Advertisement
০৫ মে ২০২৪
Mizoram Election Campaign

ভোটের আগে সিনেমা অস্ত্র জ়োরামথাঙ্গার

মিজোরামের ভোট মানে প্রচারের বালাই নেই, নেই মাইক, স্লোগান, মিটিং-মিছিল। এ হেন শান্তি-শৃঙ্খলার রাজ্যে কীনা ভোটের মুখে বিরোধীদের উপরে শাসকদলের 'অ্যাম্বুশ' !

Mizoram Chief Minister Zoramthanga using cinema for election campaign

'অ্যাম্বুশ' ছবির পোস্টার। ছবি: সংগৃহীত।

রাজীবাক্ষ রক্ষিত
গুয়াহাটি শেষ আপডেট: ১১ অক্টোবর ২০২৩ ১৩:২৯
Share: Save:

নদী বেয়ে আসছে পাক-পতাকা ওড়ানো নৌকো। তা দেখেই পারে দাঁড়ানো মিজোরা হাততালি দিয়ে উঠলেন।

থরে-থরে রাইফেল, মেশিনগান মিজো গেরিলাদের হাতে তুলে দিয়ে পাক সেনাকর্তা বলেন, "এ বার ভারতীয়দের ওদের দাওয়াইতেই শিক্ষা দাও।"

মিজো জঙ্গি নেতার জবাব, "আমরা ইঁদুর নই, মুণ্ডশিকারি।"

১৯৬৬ সালের, ২৮ ফেব্রুয়ারি। স্বাধীন মিজোরামের কথা ঘোষণা করলেন লালডেঙ্গা। এর পর কখনও মিজো গ্রামে ভারতীয় পুলিশের অত্যাচার, কখনও জঙ্গল-যু্দ্ধ।

মিজোরামের ভোট মানে প্রচারের বালাই নেই, নেই মাইক, স্লোগান, মিটিং-মিছিল। এ হেন শান্তি-শৃঙ্খলার রাজ্যে কীনা ভোটের মুখে বিরোধীদের উপরে শাসকদলের 'অ্যাম্বুশ' !

আক্ষরিক অর্থেই। মুখ্যমন্ত্রী জোরামথাঙ্গা নিজেদের জঙ্গি আন্দোলন নিয়ে তৈরি সিনেমার আনুষ্ঠানিক রিলিজ সেরে ফেললেন। নাম অ্যাম্বুশ। সেখানেই পরতে পরতে দেখানো হয়েছে লালডেঙ্গার তৈরি এমএনএফের বীরগাথা।

Mizoram Chief Minister Zoramthanga using cinema for election campaign

মিজ়োরামের মুখ্যমন্ত্রী জোরামথাঙ্গা। —নিজস্ব চিত্র।

ভারতের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণার পরে লাল-জোরামরা পাকিস্তানের সঙ্গে হাত মিলিয়েছিলেন। পাক কমান্ডোদের সঙ্গে ভারতীয় বাহিনীর হাতে ধরা পড়লেও, আরাকানের জঙ্গল হয়ে পালান তাঁরা। পরে যান চিনে। সেখানে প্রশিক্ষণ নিয়ে ফিরে, পাকিস্তান ও চিনের অস্ত্রের বলে বলীয়ান হয়ে ভারতের বিরুদ্ধে বিশ বছর লড়েছিলেন জোরামরা। সেই রোমহর্ষক কাহিনী নিজের আত্মজীবনীতেও লিখেছেন জোরাম। অবশ্য অ্যাম্বুশ ছবির কাহিনীকার জ়ারজ়োসাঙ্গা, পরিচালক মাপুই চোংথু।

ছবিতে ভারত বিরোধী এত ঘটনা রয়েছে, যে মিজোরামের বাইরে দেখানো হলে নির্ঘাৎ বিতর্ক হত।

জোরাম অবশ্য বলছেন, সব চরিত্র কাল্পনিক। আর পরিচালক সিনেমার স্বাধীনতার দোহাই দিচ্ছেন। অবশ্য, স্মার্ট মেকিং, জ্বালাময়ী সংলাপ, ভাল অভিনয়ে অ্যাম্বুশ ইতিমধ্যে সকলের মন কাড়ছে।

তাঁর কথায়, "বিরোধীদের আমার বা এমএনএফের বিরুদ্ধে বলার মতো কোনও বিষয়ই নেই। ভোট যুদ্ধে কার্যত নিরস্ত্র বিরোধীরা শুধুই পরীক্ষামূলকভাবে তাদের একটিবার সুযোগ দেওয়ার অনুরোধ জানিয়ে ভোট চাইছে। উল্টো দিকে আমরা ১৯৬৬ থেকে ২০ বছর স্বাধীন মিজোরামের জন্য লড়েছি, পৃথক রাজ্য গঠন আমাদের জন্যেই সম্ভব হয়েছে। মিজোদের জন্য এত ঘাম, রক্ত আর কেউ ঝরায়নি।"

এক দিকে মায়ানমার ও মণিপুরে চলা সংঘর্ষের জেরে মিজোরামে আশ্রয় নেওয়া শরণার্থীদের বুকে টেনে জো-চিন-কুকিদের 'মসিহা' হিসেবে নিজেকে তুলে ধরছেন জোরাম, এ নিয়ে কেন্দ্রের চোখ রাঙানির তোয়াক্কা না করে নিজের বিপ্লবী সত্তাও উস্কে দিচ্ছেন। অন্য দিকে, মিজো আন্দোলনের স্মৃতি টাটকা করা সিনেমা চলছে হলে। সব মিলিয়ে, নিজের জায়গা পোক্ত করে ফেলছেন জোরাম।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE