Advertisement
E-Paper

নীরব মোদী নিয়ে নরেন্দ্র মোদীর ঢাল গাঁধী-বিড়লা যোগ!

মাত্র দিন কয়েক আগেই সংসদে দাঁড়িয়ে কংগ্রেস সভাপতি রাহুল গাঁধী তাঁকে বলেছিলেন, ‘‘আপনি চৌকিদার নন, ভাগীদার!’’ সেই ‘ভাগীদার’ মন্তব্যের জবাবে গত কাল মোদী বলেছিলেন, তিনি গরিবের দুঃখের ভাগীদার। যা নিয়ে তুমুল উপহাসের পালা শেষ হওয়ার আগেই মোদী এ বার টেনে আনলেন গাঁধীকে!

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ৩০ জুলাই ২০১৮ ০৩:৪২
রবিবার, লখনউয়ে বিনিয়োগকারীদের সম্মেলনে (ছবি পিটিআই)। ডান দিকে মহাত্মা গাঁধী এবং জি ডি বিড়লা (ফাইল চিত্র)।

রবিবার, লখনউয়ে বিনিয়োগকারীদের সম্মেলনে (ছবি পিটিআই)। ডান দিকে মহাত্মা গাঁধী এবং জি ডি বিড়লা (ফাইল চিত্র)।

প্রতারণায় অভিযুক্ত শিল্পপতির সঙ্গে তাঁর ঘনিষ্ঠতা বা রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কের কোটি কোটি টাকা বকেয়া রেখে দেওয়া শিল্পপতিকে নিয়ে দেশ-বিদেশে সফর— প্রধানমন্ত্রী হিসেবে মাত্র চার বছরেই এমন অগুন্তি অভিযোগে বিদ্ধ নরেন্দ্র মোদী এ বার নিজের সততার প্রমাণ দিতে টেনে আনলেন মহাত্মা গাঁধীর নাম!

ঘটনাস্থল লখনউ। রবিবার সেখানে বিনিয়োগকারীদের সম্মেলনে বক্তৃতা দিতে গিয়ে মোদী বলেন, ‘‘দেশের উন্নতিতে অংশ নেওয়া শিল্পপতিদের পাশে দাঁড়াতে আমি ভয় পাই না। কারণ আমার অভিপ্রায় সৎ।’’ সেই সঙ্গেই তাঁর সংযোজন, ‘‘গাঁধীজির উদ্দেশ্য স্পষ্ট ছিল। তাই তিনি বিড়লাদের বাড়িতে থাকতেও দ্বিধা করেননি। যদি তোমার উদ্দেশ্য ভাল ও সৎ হয়, তা হলে যে কারও সঙ্গে দাঁড়িয়ে ছবি তুলতেই পার। এতে চরিত্রে কোনও দাগ পড়ে না।’’

মাত্র দিন কয়েক আগেই সংসদে দাঁড়িয়ে কংগ্রেস সভাপতি রাহুল গাঁধী তাঁকে বলেছিলেন, ‘‘আপনি চৌকিদার নন, ভাগীদার!’’ সেই ‘ভাগীদার’ মন্তব্যের জবাবে গত কাল মোদী বলেছিলেন, তিনি গরিবের দুঃখের ভাগীদার। যা নিয়ে তুমুল উপহাসের পালা শেষ হওয়ার আগেই মোদী এ বার টেনে আনলেন গাঁধীকে!

মোদী আজ যা-ই দাবি করুন, আত্মগোপনকারী, দুর্নীতিতে অভিযুক্ত একাধিক শিল্পপতির সঙ্গে তাঁর সুসম্পর্ক বারেবারেই চর্চার বিষয় হয়ে উঠেছে। দিন কয়েক আগেই রাফাল দুর্নীতিতে নাম জড়িয়েছে মোদী-ঘনিষ্ঠ এক ব্যবসায়ীর। ললিত মোদী-বিজয় মাল্যরা দেশ থেকে উধাও হয়েছেন মোদী জমানাতেই। পঞ্জাব ন্যাশনাল ব্যাঙ্কের ১৪ হাজার কোটি টাকা প্রতারণায় প্রধান অভিযুক্ত নীরব মোদীও ফেরার হয়েছেন তাঁর আমলেই। নীরবের সঙ্গে মোদীর ছবি প্রকাশ্যেও এসেছে। এমনকি পিএনবি দুর্নীতির আর এক কারিগর তথা নীরবের মামা মেহুল চোক্সীকে প্রধানমন্ত্রী এক অনুষ্ঠানে ‘হমারে মেহুলভাই’ বলে সম্বোধন করছেন বলেও দেখা গিয়েছে। সেই মেহুলও ফেরার হয়েছেন গত বছর। তিনি এখন অ্যান্টিগার নাগরিক! যা নিয়ে অ্যান্টিগার বিদেশমন্ত্রী জানিয়েছেন, ওঁর বিরুদ্ধে অভিযোগগুলো জানা থাকলে মেহুলের নাগরিকত্বের আবেদন খারিজ করতেন তাঁরা।

নীরব মোদী (ছবিতে চিহ্নিত)-সহ বিতর্কিত শিল্পপতিদের সঙ্গে ঘনিষ্ঠতা নিয়ে বক্তব্য রাখছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী।

মোদী নিজেই নিজেকে মহাত্মা গাঁধীর সঙ্গে তুলনা করে সততার শংসাপত্র দেওয়ায় বিতর্কের ঝড় উঠেছে। তৃণমূল সাংসদ সুগত বসুর কটাক্ষ, ‘‘আশা করি, উনি নিজেকে মহাত্মা গাঁধী ভাবতে শুরু করেননি!’’ সুগতর কথায়, ‘‘বিড়লা সম্বন্ধে আমাদের কিছু সমালোচনা থাকতে পারে। কিন্তু তিনি দেশ ছেড়ে কোনও দিন পালিয়ে যাননি। নরেন্দ্র মোদী যাঁদের সঙ্গে ছবি তুলছেন, তাঁরা দেশে থাকছেন তো?’’

আরও পড়ুন: লালজিকে খুঁজেই পেল না কম্পিউটার!

ইতিহাসবিদ দীপেশ চক্রবর্তীর কথায়, ‘‘গাঁধীর সঙ্গে বিড়লার তো সম্পর্ক ছিলই! বিড়লা গাঁধীকে টাকা দিতেন। গাঁধী বছরের শেষে তার পাইপয়সার হিসেব দিতেন। যদিও বিড়লা সেই কাগজ ছিঁড়ে ফেলে দিতেন।’’ একই সঙ্গে তাঁর মন্তব্য, ‘‘ মোদী যদি কথা দিতেন, যে তিনি শিল্পপতিদের থেকে কত টাকা নেন, সেই হিসেব সকলকে জানাবেন, তা হলে অসুবিধা ছিল না। শুধু মোদী নন, এখনকার অধিকাংশ রাজনীতিকেরাই ওই জায়গাটায় গাঁধীর চেয়ে অনেক, অনেক পিছিয়ে।’’

মোদী অবশ্য সবেতেই নির্বিকার। আজ তিনি বলেন, ‘‘শিল্পপতির পাশে দাঁড়াতে আমি ভয় পাই না। কারণ আমার উদ্দেশ্য সৎ।’’ শিল্পপতিদের যে চোর বা লুটেরার নজরে দেখা হয়, সেই মনোভাবের জন্য এ দিনের অনুষ্ঠানে কংগ্রেসকেই দুষেছেন তিনি। কংগ্রসের সঙ্গে শিল্পপতিদের সম্পর্ক টেনে অভিযোগও করেছেন।

আরএসএস-ঘনিষ্ঠ হয়েও মোদী যে ভাবে নিজের সততার প্রমাণ দিতে গাঁধীজিকে টেনে এনেছেন, তাতে ক্ষুব্ধ কংগ্রেস। দলের নেতাদের বক্তব্য, ‘‘এটাই ভাগ্যের পরিহাস! সঙ্ঘের লোক হয়েও মোদীর মুখে গাঁধী-নাম!’’

Nirav Modi Narendra Modi Prime Minister of India
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy