Advertisement
E-Paper

ধনবলেই ভিড় জমে পলামুর প্রচারসভায়

ডালটনগঞ্জ থেকে তখন বরওয়াডিহির দিকে ছুটছে চোপান-গোমো প্যাসেঞ্জার। জানলার বাইরে রোদে ঝলমল কেঁচকি নদী। হঠাত্‌ শুনলাম, ‘‘আপেল নেবেন বাবু? পঞ্চাশ টাকা কিলো। অল্পই রয়েছে। সামনে নেমে যাব। না হলে বাড়ি ফিরতে পারব না।” বিক্রেতার নাম পাপ্পু সিংহ। থাকেন লাতেহার শহর থেকে প্রায় ২০ কিলোমিটার দূরে প্রত্যন্ত গ্রামে। প্রতি দিন ট্রেনে ঘুরেই রোজগার। সাংবাদিকতার তাগিদে প্রশ্নটা করেই ফেললাম পাপ্পুকে।

প্রবাল গঙ্গোপাধ্যায়

শেষ আপডেট: ২৪ নভেম্বর ২০১৪ ০২:১৪

ডালটনগঞ্জ থেকে তখন বরওয়াডিহির দিকে ছুটছে চোপান-গোমো প্যাসেঞ্জার। জানলার বাইরে রোদে ঝলমল কেঁচকি নদী। হঠাত্‌ শুনলাম, ‘‘আপেল নেবেন বাবু? পঞ্চাশ টাকা কিলো। অল্পই রয়েছে। সামনে নেমে যাব। না হলে বাড়ি ফিরতে পারব না।”

বিক্রেতার নাম পাপ্পু সিংহ। থাকেন লাতেহার শহর থেকে প্রায় ২০ কিলোমিটার দূরে প্রত্যন্ত গ্রামে। প্রতি দিন ট্রেনে ঘুরেই রোজগার। সাংবাদিকতার তাগিদে প্রশ্নটা করেই ফেললাম পাপ্পুকে। ডালটনগঞ্জে প্রধানমন্ত্রীর সভায় গিয়েছিলেন? অবাক চোখে কিছু ক্ষণ তাকিয়ে থাকলেন যুবক। তার পর বললেন, “নেতাদের কথা শুনে কী হবে বাবু। ভোট আসে যায়, শুধু প্রতিশ্রুতিই মেলে। নির্বাচন মিটলেই সব শেষ!”

উত্তরটা ছোট। কিন্তু পলামুর প্রান্তে প্রান্তে কান পাতলে এমনই কথা ভাসে মাঝেমধ্যেই। সেখানকার ৯টি বিধানসভা কেন্দ্রের মধ্যে কোনওটা বিজেপির দখলে, কোনওটা কংগ্রেস বা অন্য দলের। ভোট আসে, ভোট যায়। পলামুতে বদলায় না অনুন্নয়ন, দারিদ্র্যের ছবি।

উন্নয়নের নিরিখে ঝাড়খণ্ডে পিছনের সারিতে থাকা ওই জেলায় বেশির ভাগ মানুষ দারিদ্র্যসীমার নীচে বসবাস করেন। জেলার অনেক পরিকাঠামো বেহাল। ভাঙা রাস্তা, যানবাহনের সংখ্যা কম। গ্রামে গ্রামে বিদ্যুতের খুঁটি পৌঁছলেও, অধিকাংশ এলাকায় বিদ্যুত্‌ সংযোগ নেই।

পাপ্পু নেমে যাওয়ার কিছু ক্ষণ পর মরঙ্গা স্টেশন থেকে জ্বালানি কাঠের বোঝা নিয়ে হুড়মুড়িয়ে ট্রেনে উঠলেন লক্ষ্মীদেবী, ভাগ্যবন্তী, সাবিত্রীরা। মলিন শাড়ি, খালি পা, রুক্ষ চেহারা। কথা বলে জানলাম, জঙ্গল থেকে কাঠ নিয়ে কয়েক কিলোমিটার হেঁটে পৌঁছেছেন স্টেশনে। কাঠ বিক্রি করতে যাবেন বরওয়াডিহি। সন্ধের মধ্যে কাজ শেষ হলে বাড়ি ফিরবেন। তবেই রাতে রান্না হবে। দেরি হলে ঠিকাদারের আড়ত বন্ধ হয়ে যাবে। টাকা মিলবে না। খালি পেটেই শীতে রাত কাটাতে হবে প্ল্যাটফর্মে।

পলামুতে জনসভায় মানুষের ভিড়ের সঙ্গে বাস্তবের ছবি মিলছিল না কিছুতেই। হঠাত্‌ মনে পড়ল, ডালটনগঞ্জে নরেন্দ্র মোদীর জনসভায় হাজির লাতেহারের গারুর অজয় সিংহের কথা। রবিবার সেখানে সনিয়া গাঁধীর বক্তৃতাও শুনতে গিয়েছিলেন কৃষক অজয়।

দু’টো সভাতেই থাকলেন? এক গাল হেসে অজয় বললেন, “এখানে এলে বিনা পয়সায় পেট ভরা খাবার মেলে। অল্প কিছু টাকাও। তাতে কয়েক দিন সংসার খরচ চলে যায়।”

অজয়ের সোজাসাপটা স্বীকারোক্তিতে প্রচারসভায় ভিড়, ভোট কেন্দ্রে লম্বা সারির হিসেব মিলল মুহূর্তেই।

পলামুতে ভোট ময়দানে যে অঙ্কে হিসেব মেলায় রাজনৈতিক দলগুলি!

স্থানীয়রা বলেন, ‘ধনবল’ আর ‘জনবল’। নির্বাচনের লড়াইয়ে এগুলিও প্রার্থীদের অন্যতম অস্ত্র। পাঁকি, মনিকা, ডালটনগঞ্জ, লাতেহার, বিশ্রামপুর, ভবনাথপুর প্রতিটি বিধানসভা এলাকায় ছড়িয়ে দারিদ্র্য, অনুন্নয়ন। চাষের মরসুমে হাতে জমা কয়েকটা টাকা খরচ হয় কয়েক দিনেই। ভোটের মুখে দলগুলির কাছ থেকে সংসার খরচের বাড়তি ‘সাহায্য’ মিললে তা ফেরাতে পারেন না গ্রামবাসীদের অনেকেই। আপত্তি করলেও সমস্যা। তখন ‘জনবল’ অর্থাত্‌ রাজনৈতিক দলগুলির আশ্রিত দুষ্কৃতীদের হুমকির মুখে পড়তে হয়।

এ সবের সঙ্গে জুড়ে থাকে মাওবাদী আতঙ্কও। ডালটনগঞ্জের হোটেল ব্যবসায়ী সোনু চন্দ্রার কথায়, “বেতলা, নেতারহাটে ওদের ভয়ে পর্যটকদের ভিড় কমেছে। পর্যটনশিল্প ধুঁকছে। তাতেও বাড়ছে দারিদ্র্য।”

জঙ্গল ঘেরা মনাতু ব্লকে আদিবাসী, হরিজন মানুষের বসতি মিতর গ্রাম। স্বাধীনতার এত বছর পরও তাঁরা কার্যত রয়েছেন আধুনিক সভ্যতার বাইরে। সেখানকার বাসিন্দা সূর্য পাসোয়ান বলেন, “গ্রামে বিদ্যুত্‌ নেই। রাস্তা নেই। পানীয় জলের ব্যবস্থা নেই। নেই ভাল স্বাস্থ্যকেন্দ্রও। মিতরের অনেক বাসিন্দা দেশের প্রধানমন্ত্রীর নামও জানেন না।”

ফের বোঝা গেল, নেতাদের প্রতিশ্রুতি নয়, ধনবল-জনবলেই মজেছে পলামু।

jharkhand assembly election prabal gangyopadhyay national news online national news palamu rally bjp rally modi government narendra modi
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy