রান্নাঘরে এঁটো থালাবাসন। ডিমের খোসা। ভাতের হাঁড়ি আর কিছু উচ্ছিষ্ট। ওই বাড়িতেই কয়েক ঘণ্টা আগে আত্মহত্যা করেছেন কর্তা। একই সঙ্গে খুন করেছেন তিন মেয়েকে। যদিও মারতে চেয়েছিলেন পাঁচ সন্তানকেই। বিহারের মুজফ্ফরপুরের তিন কন্যা এবং পিতার মৃত্যুতে শোরগোল এলাকায়। সোমবার বাড়িতে দফায় দফায় তল্লাশি করে বিবিধ তথ্য জোগাড় করল পুলিশ।
সোমবার সকালে মুজফ্ফরপুরের একটি গ্রামের বাড়ি থেকে উদ্ধার হয় বাবা এবং তিন মেয়ের ঝুলন্ত দেহ। জখম অবস্থায় পাওয়া যায় দুই পুত্রকে। জানা যায়, সন্তানদের খুন করে আত্মহত্যা করেছেন অমরনাথ রাম। প্রতিবেশীরা বলছেন, এমন পরিণতির কারণ অর্থাভাব এবং বাড়ির কর্ত্রীর অকালমৃত্যু।
কম বয়সেই বিয়ে হয়েছিল অমরনাথের। তাঁর বর্তমান বয়স ৩৫-৩৬ বছর। পাঁচ সন্তানই নাবালক। গত বছর আচমকা মারা যান স্ত্রী। গ্রামের লোকজন বলছেন, স্ত্রীর মৃত্যুর পর থেকে মাঝেমাঝে অস্বাভাবিক আচরণ করতেন অমরনাথ। ছোটখাটো কাজ করতেন যুবক। সেই টাকা দিয়ে পাঁচটা ছোট ছোট ছেলেমেয়ের দেখভাল বেশ চাপের। তার পর বাড়ির যাবতীয় কাজ করতে হত। রান্নাবান্নাও নিজে করতেন। পুলিশ জানাচ্ছে, রান্নাঘর ঘুরে দেখে মনে হচ্ছে, রবিবার রাতে ডিম-ভাত রান্না হয়েছিল। খাওয়াদাওয়াও হয়েছে। তার পরেই অমরনাথের আত্মহত্যা এবং একই সঙ্গে তিন নাবালিকার খুনের ঘটনা ঘটেছে।
পুলিশ সূত্রে খবর, ঘরের মধ্যে থাকা লোহার ট্যাঙ্কের উপরে পাঁচ ছেলেমেয়েকে উঠিয়ে তাদের গলায় একাধিক শাড়ি পেঁচিয়ে ফাঁস তৈরি করে পরিয়ে দেন বাবা। শাড়িগুলো অমরনাথের প্রয়াত স্ত্রীর। শাড়ি পেঁচিয়ে এক প্রান্তের ফাঁস নিজের গলা দেন যুবক। তার পর সন্তানদের ঝাঁপিয়ে পড়তে বলে নিজেও ট্রাঙ্ক থেকে ঝাঁপ দেন। মায়ের শাড়ির ফাঁসে শ্বাসরোধ হয়ে মারা যায় তিন মেয়ে— ১২ বছরের অনুরাধা, ৭ বছরের শিবানী এবং ৬ বছরের রাধিকা। প্রাণে বেঁচে যায় অমরনাথের দুই ছেলে ৬ বছরের শিবম এবং ৫ বছরের চন্দন। শিবম গলায় ফাঁস পরলেও বাবার কথায় ঝাঁপ না দিয়ে গলা বার করে নেয়। তার ভাইয়ের গলা থেকে ফাঁস খুলে গিয়েছিল। দুই ভাই পড়ে যায় ঘরের এক কোণে। দুই নাবালকের চোখের সামনে মারা যায় বাবা এবং তিন দিদি।
আরও পড়ুন:
অমরনাথের আত্মহত্যা এবং তাঁর তিন কন্যার খুনে নানা তত্ত্ব উঠে আসছে। কেউ বলছেন, দেনার দায়েই সবাইকে মেরে নিজে মরতে চেয়েছিলেন অমরনাথ। প্রতিবেশীদের দাবি, একটি আর্থিক সংস্থা থেকে মোটা টাকা ঋণ নিয়েছিলেন অমরনাথ। সেই চাপ ছিল। তা ছাড়া পাঁচ সন্তানকে মানুষ করার চাপ তো ছিলই। আবার অনেকের দাবি, স্ত্রীর মৃত্যুর পর অমরনাথ মানসিক ভাবে এতটাই বিধ্বস্ত হয়ে পড়েছিলেন যে ভালমন্দ বিচারের ক্ষমতা লোপ পেয়েছিল। পরিবারের জন্য সব কাজ করতেন। কিন্তু কী করছেন, কেন করছেন জানতেন না। পুলিশ সমস্ত তথ্যই জোগাড় করেছে। তবে ঘটনার নেপথ্য কারণ নিয়ে এখনই স্থির কোনও সিদ্ধান্তে আসতে পারেনি তারা। পুলিশ জানিয়েছে, তদন্ত চলছে। ফরেন্সিক বিশেষজ্ঞদের সঙ্গেও কথাবার্তা বলছে তারা। আরও কয়েক দিন সময় লাগবে।
৬ বছরের শিবমের বয়ান অনুযায়ী, রাতে সে মোবাইল নিয়ে খুটখাট করছিল। হঠাৎ বাবা এসে গলায় ফাঁস জড়িয়ে খেলার নাম করে সকলকে ট্রাঙ্কের উপরে তুলে দেন এবং ঝাঁপ দিতে বলেছিলেন। কিন্তু সে ভয়ে ঝাঁপ দেয়নি।