Advertisement
E-Paper

কলাইনারের হাতে গড়া স্ট্যালিনের হাতে ব্যাটন

তিন জন স্ত্রী, ছ’জন পুত্রকন্যা এবং ছ’জন নাতি-নাতনির এই বিশাল সংসারের মধ্যে স্ট্যালিনকেই কার্যত তাঁর উত্তরসূরি হিসেবে বেছে নিয়েছিলেন করুণানিধি। বিশেষ করে এমন একটা সময়ে, যখন হইহই করে উঠে আসছিলেন স্ট্যালিনের মায়ের পেটের ভাই আলাগিরি। কিন্তু কেন?

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ০৯ অগস্ট ২০১৮ ০৪:২৮
আবেগঘন: করুণানিধির শেষকৃত্য নিয়ে হাইকোর্টের রায় শোনার পরে প্রথম বার কান্নায় ভেঙে পড়লেন স্ট্যালিন। সান্ত্বনা দিচ্ছেন বোন কানিমোঝি। ছবি: পিটিআই।

আবেগঘন: করুণানিধির শেষকৃত্য নিয়ে হাইকোর্টের রায় শোনার পরে প্রথম বার কান্নায় ভেঙে পড়লেন স্ট্যালিন। সান্ত্বনা দিচ্ছেন বোন কানিমোঝি। ছবি: পিটিআই।

দু’বছর আগে তামিলনাড়ুর বিধানসভা ভোটের আগে একটি বিশেষ ডিজাইনার বাসের ব্যবস্থা হয়েছিল করুণানিধির প্রচারের জন্য। সেখানে ছিল বিশেষ প্রযুক্তির আরামদায়ক সোফা যা কিনা হুইলচেয়ারের কাজও করত। তাঁর স্বাস্থ্য এবং বয়সের কথা মাথায় রেখেই এই বিশেষ বাসটি তৈরি করিয়েছিলেন পুত্র এম কে স্ট্যালিন। গোটা প্রচারে যিনি ছিলেন বাবার ছায়াসঙ্গী।

দ্রাবিড় রাজনীতির প্রধানতম এই পরিবারটির উত্তরাধিকার তৈরি হয়ে গিয়েছিল আগেই। করুণানিধির মৃত্যুর পর যা স্থায়ী ভাবে প্রতিষ্ঠিত হতে চলেছে বলেই মনে করছেন রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞরা। তিন জন স্ত্রী, ছ’জন পুত্রকন্যা এবং ছ’জন নাতি-নাতনির এই বিশাল সংসারের মধ্যে স্ট্যালিনকেই কার্যত তাঁর উত্তরসূরি হিসেবে বেছে নিয়েছিলেন করুণানিধি। বিশেষ করে এমন একটা সময়ে, যখন হইহই করে উঠে আসছিলেন স্ট্যালিনের মায়ের পেটের ভাই আলাগিরি। কিন্তু কেন?

তামিল রাজনীতির লোকজন জানাচ্ছেন, সাড়া জাগিয়ে শুরু করেও শেষ পর্যন্ত অনেকটাই পিছিয়ে গিয়েছেন আলাগিরি। তাঁর রগচটা বেপরোয়া ভাবমূর্তির জন্য। অন্য দিকে স্বভাব শান্ত, ভারসাম্যের রাজনীতিতে বিশ্বাসী (যা নাকি তিনি উত্তরাধিকার সূত্রে পেয়েছেন বাবার কাছ থেকে) স্ট্যালিন ক্রমশ প্রভাব বাড়িয়েছেন দলীয় সংগঠনের অভ্যন্তরে। গত বছর এডিএমকে নেত্রী জয়ললিতার মৃত্যুর পর চেন্নাইয়ের আর কে নগর কেন্দ্রে লড়াই করে তৃতীয় স্থানে নেমে যাওয়ার পর আলাগিরি প্রকাশ্যেই তোপ দেগেছিলেন স্ট্যালিনের দিকে। ওই ভোটের দায়িত্বে ছিলেন স্ট্যালিন। আলাগিরির বক্তব্য ছিল, শুধু আর কে নগর নয়, স্ট্যালিন থাকলে কোথাও আর জিততে পারবে না ডিএমকে।

কিন্তু ঘটনা হল, এতে বিন্দুমাত্র আসন টলেনি স্ট্যালিনের। তাঁর উপর বাবার ভরসাও কমেনি। তত দিনে বেপরোয়া মেজাজের জন্য অপ্রিয় হতে শুরু করেছেন আলাগিরি। দক্ষিণ তামিলনাড়ুর স্ট্রংম্যান হিসেবে পরিচিত আলাগিরি এবং তাঁর দলবল মতবিরোধের কারণে তামিল দৈনিক দিনকরণের মাদুরাই অফিস ভাঙচুর করে বিতর্ক বাড়ায়। এটির মালিক আলাগিরিদের আত্মীয় মারান পরিবার)। অন্য দিকে করুণানিধির ছায়াসঙ্গী হয়ে উঠছিলেন মিতভাষী স্ট্যালিন। হয়ে উঠছিলেন ডিএমকে নেতাদের কাছের মানুষ। করুণানিধির প্রিয় কন্যা কানিমোঝিকে মূলত সামলাতে দেখা গিয়েছে নয়াদিল্লি এবং সংসদীয় রাজনীতি। স্ট্যালিন তাঁর শাখা বিস্তার করেছেন রাজ্যে। দক্ষিণ চেন্নাইয়ের জেলা সচিব এবং প্রাক্তন মেয়র এম সুব্রহ্মণ্যন বলছেন, ‘‘কলাইনারের বিকল্প হয় না। তবে একটা স্বস্তির কথা যে স্বয়ং তিনি স্ট্যালিনকে নিজের রাজনৈতিক উত্তরসূরি বানিয়ে গিয়েছেন।’’

আরও পড়ুন: কবিতায় স্ট্যালিন, বচ্চনের টুইট-বার্তা

করুণানিধি প্রথমে স্ট্যালিনকে চেন্নাইয়ের মেয়র এবং পরে নিজের মন্ত্রিসভায় অর্ন্তভুক্ত করেছিলেন। স্ট্যালিনই প্রথম উপমুখ্যমন্ত্রীও হন রাজ্যের। করুণানিধির মৃত্যুর পর তাই দলে ভাঙন ধরার কোনও সম্ভাবনা দেখছেন না দক্ষিণের রাজনীতির লোকজন।
রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞ এ মার্ক্স-এর মতে, ‘‘গত পাঁচ বছর ধরে ধীরে ধীরে স্ট্যালিনকে গড়েছেন করুণানিধি। নিজেও স্ট্যালিন অনেক পরিণত হয়েছেন, অতীতের ভুলত্রুটি থেকে শিক্ষা নিয়েছেন। দলে এখন তাঁর গ্রহণযোগ্যতা প্রশ্নাতীত।’’ দলের কার্যনির্বাহী সভাপতি হিসেবে দীর্ঘদিন কাজ করছেন তিনি। করুণানিধির সাময়িক অনুপস্থিতির সময়ে অনেক কঠিন সিদ্ধান্তও নিয়েছেন। বাবার অবর্তমানে দলের ব্যাটন স্ট্যালিনের হাতেই উঠতে চলেছে বলে মনে করছেন দ্রাবিড় রাজনীতির লোকজন।

কাশ্মীর থেকে কন্যাকুমারী, গুজরাত থেকে মণিপুর - দেশের সব রাজ্যের গুরুত্বপূর্ণ খবর জানতে আমাদের দেশ বিভাগে ক্লিক করুন।

MK Stalin M Karunanidhi DMK এম কে স্ট্যালিন করুণানিধি Tamilnadu
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy