এক লক্ষ টাকা পর্যন্ত বেতনের প্রথম বার চাকরিতে নরেন্দ্র মোদী সরকার কর্মীদের ১৫ হাজার টাকা পর্যন্ত উৎসাহ ভাতা দেবে। বেসরকারি সংস্থা বাড়তি নিয়োগ করলে তাদের প্রতি মাসে ৩ হাজার টাকা পর্যন্ত উৎসাহ ভাতা দেওয়া হবে। কর্মহীন তরুণদের জন্য নতুন চাকরি তৈরি করতে আজ কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভা ‘কর্মসংস্থান ভিত্তিক উৎসাহ ভাতা’প্রকল্প ঘোষণা করেছে। প্রায় ১ লক্ষটাকার এই প্রকল্পে দু’বছরে অন্তত সাড়ে ৩ কোটি কর্মসংস্থান তৈরি হবে। একই সঙ্গে কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভা পরিবেশবন্ধু জ্বালানি থেকে রোবোটিক্স, কৃত্রিম মেধার মতো উদীয়মান ও কৌশলগত ক্ষেত্রে গবেষণা, উন্নয়ন ও উদ্ভাবনের জন্য ১ লক্ষ কোটি টাকার তহবিলও মঞ্জুর করেছে। এই প্রকল্পেও বাজারের জন্য তরুণদের উদ্ভাবনী ভাবনা তৈরি করায় উৎসাহ দেওয়া হবে।
গত লোকসভা নির্বাচনে বেকারত্ব নিয়ে বিরোধীদের আক্রমণ মোদী সরকারের গলার কাঁটা হয়ে উঠেছিল। তৃতীয়বার ক্ষমতায় এসেই তাই মোদী সরকার কর্মসংস্থান তৈরির চেষ্টা শুরু করেছে। গত বছরের বাজেটে পিএম-ইনটার্নশিপ প্রকল্প ও কর্মসংস্থান ভিত্তিক উৎসাহ ভাতা প্রকল্প ঘোষণা হয়েছিল। আজ কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভা সেই প্রকল্পেই সিলমোহর দিয়েছে। এর ফলে মূলত কারখানা উৎপাদন এবং অন্যান্য ক্ষেত্রে তরুণদের প্রথম পাকা চাকরি পেতে সুবিধা হবে বলে সরকার আশা করছে। প্রভিডেন্ট ফান্ডের খাতায় প্রথম বার নাম যোগ হওয়াকেই নতুন চাকরি হিসেবে ধরা হবে। ফলে এই প্রকল্পে কর্মীরা অসংগঠিত ক্ষেত্র থেকে সংগঠিত ক্ষেত্রে এসে সামাজিক সুরক্ষার সুবিধাও পাবেন।
কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, উৎসাহ ভাতা প্রকল্পের দু’টি ভাগ রয়েছে। প্রথম ভাগ অনুযায়ী, প্রথম বার চাকরি পেয়ে কোনও কর্মীর নাম প্রভিডেন্ট ফান্ডের খাতায় যোগ হলে, তাঁকে ইপিএফ-র ন্যূনতম বেতন অনুযায়ী এক মাসের বেতন বা ১৫ হাজার টাকা দেওয়া হবে। মাসে ১ লক্ষ টাকা পর্যন্ত বেতনের কর্মীরাই এই সুবিধা পাবেন। এই টাকা মিলবে দুই কিস্তিতে। প্রথম কিস্তি মিলবে ৬ মাস চাকরি করার পরে। এক বছর চাকরি করার পরে ও সঞ্চয়ের বিষয়ে ওয়াকিবহাল হওয়ার জন্য আর্থিক সাক্ষরতার কোর্স শেষ করলে দ্বিতীয় কিস্তি মিলবে। কর্মীদের মধ্যে সঞ্চয়ের অভ্যাস তৈরি করতে উৎসাহ ভাতার কিছুটা অর্থ নির্দিষ্ট সময়ের জন্য কোনও সঞ্চয় প্রকল্পে জমা করা হবে। এর মাধ্যমে ১ কোটি ৯২ লক্ষ কর্মী উপকৃত হবে বলে মোদী সরকারের দাবি।
প্রকল্পের দ্বিতীয় ভাগে, কোনও বেসরকারি সংস্থা নতুন কর্মী নিয়োগ করলে দু’বছর পর্যন্ত প্রতি কর্মীর জন্য মাসে ৩ হাজার টাকা পর্যন্ত উৎসাহ ভাতা পাবে। কারখানার উৎপাদন ক্ষেত্রে চার বছর এই সুবিধা মিলবে। এক লক্ষ টাকা পর্যন্ত বেতনের কর্মীদের ক্ষেত্রেই এই সুবিধা মিলবে। যে সব সংস্থায় কর্মী সংখ্যা ৫০-এর কম, তাদের অন্তত ২ জন কর্মী নিয়োগ করতে হবে। ৫০-এর বেশি কর্মী থাকলে অন্তত ৫ জন নতুন কর্মী নিয়োগ করতে হবে। কর্মী বা সংস্থা ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টের মাধ্যমে উৎসাহ ভাতার টাকা দেওয়া হবে।
কোভিডের সময়েও নতুন কর্মসংস্থানে উৎসাহ দিতে মোদী সরকার ‘আত্মনির্ভর ভারত রোজগার যোজনা’ নামের প্রায় একই রকম উৎসাহ ভাতা প্রকল্প চালু করেছিল। তার সাফল্যের ভিত্তিতে নতুন প্রকল্প তৈরি হয়েছে বলে কেন্দ্রীয় তথ্য-সম্প্রচার মন্ত্রী অশ্বিনী বৈষ্ণবের দাবি। বণিকসভা সিআইআই-এর ডিরেক্টর জেনারেল চন্দ্রজিৎ বন্দ্যোপাধ্যায়ের মতে, ‘‘এই প্রকল্পের ফলে বেসরকারি সংস্থাগুলির কর্মী সংখ্যা বাড়ানোর ক্ষমতা বাড়বে। শ্রমনিবিড় ক্ষেত্র উপকৃত হবে।’’ বণিকসভা ফিকি-র সভাপতি হর্ষবর্ধন আগরওয়ালের মতে, এই প্রকল্পের ফলে ক্ষুদ্র-ছোট-মাঝারি শিল্প ও তরুণ কর্মীরা সবথেকে বেশি লাভবান হবেন।
এই খবরটি পড়ার জন্য সাবস্ক্রাইব করুন
5,148
1,999
429
169
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)