Advertisement
০২ মে ২০২৪

বারাণসীতেও কি উধাও মোদী-জাদু

ক্ষমতায় এসেই প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী জানিয়েছিলেন ‘স্বচ্ছ বারাণসী’ উপহার দেবেন। সে আশা কি হারাতে বসেছে তাঁর লোকসভা কেন্দ্র? শনিবার মোদীর বারাণসী সফর ঘিরে গত কয়েক দিন ধরেই চলেছে ব্যবস্থাপনা। ব্যস্ততা যত বেড়েছে ততই যেন পারদ বেড়েছে বিরক্তির। বেশ কয়েক দিন ধরেই প্রধানমন্ত্রীর সফরের জন্য চলেছে প্রস্তুতি। বারাণসী সাফ করা যে দু’-এক দিনের কাজ নয় এখনও। এক-একটা গলি পরিষ্কার করতেই যায় গোটা বেলা। সঙ্গে আছে রাস্তা সারাই, যান-নিয়ন্ত্রণের ব্যবস্থা, কত কী।

গঙ্গা আরতি করছেন নরেন্দ্র মোদী এবং শিনজো আবে। শনিবার বারাণসীর দশাশ্বমেধ ঘাটে।  ছবি: পিটিআই।

গঙ্গা আরতি করছেন নরেন্দ্র মোদী এবং শিনজো আবে। শনিবার বারাণসীর দশাশ্বমেধ ঘাটে। ছবি: পিটিআই।

সুচন্দ্রা ঘটক
বারাণসী শেষ আপডেট: ১৩ ডিসেম্বর ২০১৫ ০৩:১৭
Share: Save:

ক্ষমতায় এসেই প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী জানিয়েছিলেন ‘স্বচ্ছ বারাণসী’ উপহার দেবেন। সে আশা কি হারাতে বসেছে তাঁর লোকসভা কেন্দ্র?

শনিবার মোদীর বারাণসী সফর ঘিরে গত কয়েক দিন ধরেই চলেছে ব্যবস্থাপনা। ব্যস্ততা যত বেড়েছে ততই যেন পারদ বেড়েছে বিরক্তির।

বেশ কয়েক দিন ধরেই প্রধানমন্ত্রীর সফরের জন্য চলেছে প্রস্তুতি। বারাণসী সাফ করা যে দু’-এক দিনের কাজ নয় এখনও। এক-একটা গলি পরিষ্কার করতেই যায় গোটা বেলা। সঙ্গে আছে রাস্তা সারাই, যান-নিয়ন্ত্রণের ব্যবস্থা, কত কী।

তৎপরতা তুঙ্গে, কিন্তু উৎসাহ কই? হঠাৎ এত ব্যবস্থাপনা দেখে যেন দীর্ঘশ্বাস ফেলেছে ‘আম’ বারাণসী। স্বতঃস্ফুর্ত ক্ষোভ ভেসে আসে কখনও নৌকাচালক-রিকশাচালক, কখনও দোকানমালিক-রেস্তোরাঁর কর্মচারীদের কাছে থেকে। উন্নততর পরিষেবার আশা ছিল নতুন প্রশাসনের কাছে। সে দিকে নজর পড়ছে নাকি শুধু মোদীর সফরকে কেন্দ্র করেই। তাঁদের ভয়, দু’দিনেই আবার নিজের ছন্দে ফিরবে বারাণসী। প্রধানমন্ত্রী দেখতেও আসবেন না, কী ভাবে দিন কাটছে তাঁদের।

লাক্সা রোডে যানজটে আটকেই বিরক্তি উগরে দেন রিকশাচালক রামচাঁদ, ‘‘মোদী আসছেন বলে হঠাৎ রাস্তার এক দিক আটকে তাপ্পি পড়ছে। ব্যস হয়ে গেল জ্যাম!’’ কিছুটা রেগেই নিজের মনে বলে চলেন, ক’দিন পরেই তো আবার যে-কে-সেই হাল হবে। ভাঙা রাস্তা দিয়েই তো সারা বছর যাতায়াত করতে হয়।

গত কয়েক দিন ধরে রাস্তায় লম্বা-লম্বা ঝাঁটা হাতে মহিলাদের ব্যস্ততা চোখে পড়েছে দশাশ্বমেধ ঘাটের আশপাশে দোকানমালিক, পুরোহিত, নৌকাচালকদের। তা দেখে নিজেদের মধ্যেই চলছে হাসি-ঠাট্টা। পর্যটকদের সামনেও প্রকাশ পায় ক্ষোভ। ঘাটের সামনে পুজোর বাসন বিক্রি করেন হরি যাদব। ঘাট সাফাই দেখে বলে ফেলেন, ‘‘এক দিন সাফ করে কি স্বচ্ছ বারাণসী হয়!’’ পাশের গয়না বিক্রেতা লক্ষ্ণী অবশ্য আশা ছাড়েননি। চোখ রাঙিয়ে বলেন, ‘‘একটু একটু করেই বড় কাজ হয়।’’ লক্ষ্মীদিদির বকাঝকায় সাময়িক ভাবে থমকে যায় নিন্দা।

কিন্তু ‘লক্ষ্মী’র সংখ্যাও কমছে বারাণসীতে। জানান বাঙালিটোলায় লস্‌সির দোকানের মালিক সোনা কুণ্ডু। গত ৩৫ বছর ধরে শহরটাকে দেখেছেন তিনি। মোদীর উপরে ভরসার পারদ ওঠা-নামা কোনওটাই তাঁর চোখ এড়ায়নি। নিজের রাজনৈতিক মতামত প্রকাশ করতে চান না। কিন্তু উন্নয়ন যে তেমন হয়নি মোদী জমানাতেও, তা বলেই ফেলেন কথায়-কথায়। অভিযোগ, প্রায় দিনই লোডশেডিং চলে ঘণ্টার পর ঘণ্টা। আর সাফাই? তা নিয়ে আর বলার কি আছে? বারাণসীর রাস্তায় পা ফেলার জায়গা এখনও বা কতটুকু হয়েছে!

মোদী আসায় দিন দুয়েক মণিকর্ণিকা এবং হরিশচন্দ্র ঘাটের শ্মশান থেকে ভেসে আসা ছাই হয়তো দেখা যাবে না গঙ্গার জলে। কিন্তু রোজের চিত্রটা যে একেবারেই আলাদা। যেমন দেখা গিয়েছে দিন চারেক আগেও। নৌকায় ভাসতে ভাসতে গঙ্গার জল ছুঁয়ে দেখতে গিয়েছিলেন এক তরুণী। হঠাৎ লাফিয়ে ওঠেন নৌকাচালক। ভয়ে পেয়ে হাত সরান তরুণী। দশাশ্বমেধ ঘাট থেকে তখন জনা দশেক সওয়ারি নিয়ে হরিশচন্দ্র ঘাটের কাছাকাছি নৌকাচালক পেয়ারিলাল। বলেন, ‘‘ওই জলে কেউ হাত দেয় নাকি? দেখেছেন না কালো ছাই ভাসছে? সামনে শ্মশান। বোঝেন তো ওটা কী?’’ কেন, গঙ্গা পরিষ্কার হয় না? উত্তর ভেসে আসে, ‘‘ও সব প্রধানমন্ত্রীর জন্য। দো দিন কা সাফাই সে কেয়া হোতা?’’

সে যা-ই হোক, কাশী বিশ্বনাথ মন্দির তো সঙ্গে আছে প্রধানমন্ত্রীর? তা আছে। তবে মন্দিরে ঢোকার গলির সব ক’টা দোকানের মালিক-কর্মচারীর মুখ অবশ্য সে কথা বলে না। যে কোনও সময়ে গলিতে কান পাতলে ব্যস্ততার ফাঁকেও শোনা যায় দীর্ঘশ্বাস, অস্বস্তি। কোথাও কি তবে বিশ্বাস ভাঙছে?

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

varanasi narendra modi suchandra ghatak
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE