কম পর্যটক গিয়েছেন। গুলমার্গের এক অতিথিশালার মালিক মুখতার দারজির মতে, ‘‘বছরের এই সময়টাই আমাদের সবচেয়ে কর্মব্যস্ত থাকার কথা। কিন্তু সপ্তাহের পরে সপ্তাহ জুড়ে কেবল বুকিং বাতিল হয়ে যাচ্ছে। অমরনাথ যাত্রীরাও শহরে থাকছেন না। যে দিন পৌঁছচ্ছেন সে দিনই চলে যাচ্ছেন।’’
হামলার পরে ১০০তম দিন আজ। কিন্তু কাশ্মীরে কোথাও মোমবাতি মিছিল, নিহতদের স্মরণে সরকারি অনুষ্ঠান, জনসভা নেই। মানসিক যন্ত্রণা রূপ নিয়েছে নৈঃশব্দ্যের।
তবে তার পিছনেও রয়েছে একটি শক্তিশালী বার্তা। শ্রীনগরের লাল চকের কাছে দাঁড়িয়ে ফল ব্যবসায়ী আব্দুল রহমান বলছেন, ‘‘আমরা অনেক কিছু দেখেছি। এখন কেবল শান্তিতে থাকতে চাই। সেটা কি খুব বেশি চাওয়া?’’
এই খবরটি পড়ার জন্য সাবস্ক্রাইব করুন
5,148
1,999
429
169
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)