Advertisement
E-Paper

রাফাল তদন্ত ঠেকাতে কেন্দ্রের ঢাল এফ-১৬

বায়ুসেনা জানিয়েছে, ভারতের সামরিক পরিকাঠামো ধ্বংসের লক্ষ্যে পাকিস্তান এফ-১৬ পাঠিয়েছিল গত ২৭ ফেব্রুয়ারি।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ০৭ মার্চ ২০১৯ ০৩:২৩
রাফাল নথি চুরির অভিযোগ নিয়ে সোশ্যাল মিডিয়ায় ছড়িয়েছে এই ধরনেরই রঙ্গচিত্র।

রাফাল নথি চুরির অভিযোগ নিয়ে সোশ্যাল মিডিয়ায় ছড়িয়েছে এই ধরনেরই রঙ্গচিত্র।

রাফাল চুক্তি নিয়ে তদন্ত ঠেকাতে এফ-১৬ পাঠিয়ে হামলার পাক চেষ্টাকে এ বার হাতিয়ার করল মোদী সরকার। কিন্তু জাতীয় সুরক্ষার দোহাই দিতে গিয়ে বিচারপতিদের কাছে উল্টে খোঁচাই খেতে হল মোদী সরকারকে।

প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী কয়েক দিন আগে বলেছেন, ‘‘রাফাল হাতে থাকলে বালাকোটে জইশ-শিবিরে বায়ুসেনার হামলায় আরও ভাল ফল মিলত।’’ আজ সুপ্রিম কোর্টে রাফাল রায়ের পুনর্বিবেচনার আর্জি নিয়ে শুনানিতে কেন্দ্রের অ্যাটর্নি জেনারল কে কে বেণুগোপাল কার্যত সেই সুরেই যুক্তি দেন রাফাল চুক্তি নিয়ে তদন্ত ঠেকাতে। তাঁর প্রশ্ন, ‘‘কী ভাবে আমরা রাফাল ছাড়া পাকিস্তানের এফ-১৬ যুদ্ধবিমানের মোকাবিলা করব?’’

বায়ুসেনা জানিয়েছে, ভারতের সামরিক পরিকাঠামো ধ্বংসের লক্ষ্যে পাকিস্তান এফ-১৬ পাঠিয়েছিল গত ২৭ ফেব্রুয়ারি। সেই প্রসঙ্গ তুলে বেণগোপাল শীর্ষ আদালতে বলেন, ‘‘সাম্প্রতিক ঘটনাতেই স্পষ্ট, আমরা কতটা ঝুঁকির মধ্যে রয়েছি। অন্যদের অত্যাধুনিক এফ-১৬ রয়েছে। আমরা কি অত্যাধুনিক যুদ্ধবিমান কিনব না? রাফাল চুক্তিতে সিবিআই তদন্ত চাওয়ায় দেশের ক্ষতি হবে।’’

কংগ্রেসের অভিযোগ, ইউপিএ জমানার ঠিক হওয়া ১২৬টি রাফাল যুদ্ধবিমানের থেকে মোদী সরকারের ৩৬টি বিমানের দাম অনেক বেশি। রাফাল নিয়ে সোশ্যাল মিডিয়ায় রঙ্গচিত্র

প্রধান বিচারপতির বেঞ্চের অন্যতম সদস্য বিচারপতি কে এম জোসেফ বলেন, ‘‘যখন দুর্নীতির তদন্তের দাবিতে আর্জি নিয়ে ফয়সালা হচ্ছে, তখন জাতীয় নিরাপত্তার প্রশ্ন ওঠে না। বড় অপরাধ বা দুর্নীতির ক্ষেত্রেও কি আপনারা জাতীয় সুরক্ষার ছাতার তলায় আশ্রয় নেবেন?’’ বিচারপতি জোসেফ মনে করান, বফর্সেও দুর্নীতির অভিযোগ ওঠে। সেখানেও দেশের নিরাপত্তার প্রশ্ন ছিল। এ দেশের ব্যবস্থা অনেক খোলামেলা। কেন্দ্রের হয়ে বেণুগোপালের পাল্টা যুক্তি, কিছু বিষয় বিচার বিভাগের আওতার বাইরেই থাকা দরকার। যুদ্ধ বা শান্তির ঘোষণা করতে হলেও কি আদালতে এসে তার যুক্তি পেশ করতে হবে সরকারকে? প্রত্যেক বার কি আদালতের অনুমতি চাইতে হবে?

কংগ্রেসের অভিযোগ, ইউপিএ জমানার ঠিক হওয়া ১২৬টি রাফাল যুদ্ধবিমানের থেকে মোদী সরকারের ৩৬টি বিমানের দাম অনেক বেশি। সংসদ ও দেশকে মোদী মিথ্যা বলে কোষাগারের বোঝা বাড়িয়েছেন। নতুন নথি সামনে এনে কংগ্রেস আজ বলেছে, ভারতের ‘নেগোশিয়েশন টিম’ মোতাবেক রাফালের দাম ৬৩ হাজার ৪৫০ কোটি টাকা। মোদী সরকারের দাবি অনুযায়ী ৫৯ হাজার ১৭৫ কোটি টাকা নয়। শুধু তা-ই নয়, ফ্রান্সের মূল্যবৃদ্ধির হিসেবে ছয় বছরের কম সময় ধরা হয়েছে। অথচ বিমান আসবে দশ বছরে। ফলে মূল্যবৃদ্ধির হিসেব ধরলে দাম বেড়ে দাঁড়াবে ৬৭ হাজার ৫০০ কোটি টাকা। এর উপরে ভারতের চাহিদা মতো নির্দিষ্ট কিছু সরঞ্জাম যোগ হলে দাম গিয়ে দাঁড়াবে ৭০ হাজার ২৫০ কোটি টাকা।

কংগ্রেসের দাবি, এ থেকেই স্পষ্ট, প্রতিরক্ষা ও আইন মন্ত্রকের আপত্তি উপেক্ষা করেই প্রধানমন্ত্রী একতরফা দাম ঠিক করেছেন। সিএজি রিপোর্টেও আছে, ব্যাঙ্ক গ্যারান্টিতেও ফ্রান্সকে ছাড় দিয়েছে সরকার। রাখেনি প্রযুক্তি হস্তান্তরের শর্ত। ‘নেগোশিয়েশন টিম’-কে দর কষাকষিও করতে দেননি প্রধানমন্ত্রী। বরং তাঁর পছন্দের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা অজিত ডোভাল ২০১৬ সালের ১২-১৩ জানুয়ারি ফ্রান্সে গিয়ে চুক্তির খসড়া চূড়ান্ত করেন। এ কাজ করার এক্তিয়ারই তাঁর নেই। ডোভালের সফরের পরেই মোদী ফ্রান্সে গিয়ে রাফাল চুক্তি করেন।

সুপ্রিম কোর্টে কেন্দ্রের অ্যাটর্নি জেনারেলের যুক্তি, ষাটের দশকের মিগ-২১ ভাল লড়াই চালালেও রাফালের প্রয়োজন। না হলে কী ভাবে এফ-১৬ ঠেকানো যাবে? দ্রুত প্রয়োজন বলেই ৩৬টি রাফাল নিয়ে দর কষাকষি শুরু করতে হয়েছিল। সেপ্টেম্বরে প্রথম ব্যাচের রাফাল ভারতে চলে আসবে। ৫২ জন পাইলটকে ফ্রান্সে প্রশিক্ষণের জন্য পাঠানো হবে।

National Security Rafale F16
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy