দিনের বেলায় কোনও গ্রামে গিয়ে প্রকল্প উদ্বোধন করে কনভয় নিয়ে ফিরে আসা নয়। এ বার সাধারণ মানুষের সমস্যা শুনতে গ্রামে গিয়ে রাত কাটাতে হবে মন্ত্রীদের। রাতভর সাধারণ মানুষের সঙ্গে কথা বলে সরাসরি শুনবেন তাঁদের জীবনের সমস্যা, গ্রামের সমস্যা। এরপর সেই সব সমস্যার সুরাহার চেষ্টা করা হবে। অভিনব গ্রাম-অভিযানে উদ্যোগী হয়েছেন ঝাড়খণ্ডের মুখ্যমন্ত্রী রঘুবর দাস। শুধু তাঁর মন্ত্রীরা নন, এই গ্রাম-অভিযানে সামিল হবেন স্বয়ং মুখ্যমন্ত্রীও। রাজ্যের বিজেপি-বিরোধীরা এই অভিযানকে ‘চমক’ আখ্যা দিয়েছেন। কংগ্রেস তো বিজেপি-র বিরুদ্ধে রাহুলকে ‘কপি’ করার অভিযোগও করেছেন।
দিল্লিতে বিজেপি সরকার ক্ষমতায় আসার পরেই প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী ঘোষণা করেছিলেন, দেশের উন্নতি শুরু করতে হবে গ্রাম থেকে। গ্রামের উন্নয়নের জন্য ‘সাংসদ আদর্শ গ্রাম যোজনা’ প্রকল্প চালু করেন প্রধানমন্ত্রী। প্রত্যেক সাংসদকে একটি করে গ্রাম দত্তক নেওয়ার কথা বলেছিলেন তিনি। প্রধানমন্ত্রী নিজেও বারাণসীর কাছে জয়পুর গ্রামটি দত্তক নিয়েছেন। ঝাড়খন্ডের মুখ্যমন্ত্রীর সচিবালয় থেকে জানা গিয়েছে, প্রধানমন্ত্রীর পথেই মুখ্যমন্ত্রী রঘুবর দাস হাঁটতে চাইছেন।
মুখ্যমন্ত্রীর সচিবালয় সূত্রে জানা গিয়েছে, মুখ্যমন্ত্রী রঘুবর দাস আগামী ২৩ মে বীরভূম লাগোয়া দুমকা জেলার মলুটিতে রাত কাটাবেন। ২৩ তারিখ সকালে রাঁচি থেকে তিনি দুমকা পৌঁছবেন। সেখান থেকে সন্ধ্যায় সড়ক পথে চলে যাবেন মলুটি। রাতে তিনি গ্রামেরই পঞ্চায়েত ভবনে থাকবেন। কথা বলবেন গ্রাম পঞ্চায়েতের সদস্য, গ্রাম প্রধান-সহ গ্রামের মানুষদের সঙ্গে। শুনবেন তাঁদের অভাব-অভিযোগ। মুখ্যমন্ত্রীর রাজনৈতিক পরামর্শদাতা অজয় কুমার বলেন, ‘‘কোনও ভায়া-মিডিয়া নয়, সাধারণ মানুষের সঙ্গে সরাসরি কথা বলে সমস্যার কথা শুনতে চাইছেন মুখ্যমন্ত্রী। শুধু মুখ্যমন্ত্রী নন তাঁর মন্ত্রিসভার সব সদস্যই কোনও না কোনও গ্রামে রাত কাটাবেন। এবং এটা শুধু আগামী ২৩ তারিখই নয়, মাঝে মধ্যেই গ্রামে রাত কাটানোর এই অভিযান চলতেই থাকবে।’’
মুখ্যমন্ত্রী ছাড়া অন্যা যে সব মন্ত্রীরা আগামী কয়েকদিনের মধ্যে গ্রামে রাত কাটাতে যাচ্ছেন, তাঁদের মধ্যে রয়েছেন সমাজকল্যাণ মন্ত্রী লুইস মারান্ডিও। তিনি আজই গওনা হয়ে গিয়েছেন হাজারিবাগের কাঞ্চনপুর নামে একটি গ্রামে। যাওয়ার আগে লুইসদেবী বলেন, ‘‘অনেক সময় গ্রামের জন্য আমাদের সরকারের নানা প্রকল্প সাধারণ মানুষ পর্যন্ত পৌঁছয় না। সরাসরি গ্রামের মানুষের সঙ্গে কথা বললেই আসল সত্যটা সামনে আসবে। তাঁদের সঙ্গে কথা বলতেই গ্রামে রাত কাটানো।’’ কিন্তু, প্রশ্ন উঠেছে রাতে কেন? দিনের বেলাতেও তো গ্রামে গিয়ে গ্রামের মানুষের সমস্যা শোনা যায়! লুইসদেবী বলেন, ‘‘দিনের বেলা গ্রামের মানুষ রুজি রুটির জন্য ব্যস্ত থাকেন। সবাই হয়তো আসতে পারবেন না। তা ছাড়া প্রত্যন্ত গ্রামে রাতের পরিকাঠামো আমরা সরাসরি, নিজের চোখে দেখতে চাই।’’
গ্রামে রাত কাটানোর এই অভিযান সম্পর্কে ঝাড়খণ্ডের কংগ্রেস নেতা দীপিকা সিংহ পাণ্ডের কটাক্ষ, ‘‘পুরোটাই গিমিক। মন্ত্রীরা মিডিয়ায় ছবি ওঠানোর জন্য এ সব করছে। এতে গ্রামের মানুষের সমস্যার সমাধান হবে না।’’ তাঁর বক্তব্য, ‘‘গ্রামে সময় কাটানো তো আমাদের রাহুলজি শুরু করেছেন। তিনি পথ দেখিয়েছেন, ওরা কপি করছে। আর সদিচ্ছা থাকলে এটা দিনের বেলাতেও করা যায়।’’ ঝাড়খন্ড মুক্তি মোর্চার মহাসচিব সুপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেন, ‘‘ওদের কিছুরই স্থিরতা নেই। ওরা জনতার দরবার করল পার্টি অফিসে বসে। তারপর বন্ধ হয়ে গেল। সরকারি অর্থের অপচয় ঘটিয়ে গ্রামে মন্ত্রীরা শরীর-স্বাস্থ্য ভাল করতে যাচ্ছেন।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy