Advertisement
২৫ এপ্রিল ২০২৪

জিএসটি নিয়ে রফার খোঁজে সনিয়া-মনমোহন চা-চক্রে ডাক মোদীর

প্রধানমন্ত্রী হওয়ার ১৮ মাস পর প্রথম বার দেশের প্রধান বিরোধী নেত্রীর সঙ্গে আনুষ্ঠানিক বৈঠকে বসতে চলেছেন নরেন্দ্র মোদী। শুক্রবার সন্ধ্যায় ৭ নম্বর রেসকোর্স রোডের বাসভাবনেই সনিয়া গাঁধীকে মোদী চা-চক্রে নিমন্ত্রণ করেছেন। সঙ্গে নিমন্ত্রিত প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংহও।

নিজস্ব সংবাদদাতা
নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ২৭ নভেম্বর ২০১৫ ১২:৫২
Share: Save:

প্রধানমন্ত্রী হওয়ার ১৮ মাস পর প্রথম বার দেশের প্রধান বিরোধী নেত্রীর সঙ্গে আনুষ্ঠানিক বৈঠকে বসতে চলেছেন নরেন্দ্র মোদী। শুক্রবার সন্ধ্যায় ৭ নম্বর রেসকোর্স রোডের বাসভাবনেই সনিয়া গাঁধীকে মোদী চা-চক্রে নিমন্ত্রণ করেছেন। সঙ্গে নিমন্ত্রিত প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংহও। পণ্য পরিষেবা কর (জিএসটি) বিল নিয়ে আলোচনার জন্যই মূলত এই চা-চক্রের আয়োজন। তবে, রাজনীতির আঙিনার চড়াই-উতরাই আর প্রধানমন্ত্রীর তরফে ভাবমূর্তি বদলের চেষ্টাও এই চা-চক্রের অন্যতম কারণ, বলছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা।

সংসদে জিএসটি বিল পাস করাতে কেন্দ্র এখন তৎপর। কিন্তু, নিজেদের শক্তিতে রাজ্যসভায় এই বিল পাস করানো বিজেপি তথা এনডিএ’র পক্ষে সম্ভব নয়। এর জন্য কংগ্রেসের সমর্থন খুব জরুরি। এ দিনের চা-চক্রে জিএসটি নিয়ে আলোচনার পর সনিয়ার কাছ থেকে সেই সমর্থনই আনুষ্ঠানিকভাবে চাইবেন মোদী। প্রধানমন্ত্রীর দফতর সূত্রে তেমনই খবর।

জিএসটি পাস করানোর তাগিদ কংগ্রেসের তরফেও রয়েছে। কারণ এই বিল কংগ্রেস নেতৃত্বাধীন ইউপিএ সরকারের আমলেই প্রথমে আনা হয়েছিল। কিছু অদলবদল ঘটিয়ে সেই জিএসটি বিলই এখন পাস করাতে চাইছেন নরেন্দ্র মোদী। সেখানেই আপত্তি কংগ্রেসের। রাহুল গাঁধী ইতিমধ্যেই বলেছেন, জিএসটি বিলের তিনটি বিষয় নিয়ে কংগ্রেসের আপত্তি রয়েছে। সেগুলি মেনে নিলে কংগ্রেস এই বিলে সমর্থন দিতে প্রস্তুত। কিন্তু, তার জন্য সরকারকেই এগিয়ে আসতে হবে। কংগ্রেসের সঙ্গে আলোচনা করেই সরকারকে এগতে হবে বলে রাহুল গাঁধী মন্তব্য করেন। রাহুলের এই মন্তব্যের পর সনিয়াকে চা-চক্রে আমন্ত্রণ জানানো মোদীর পক্ষে অনেক সহজ হয়ে যায়। কংগ্রেসের দাবি মেনে তাদের সঙ্গে আলোচনার ভিত্তিতেই সরকার এগতে চাইছে, এমন বার্তা দিতেই তড়িঘড়ি চা-চক্রে কংগ্রেস সভানেত্রীকে আমন্ত্রণ জানিয়ে দেন মোদী। সঙ্গে মনমোহন সিংহের উপস্থিতিও জরুরি ছিল। কারণ জিএসটি’র যে বিষয়গুলি নিয়ে কংগ্রেসের আপত্তি সে বিষয়ে বিশদে আলোচনার জন্য প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রীই সবচেয়ে উপযুক্ত। তাই সনিয়া-মনমোহনের যৌথ উপস্থিতিতেই জিএসটি বিল নিয়ে শাসক-বিরোধী সমঝোতার চূড়ান্ত মঞ্চ হয়ে উঠতে পারে মোদীর এই চা-চক্র। এ দিন চা-চক্র রাহুল গান্ধী বলেন, ‘‘চাপের মুখে মোদী আলোচনায় বসেছেন। এটা ওনার কাজের ধরন নয়।’’ যদিও এ দিন চা-চক্রে আমন্ত্রণ পাননি রাহুল।

মোদী জমানায় যত দ্রুত অর্থনৈতিক সংস্কার আশা করেছিল শিল্প মহল, তা বাস্তবে হয়নি। জমি বিল পাস করাতে পারেননি মোদী। আটকে গিয়েছে আরও একিধিক সংস্কারমূলক পদক্ষেপ। শিল্পপতিদের বড় অংশই এ বার সংস্কার তরান্বিত করার জন্য সরকারের উপর চাপ বাড়াচ্ছে। জিএসটি এমন একটি বিল, যা সংস্কারমূলক হলেও এ নিয়ে বিরোধীদের বড় অংশই সরকারকে সমর্থনে প্রস্তুত। কয়েকটি শর্ত সরকার মানলেই কংগ্রেস তো বটেই, বিভিন্ন আঞ্চলিক দলও সংসদে বিলকে সমর্থন দেবে। তাই শিল্প মহলকে আশ্বস্ত রাখতে এই সুযোগ কাজে লাগানো মোদীর পক্ষে খুবই জরুরি, মনে করছে রাজনৈতিক শিবির। সনিয়া-মনমোহনকে চা-চক্রে ডেকে আলোচনায় বসার অন্যতম কারণ মোদীর সেই তাগিদ, বলছেন ২৪ নম্বর আকবর রোডের অনেকেই। তবে তাগিদ শুধু নরেন্দ্র মোদীর নয়, সনিয়া গাঁধীরও রয়েছে। জমি বিল আটকাতে রাহুল গাঁধী যে ভাবে পতে নেমেছিলেন, তার পর শিল্প মহল কংগ্রেসকে নিয়ে কিছুটা সন্দিহান। রাহুল গাঁধী সংস্কার বিরোধী, শিল্প বিরোধী হিসেবে নিজের ভাবমূর্তি তৈরি করে ফেলছেন। এমন গুঞ্জন শিল্প মহলের কোথাও কোথাও। তাই মোদীর সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে জিএসটি নিয়ে রফায় পৌংছতে পারলে কংগ্রেসেরও লাভ।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE