দেশের নামী পানমশলা সংস্থার কর্ণধারের পুত্রবধূর রহস্যমৃত্যু নিয়ে দেশ জুড়ে আলোড়ন পড়ে গিয়েছে। ভাইয়ের পর এ বার মৃত দীপ্তি চৌরাসিয়ার মা তাঁর কন্যার শ্বশুরবাড়ির বিরুদ্ধে গুরুতর অভিযোগ আনলেন। তিনি পুলিশের কাছে জানান, দিনের পর দিন দীপ্তি হেনস্থা এবং গার্হস্থ্য হিংসার শিকার হয়েছেন। বিয়ের পর থেকেই শ্বশুরবাড়িতে তাঁর উপর অত্যাচার করা হত। পুলিশ সূত্রে খবর, দীপ্তির স্বামী এবং শ্বশুরবাড়ির বিরুদ্ধে হেনস্থা এবং পারিবারিক হিংসার অভিযোগ দায়ের করেছে তাঁর পরিবার। তাদের দাবি, সকল দিক খতিয়ে দেখে তদন্ত হোক।
দীপ্তির মায়ের অভিযোগের ভিত্তিতে, দিল্লি পুলিশ শুক্রবার পানমশলা সংস্থার কর্ণধারের ছেলে ওরফে দীপ্তির স্বামী এবং শাশুড়ির বিরুদ্ধে এফআইআর দায়ের করেছে।
দীপ্তি কলকাতার মেয়ে। ২০১০ সালে নামী পানমশলা সংস্থার কর্ণধার কমলকিশোর চৌরাসিয়ার পুত্র অর্পিতের সঙ্গে বিয়ে হয় তাঁর। রয়েছে ১৪ বছর বয়সি এক পুত্রসন্তানও। দীপ্তির মায়ের দাবি, বিয়ের কিছু মাস পর থেকেই পারিবারিক অনুষ্ঠানে দীপ্তিকে যেতে দেওয়া হত না। বিভিন্ন ভাবে তাঁকে হেনস্থা করা হত। দীর্ঘ দিন ধরে শ্বশুরবাড়িতে তাঁর উপর মানসিক এবং শারীরিক অত্যাচার করা হয়েছে।
গত ২৫ নভেম্বর দিল্লির বসন্তবিহার এলাকার বাড়ি থেকে দীপ্তির দেহ উদ্ধার হয়। অভিযোগ, তিনি আত্মঘাতী হয়েছেন। তবে মৃত্যুর কয়েক ঘণ্টা আগে দীপ্তির সঙ্গে তাঁর মায়ের কথা হয়। পুলিশের কাছে তিনি জানান, গত ২৫ নভেম্বর সকাল সাড়ে ৭টা নাগাদ দীপ্তির সঙ্গে তাঁর ফোনে কথা হয়। তখন কন্যা তাঁর মাকে দাম্পত্য বিবাদের কথা উল্লেখ করে বাবার স্বাস্থ্যের বিষয়েও জিজ্ঞাসা করেন। দীপ্তির মা ফোনে তাঁর মেয়েকে শান্ত থাকার পরামর্শ দেন। এর পর সকাল সাড়ে ১১টা নাগাদ দীপ্তিকে ফোন করলে তাঁকে আর পাননি তাঁর মা। সে সময়ে দীপ্তির শাশুড়িকে ফোন করলে তিনি জানান দীপ্তি বাইরে বেরিয়েছেন। কিছু ক্ষণ পর দীপ্তির স্বামীকেও ফোন করেন মৃতের মা। তিনি তখন জানান, দীপ্তি বাড়ি ফিরে এসেছেন।
দীপ্তির মায়ের দাবি, ওই দিন দুপুরেই দীপ্তির শ্বশুরবাড়ি থেকে ফোন আসে। তাঁদের জানানো হয়, দীপ্তিকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয় এবং সেখানে চিকিৎসক তাঁকে মৃত বলে মৃত ঘোষণা করেন।
এর পরেই দীপ্তির মায়ের প্রশ্ন, ফোনে কথা বলার কয়েক ঘণ্টার মধ্যে এমন কী হল যে তাঁর কন্যা এই পথ বেছে নিতে বাধ্য হলেন?
আরও পড়ুন:
দীপ্তির ভাই সংবাদসংস্থা এএনআইকে বলেছিলেন, শ্বশুরবাড়িতে দীপ্তির উপর অত্যাচার করা হত। তাঁর স্বামীর একাধিক সম্পর্ক ছিল। এক জনকে গোপনে বিয়েও করেছিলেন। এমনকি, মুম্বইয়ে অর্পিতের অবৈধ এক সন্তান রয়েছে বলে দাবি করেছেন দীপ্তির ভাই। ফলে মানসিক ভাবে দীপ্তি ভেঙে পড়েছিলেন। তাঁর ভাইয়ের কথায়, ‘‘আমরা সম্প্রতি ওঁর (দীপ্তির স্বামীর) বিবাহবহির্ভূত সম্পর্ক এবং গোপন বিয়ের খবর পেয়েছিলাম। বোনকে কলকাতার বাড়িতে নিয়েও এসেছিলাম। কিন্তু শ্বশুরবাড়ির লোকজন এসে ওকে আবার নিয়ে যান। ওঁরা কথা দিয়েছিলেন, বোনকে যত্নে রাখবেন। কিন্তু কথা রাখেননি।’’
মঙ্গলবার দুপুরে বসন্ত বিহারে চৌরাসিয়াদের বাসভবন থেকে দীপ্তির ঝুলন্ত দেহ উদ্ধার করে পুলিশ। তাঁর গলায় ওড়নার ফাঁস লাগানো ছিল। সংবাদসংস্থা এএনআই জানিয়েছে, দীপ্তির ঘর থেকে একটি সুইসাইড নোটও উদ্ধার হয়েছে। সূত্রের খবর, সেখানে তিনি কারও বিরুদ্ধে কোনও অভিযোগ তোলেননি। তবে লিখেছেন, ‘‘সম্পর্কের মধ্যে যদি ভালবাসা এবং বিশ্বাস না থাকে, তা হলে জীবনের অর্থ কী?’’ আর এখান থেকেই পুলিশের সন্দেহ পারিবারিক কোনও সমস্যাই দীপ্তিকে এই পথ বেছে নিতে বাধ্য করেছে। এরই মাঝে মৃতের শশুরবাড়ির বিরুদ্ধে একাধিক অভিযোগ উঠে আসছে। যদিও ব্যবসায়ী পরিবারের আইনজীবী এই সমস্ত অভিযোগ ‘ভিত্তিহীন’ বলে উড়িয়ে দিয়েছেন।