Advertisement
E-Paper

মেরুকরণ নয়, প্রচারে সুশাসনই চান মোদী

ধর্মীয় মেরুকরণ নয়, উন্নয়নই হোক আগামী দিনে প্রচারের প্রধান হাতিয়ার। বিধানসভা উপনির্বাচনে ধরাশায়ী হওয়ার পরে বিজেপি নেতৃত্ব এবং সঙ্ঘ পরিবারের কাছে এই বার্তাই পাঠালেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। বস্তুত, একের পর এক রাজ্য, বিশেষ করে উত্তরপ্রদেশের উপনির্বাচনে খারাপ ফল দেখে বিজেপি শীর্ষনেতাদের অনেকেই মনে করছেন, লোকসভা ভোটে যে সাম্প্রদায়িক মেরুকরণের রাজনীতি ফায়দা দিয়েছিল, ক্ষমতায় আসার পরে সেই অস্ত্র এখন ভোঁতা হয়ে গিয়েছে।

জয়ন্ত ঘোষাল

শেষ আপডেট: ১৮ সেপ্টেম্বর ২০১৪ ০৩:২০

ধর্মীয় মেরুকরণ নয়, উন্নয়নই হোক আগামী দিনে প্রচারের প্রধান হাতিয়ার।

বিধানসভা উপনির্বাচনে ধরাশায়ী হওয়ার পরে বিজেপি নেতৃত্ব এবং সঙ্ঘ পরিবারের কাছে এই বার্তাই পাঠালেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী।

বস্তুত, একের পর এক রাজ্য, বিশেষ করে উত্তরপ্রদেশের উপনির্বাচনে খারাপ ফল দেখে বিজেপি শীর্ষনেতাদের অনেকেই মনে করছেন, লোকসভা ভোটে যে সাম্প্রদায়িক মেরুকরণের রাজনীতি ফায়দা দিয়েছিল, ক্ষমতায় আসার পরে সেই অস্ত্র এখন ভোঁতা হয়ে গিয়েছে। অরুণ জেটলি থেকে শুরু করে উত্তরপ্রদেশের ঠাকুর নেতা রাজনাথ সিংহ সকলেরই ধারণা, শাসক দলের কাছে আমজনতার প্রত্যাশা কী, সেটা এই উপনির্বাচনের ফলই বুঝিয়ে দিল। এর আগের দফার উপনির্বাচনের ফল দেখে উন্নয়নের রাজনীতির প্রয়োজনীয়তা সম্পর্কে নিঃসন্দিহান না হলেও উত্তরপ্রদেশের ফল নেতাদের চোখ খুলে দিয়েছে বলেই বিজেপির অন্দরমহলের খবর।

সঙ্ঘ পরিবারের শীর্ষনেতৃত্ব অবশ্য তাঁদের ধর্মীয় মেরুকরণের কর্মসূচি নিয়েই চলেছেন। লোকসভা ভোটে ওই কৌশল কাজে দেওয়ার পরে এই মেরুকরণ আরও তীব্র করার জন্য বিজেপির উপরে চাপ বাড়ান তাঁরা। পাশাপাশি সক্রিয় হয়ে মাঠে নেমে পড়েন বিশ্ব হিন্দু পরিষদের সাধুরাও। নভেম্বরে জম্মু ও কাশ্মীরে বিধানসভা ভোট। তার আগে মেরুকরণের রাজনীতিকে উচ্চগ্রামে নিয়ে যাওয়ার পরিকল্পনা রয়েছে। উত্তরপ্রদেশেও সেই কৌশল কাজে লাগাতে উপনির্বাচনে প্রচার কমিটির দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল যোগী আদিত্যনাথকে। কিন্তু রাজ্যের ১১টি বিধানসভা কেন্দ্রের মধ্যে ৮টিতেই হারার পরে সেই কৌশল নিয়ে প্রশ্ন উঠছে।

এই অবস্থায় চিনা প্রেসিডেন্টের সফর শেষ হওয়ার পরে এবং নিজে আমেরিকা যাওয়ার আগে বিজেপি এবং সঙ্ঘ নেতৃত্বের সঙ্গে বৈঠকে বসতে চলেছেন মোদী। তিনি ওই নেতাদের বলবেন, বিজেপি এখন শাসক দল, বিরোধী নয়। বিরোধী দলে থাকার সময় যে মেরুকরণের রাজনীতি ফায়দা দেয়, ক্ষমতায় আসার পরে সেটাই কাজে দেয় কিনা, সন্দেহ। কারণ শাসক দলের কাছ থেকে সাধারণ মানুষ চায় প্রশাসনিক যোগ্যতা, সুশাসন। অতএব, এখন হিন্দুত্ব নয়, মূল্যবৃদ্ধিতে লাগাম পরানো থেকে শুরু করে কর্মসংস্থানকে অগ্রাধিকার দিতে হবে।

বিজেপির অন্দরে এমন ভাবনা যে এই প্রথম দেখা দিল এমন নয়। বিরোধী দলে থাকাকালীন যে লালকৃষ্ণ আডবাণী রাম মন্দির আন্দোলনকে তুঙ্গে নিয়ে গিয়েছিলেন, উপপ্রধানমন্ত্রী হওয়ার পরে সেই তিনিই পাকিস্তান সফর শেষে বলেছিলেন, বিজেপি যে মুসলিম সমাজের বিরোধী নয় সেটা প্রচার করা জরুরি। এর কারণ ব্যাখ্যা করে দলীয় নেতাদের আডবাণী বলেছিলেন সংখ্যালঘু মুসলমান সমাজ বিজেপি-কে ভোট না-ও দিতে পারে। কিন্তু হিন্দু সমাজ পুরোটাই তো মুসলমান-বিরোধী নয়। হিন্দু সমাজের একটি ক্ষুদ্র অংশ কট্টরবাদী। তার বাইরে যে বৃহৎ উদার ধর্মনিরপেক্ষ অংশ রয়েছে, তাদের দূরে ঠেলে দেওয়া উচিত হবে না। আডবাণীর এই মতের বিরোধীর সংখ্যাও অবশ্য বিজেপি-তে কম নয়। বস্তুত, মেরুকরণের রাজনীতি আখেরে ফায়দা দেয় কি না, তা নিয়ে দলে বিতর্ক দীর্ঘদিনের। মোদী নিজে এ প্রসঙ্গে ‘ট্রায়াল অ্যান্ড এরর’ পরীক্ষা পদ্ধতি অনুসরণ করে এগোতে চাইছেন। ঠিক যেমন চিন নিয়ে আরএসএস চূড়ান্ত বিরোধিতার লাইন ঘোষণা করলেও তিনি তাদের নিরস্ত্র করেছেন। সে ভাবেই মেরুকরণের রাজনীতি নিয়েও মোদী ধীরে চলার পক্ষে।

আসলে বিজেপির রাজনৈতিক সত্তার একটা সঙ্কট আছে। এনডিএ আমলে শরিকদের চাপের যুক্তি দেখিয়ে দলে কট্টরবাদীদের নিয়ন্ত্রণে রাখতে সক্ষম হয়েছিলেন অটলবিহারী বাজপেয়ী। কিন্তু এখন কেন্দ্রে বিজেপি একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা পাওয়ার পরে আরএসএস দ্রুত তাদের হিন্দু জাতীয়তাবাদের রাজনৈতিক লাইন প্রতিষ্ঠা করতে মরিয়া। আর বিজেপি সভাপতি অমিত শাহও হিন্দুত্বের কর্মসূচিকে প্রচারের প্রধান হাতিয়ার করে মুলায়ম-মায়াবতী, লালু-নীতীশের জাতপাতের রাজনীতির মোকাবিলা করতে চান। লোকসভা নির্বাচনে এই কৌশল ফায়দা দেওয়ায় তার উপরে বিজেপির আস্থা বেড়েছে। দাপট বেড়েছে আরএসএসের।

কিন্তু উত্তরপ্রদেশের ফল অঙ্কটা উল্টে দিল। মোদী মনে করছেন, ‘লাভ-জিহাদ’-এর মতো বিষয়কে প্রচারের তুঙ্গে নিয়ে গিয়ে লাভের চেয়ে লোকসানই বেশি হয়েছে। মুসলমান সমাজের নিরাপত্তার অভাববোধ উত্তরপ্রদেশে মুলায়মকে, বিহারে লালু-নীতীশকে শক্তিশালী হয়ে উঠতে সাহায্য করছে। অতএব বিজেপির উচিত কৌশল বদল করা। অমিত শাহ অবশ্য বলছেন, “উন্নয়ন ও হিন্দুত্বের মধ্যে কোনও বিরোধ নেই। হিন্দুত্ব মানে সাম্প্রদায়িকতা নয়। এটাই তথাকথিত ধর্মনিরপেক্ষতাবাদীদের অপপ্রচার।”

বিরোধীরা কিন্তু এই প্রশ্নে বিজেপি-কে আক্রমণ করতে ছাড়ছে না। কংগ্রেস নেতা সলমন খুরশিদের কথায়, “বিজেপির চিরকালই দুটো মুখ। একটা উদার মুখ। আর একটা সাম্প্রাদয়িক মুখ। বিজেপির পক্ষে কোনও দিনই সাম্প্রদায়িক হিন্দুত্বকে পরিত্যাগ করা সম্ভব নয়। কারণ সেটা হবে বিড়ালের মাছ খাব না বলার মতো ব্যাপার।”

ধর্মীয় মেরুকরণ নিয়ে এই বিতর্কের মাঝেই অবশ্য উন্নয়নকে তাঁর সরকারের মূলমন্ত্র হিসেবে তুলে ধরতে চাইছেন নরেন্দ্র মোদী। উত্তরপ্রদেশ উপনির্বাচনের উদাহরণ সামনে রেখে তাই দল ও সঙ্ঘ নেতৃত্বকে তিনি বলবেন, ভবিষ্যতে ভোটে জিততে গেলে শুধু যোগী আদিত্যনাথে কাজ হবে না। তাঁর সুশাসনের কর্মসূচিরও প্রয়োজন হবে।

good governance modi jayanta ghosal narendra modi promotions national news online national news discipline
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy