Advertisement
০৬ মে ২০২৪

তিনিই মুখ, পুরনো ঝাঁঝ ফেরাতে চাইছেন মোদী

ত্রিবেণী সঙ্গমে তখন গোধূলির মায়াবি রঙের খেলা। আর তার সামনে হাজার হাজার লোকের হাতে জ্বলছে আলো। এ আলো মোবাইল ফোনের।

আমোদিত। সোমবার ইলাহাবাদে বিজেপির কর্মসমিতির বৈঠক শেষে এক জনসভায়। ছবি: রয়টার্স

আমোদিত। সোমবার ইলাহাবাদে বিজেপির কর্মসমিতির বৈঠক শেষে এক জনসভায়। ছবি: রয়টার্স

দিগন্ত বন্দ্যোপাধ্যায়
ইলাহাবাদ শেষ আপডেট: ১৪ জুন ২০১৬ ০৯:২১
Share: Save:

ত্রিবেণী সঙ্গমে তখন গোধূলির মায়াবি রঙের খেলা। আর তার সামনে হাজার হাজার লোকের হাতে জ্বলছে আলো।

এ আলো মোবাইল ফোনের। প্রয়াগ শহরে অসমের জয় পালন করছেন উত্তরপ্রদেশবাসী। সঙ্গম তীরে ‘ইউপিওয়ালা’ নরেন্দ্র মোদীর আবেদনে।

ঘরে কোন্দল। মুখ্যমন্ত্রীর মুখ হয়ে উঠতে নেতায় নেতায় মারামারি। কর্মসমিতির বৈঠকের শেষ দিনে তা নিয়ে অসন্তোষও প্রকাশ করেছেন নরেন্দ্র মোদী। কিন্তু উত্তরপ্রদেশ যে এখন তাঁর কাছে পাখির চোখ। তাই দেশের সব থেকে বড় রাজ্যের ভোটের রাশ নিজের হাতেই তুলে নিলেন। বুঝিয়ে দিলেন, তিনিই মুখ। দু’বছর আগের নিজের সেই জাদুর মায়াজাল তৈরি করার আপ্রাণ চেষ্টা করে ফিরিয়ে আনলেন পুরনো ঝাঁঝটিও। কালের নিয়মে এখন যা অনেকটাই ফিকে।

পুরনো ছন্দেই মোদী বললেন, “এক বার উত্তরপ্রদেশে পাঁচ বছরের জন্য সুযোগ দিন। নিজের স্বার্থে আপনাদের যদি কোনও লোকসান করি, তা হলে লাথি মেরে বের করে দিন।” প্রধানমন্ত্রীর মুখে এমন ভাষা শুনে অনেকেই হতচকিত। কিন্তু মোদী তখন আপাদমস্তক ইউপিওয়ালা। মাটির মানুষের সঙ্গে সুর মেলানোর ভাষা বিলক্ষণ জানেন!

মোদীর মুখে এই কথা শুনে বেশ কয়েক মিনিট ধরে ত্রিবেণীর তীরে গর্জে উঠল হাততালি। লালকৃষ্ণ আডবাণী আর মুরলী মনোহর জোশীকে দু’পাশে নিয়ে মঞ্চে বসেছিলেন মোদী। প্রশংসায় ভরালেন উভয়কে। কে বলবে, বিহারে হারের পরে প্রবীণ মার্গদর্শক ব্রিগেডই বিদ্রোহে ফেটে পড়েছিলেন? আর বারবার তুলে ধরলেন কল্যাণ সিংহ আর রাজনাথ সিংহের মুখ্যমন্ত্রিত্বের কাল। মুখে শুধু উন্নয়ন-উন্নয়ন করে গেলেও মোদী মঞ্চে বসিয়ে ছিলেন এমন নেতাদের, জাত-পাতের অঙ্ক যেখানে পুরোদস্তুর খাপ খায়।

মোদীর মুখে উন্নয়নের কথা, আর অমিত শাহের রাজনীতিতে নরম হিন্দুত্ব। উত্তরপ্রদেশের দখল নিতে সেই পুরনো কৌশলকেই ফিরিয়ে আনছেন মোদী-শাহ জুটি। তাই মোদী আজ উন্নয়নের নামে ভোট চেয়ে গেলেও অমিত টেনে এনেছেন এ রাজ্যের কায়রানায় হিন্দুদের পলায়নের প্রসঙ্গ। পরিবর্তনের আক্রোশ পুরে বলেছেন, গদি থেকে ছুড়ে ফেলতে হবে অখিলেশ সরকারকে।

আর মায়াবতী-কংগ্রেসের যে ‘ইলু-ইলু’ চলছে, তাতে একমাত্র বিকল্প বিজেপিই। মোদীও বলেছেন, “দুনিয়ায় ভারতকে নম্বর ওয়ান করতে হলে উত্তরপ্রদেশকেও নম্বর ওয়ান হতে হবে। বিজেপির হাতেই তা হতে পারে।”

কিন্তু এ সব ঝাঁঝ তো মঞ্চের চিত্রনাট্য। মোদীকে এখন সব থেকে বেশি যা ভাবাচ্ছে, তা হল দলের ফাঁকফোকর, দুর্বলতাগুলি। সে কারণে আজ প্রকাশ্য জনসভার আগে দলের কর্মসমিতির বৈঠকে একেবারে অন্য মোদীকে দেখেছেন দলের নেতারা। বক্তব্য রাখতে গিয়ে কখনও আবেগে জড়িয়ে এসেছে গলা। বলেছেন, কোনও পদ বা ক্ষমতার জন্য কাজ করেন না তিনি। দল ও দেশের জন্যই সঁপে দিয়েছেন নিজেকে। ত্রিবেণীর তীরে যে ঝাঁঝালো স্লোগান দিয়েছেন, তার উল্টো পথেই হেঁটে দলের বৈঠকে মোদী বলেছেন, “শুধু স্লোগান দিলেই মানুষ সন্তুষ্ট হন না। দেশকে শক্তিশালী করতে হবে।” তার জন্য সাত দফা দাওয়াইও দিয়েছেন তিনি। সেবাভাব, সন্তুলন (ভারসাম্য), সংযম, সমন্বয়, সাকারাত্মক (ইতিবাচক), সংবেদনা ও সংবাদ।

বিজেপির শীর্ষ সূত্রের মতে, দলের মধ্যে এই সাতটি বিষয়ে খামতি রয়েছে বলেই আজ সেগুলি অবিলম্বে দূর করার কথা বললেন প্রধানমন্ত্রী। দল ও কর্মীদের আচরণে শৃঙ্খলা আনতেই এটি প্রয়োজন। স্মরণাতীত কালে দলের কোনও কর্মসমিতির বৈঠকে এত নেতার পোস্টার দেখা যায়নি। বোঝা যাচ্ছে, এখানে এখন সকলেই নেতা, কর্মী কেউ নন। কেউ কারও কথা মানেন না। মুখ্যমন্ত্রী হওয়ার জন্য অনেকেই আকুল হয়ে পড়েছেন (পড়ুন বরুণ গাঁধী)। আজকে মোদীর সভাতেও বারবার ঘোষণা করতে হয়েছে, বিজেপির পতাকা ছাড়া আর কোনও পোস্টার দয়া করে তুলবেন না।

ঘরে আবেগ, বাইরে ঝাঁঝ। আপাতত লখনউয়ের পথ চলতে এই মিশেলের কৌশলকেই কাজে লাগাতে হচ্ছে নরেন্দ্র মোদীকে। বাইরের মুখও তিনি, ঘরের রাশও তাঁরই হাতে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

UP election Narendra Modi BJP
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE