Advertisement
E-Paper

জঙ্গি-কবলে কাশ্মীরের হস্টেল, চলছে লড়াই

উরি, বারামুলা, হান্দোয়ারার পরে পাম্পোর। আজ ভোরে শ্রীনগর থেকে পনেরো কিলোমিটার দূরে পাম্পোরের এক সরকারি প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে শুরু হয়েছে জঙ্গি তাণ্ডব। সংঘর্ষে ইতিমধ্যেই আহত হয়েছেন দুই সেনা।

সাবির ইবন ইউসুফ

শেষ আপডেট: ১১ অক্টোবর ২০১৬ ০১:৩৩
শত্রুর খোঁজে সেনা। সোমবার কাশ্মীরের পাম্পোরে। ছবি: পিটিআই।

শত্রুর খোঁজে সেনা। সোমবার কাশ্মীরের পাম্পোরে। ছবি: পিটিআই।

উরি, বারামুলা, হান্দোয়ারার পরে পাম্পোর। আজ ভোরে শ্রীনগর থেকে পনেরো কিলোমিটার দূরে পাম্পোরের এক সরকারি প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে শুরু হয়েছে জঙ্গি তাণ্ডব। সংঘর্ষে ইতিমধ্যেই আহত হয়েছেন দুই সেনা। নিরাপত্তাবাহিনীর ধারণা, বিশাল ওই প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে লুকিয়ে থাকা ফিদায়েঁ জঙ্গিদের নিকেশ করতে কয়েক দিন সময় লাগতে পারে। ফেব্রুয়ারি মাসে ওই প্রশিক্ষণ কেন্দ্রেই জঙ্গিদের সঙ্গে ৪৮ ঘণ্টা গুলির লড়াই হয়েছিল সেনা, সিআরপিএফ ও পুলিশের যৌথ বাহিনীর।

এ দিন ভোরে পাম্পোরের ‘জম্মু-কাশ্মীর এন্টারপ্রেনারশিপ ডেভেলপমেন্ট ইনস্টিটিউট’-এর হস্টেলের উপরের তলা থেকে ধোঁয়া বেরোতে দেখেন এক কর্মী। তিনি ওই ইনস্টিটিউটের মূল ভবন ও হস্টেলের মাঝের একটি বাড়িতে থাকেন। তখনই পাম্পোর থানার ওসিকে ফোন করে দমকলে খবর দিতে বলেন ওই কর্মী। কিন্তু হস্টেলের উপরের তলায় পৌঁছে তিনি দেখতে পান, দরজা সোফা, আলমারি দিয়ে আটকে রাখা হয়েছে। ওই কর্মীর কথায়, ‘‘তখনই বুঝতে পারি কেউ ইচ্ছে করে আগুন লাগিয়েছে। নীচে নামতে নামতেই জঙ্গিরা আমাকে লক্ষ করে কয়েকটি গুলি ছোড়ে।’’

নীচে এসেই ফের পুলিশকে ফোন করেন ওই কর্মী। জানান, জঙ্গিরা প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে ঢুকে পড়েছে। তার পরে খবর দেন প্রতিষ্ঠানের অধিকর্তা এম আই প্যারেকে। সকাল সাড়ে ছ’টা নাগাদ প্যারেও এসে পৌঁছে যান প্রতিষ্ঠানের ক্যাম্পাসে। তার পরে আসে সেনা, আধাসেনা ও পুলিশের বিশাল বাহিনী। প্যারে ও উপস্থিত বাকিদের ক্যাম্পাস ছেড়ে চলে যেতে বলেন সেনা অফিসাররা। শুরু হয় জঙ্গি দমন অভিযান।

ফেব্রুয়ারি মাসে সিআরপিএফ ও পুলিশের একটি দলের উপরে হামলা চালিয়ে ওই প্রতিষ্ঠানেরই মূল ভবনে আশ্রয় নিয়েছিল তিন জঙ্গি। সংঘর্ষে ওই তিন জঙ্গি ও এক স্থানীয় বাসিন্দা-সহ সাত জন নিহত হন।

সেনা অফিসাররা জানাচ্ছেন, ওই প্রতিষ্ঠানের বিশাল ক্যাম্পাসে লুকিয়ে হামলা চালানো সহজ। ফেব্রুয়ারির হামলায় শেষ পর্যন্ত সেনাকে ভারি অস্ত্র ব্যবহার করতে হয়েছিল। তাতে ক্ষতি হয়েছিল ভবনের। এ বার বাহিনীকে টেনে আনার জন্যই ফিদায়েঁ জঙ্গিরা আগুন জ্বালিয়েছিল বলে মনে করছেন সেনা গোয়েন্দারা। জওয়ানরা এলেই উপর থেকে সহজে হামলা করা যাবে বলে ভেবেছে তারা।

চলতি সংঘর্ষে ইতিমধ্যেই দুই জওয়ান আহত হওয়ায় ঝুঁকি নিতে রাজি নয় যৌথ বাহিনী। তাই আপাতত গোটা ক্যাম্পাস ঘিরে রেখেছেন জওয়ানরা। থেমে থেমে লড়াইয়ের ফলে জঙ্গিদের গুলি শেষ হয়ে যাওয়ার জন্য অপেক্ষা করছেন তাঁরা। গোয়েন্দাদের মতে, অন্তত দু’জন জঙ্গি হস্টেলে লুকিয়ে রয়েছে। তাদের মধ্যে এক জন কাশ্মীরি হতে পারে। সম্প্রতি জঙ্গিদের কথাবার্তায় আড়ি পেতে ওই এলাকায় হামলার সম্ভাবনার কথা জানা গিয়েছিল। হামলাকারীদের মধ্যে কয়েক জন স্থানীয় কাশ্মীরি যুবক থাকতে পারে বলেও ইঙ্গিত পান গোয়েন্দারা।

‘এন্টারপ্রেনারশিপ ডেভেলপমেন্ট ইনস্টিটিউট’-এর কাছেই বাদামিবাগ সেনা ক্যান্টনেমেন্ট। সেখানেও ফিদায়েঁ হামলা হতে পারে বলে আগে আশঙ্কা প্রকাশ করেছিলেন গোয়েন্দারা।

গোয়েন্দাদের ধারণা, আজ ভোরে নৌকোয় ঝিলম নদী বেয়ে ওই প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে পৌঁছয় জঙ্গিরা। বারামুলার সেনা ছাউনিতে সাম্প্রতিক হামলার সময়েও জঙ্গিরা ঝিলম বেয়ে এসেছিল বলে জানিয়েছিলেন গোয়েন্দারা।

পাক-অধিকৃত কাশ্মীরে ভারতীয় সেনার সার্জিক্যাল স্ট্রাইকের পরেও ভূস্বর্গে জঙ্গি হানা থামার লক্ষণ নেই। বরং ভারতকে জবাব দিতে বিভিন্ন জঙ্গি সংগঠন ও পাক সেনা-আইএসআই মরিয়া হয়ে উঠেছে বলে মনে করছেন ভারতীয় গোয়েন্দারা।

কাশ্মীরে সাম্প্রতিক অশান্তির সময়ে বিভিন্ন এলাকায় আইনশৃঙ্খলা প্রায় ভেঙে পড়েছিল। সেই সময়ে বিপুল জঙ্গি অনুপ্রবেশ হয়েছে বলে জানতে পেরেছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক। বাহিনীর অনুপস্থিতির সুযোগে তারা সহজেই ছড়িয়ে পড়েছে ভূস্বর্গের নানা এলাকায়। সক্রিয় হয়ে উঠেছে আইএসআইয়ের বিভিন্ন স্লিপার সেলও। গোয়েন্দারা জানাচ্ছেন, সার্জিক্যাল স্ট্রাইকের পরে কাশ্মীরে ইতিমধ্যেই ছ়ড়িয়ে থাকা জঙ্গিদের যেখানে সম্ভব সেখানেই হামলা চালানোর নির্দেশ দিয়েছে আইএসআই। ফলে আরও হানার জন্য তৈরি থাকতে হবে।

Kasmir Terrorists Militants Strike
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy