যন্তর মন্তরে কৃষকদের বিক্ষোভে পঞ্জাবি অভিনেত্রী সনিয়া মান। বৃহস্পতিবার। পিটিআই
ব্যারিকেডের পর ব্যারিকেড। লাঠি হাতে খাকি উর্দির পুলিশ। কঠিন চাউনির আধাসেনা। এই নিরাপত্তার ঘেরাটোপের মধ্যে চলছে ‘সংসদ’। স্পিকার, ডেপুটি স্পিকার রয়েছেন। নতুন কৃষি আইনের প্রতিটি ধারা ধরে ধরে আলোচনা হচ্ছে। কিন্তু সেই সংসদ বসেছে যন্তর মন্তরের ফুটপাতে। সংসদ ভবন থেকে মাইল খানেক দূরে। এই সংসদ পরিচালনা করছেন কৃষকরা।
আট মাসের বেশি সময় ধরে টানা দিল্লির সীমানায় আন্দোলনে বসে থাকার পরে অবশেষে কৃষকেরা রাজধানীতে ঢোকার অনুমতি পেলেন। তা-ও মাত্র ২০০ জন। পুলিশি নিরাপত্তাতেই তাঁদের বাসে চড়িয়ে দিল্লি-হরিয়ানার সিংঘু সীমানায় আনা হল। তার মধ্যেই পুলিশ বার বার কৃষকদের বাস আটকাল। খানাতল্লাশির নামে হেনস্থা চলল। সব বাধা পেরিয়ে যন্তর মন্তরে কৃষক নেতারা নিজেদের সংসদ বসালেন।
সংসদের অধিবেশনের সময় আটশো-ন’শো জন সাংসদের নিরাপত্তায় যে পুলিশি বন্দোবস্ত থাকে, মাত্র ২০০ জন কৃষক নেতার জন্য তার কয়েক গুণ নিরাপত্তার বন্দোবস্ত করেছিল দিল্লি পুলিশ। এমনকি সাংবাদিকদেরও প্রথমে যন্তর মন্তরে ঢুকতে দেওয়া হয়নি। অনেক পরে মেলে ছাড়পত্র।
কেন এত নিরাপত্তা? মোদী সরকারের নতুন মন্ত্রী মীনাক্ষী লেখি আজ বিজেপির মঞ্চ থেকে মন্তব্য করলেন, ওঁরা কৃষক নন, ‘মাওয়ালি’। অর্থাৎ গুন্ডা। মীনাক্ষীর যুক্তি, ২৬ জানুয়ারি কৃষকদের মিছিল থেকেই যে হামলা হয়েছিল, সেটা ফৌজদারি অপরাধ ছিল। বিরোধীরা এ সবে মদত দিচ্ছে। কৃষক সংসদ থেকে কৃষক নেতারা পাল্টা যুক্তি দিয়েছেন— তাঁরা অশিক্ষিত, মূর্খ নন যে বিরোধীরা তাঁদের যা বোঝাবেন, সেটাই বুঝবেন। কৃষক নেতাদের পাল্টা অভিযোগ, বিরোধীরাই বরং নিজেদের ভূমিকা ঠিকমতো পালন করতে পারেননি। মুখে কৃষকদের হয়ে কথা বললেও, কৃষি আইন প্রত্যাহারের জন্য মোদী সরকারের উপরে চাপ তৈরি করতে পারেননি। কৃষক নেতা রাকেশ টিকায়েত বলেন, “আমরা গুন্ডা নই। অন্নদাতা।”
কৃষিমন্ত্রী নরেন্দ্র সিংহ তোমর বারবার দাবি করেছেন, কৃষকেরা আইন প্রত্যাহারের দাবি তুলছেন, কিন্তু আইনের কোথায় আপত্তি, তা বলতে পারছেন না। সেই দাবিকে ভুল প্রমাণিত করতেই আজ কৃষকরা যন্তর মন্তরের সংসদে তিন কৃষি আইনের প্রতিটি ধারা ধরে ধরে আলোচনা করেছেন। কৃষক সভার নেতা হান্নান মোল্লা বলেন, “আমরা সরকারের সঙ্গে আলোচনায় আইনের প্রতিটি ধারা দেখিয়েই আপত্তি জানিয়েছিলাম।”
কৃষকরা আজ আসল সংসদের সাংসদদের জন্য ‘হুইপ’ জারি করে বলেছেন, সংসদে আজ শুধু কৃষি আইন নিয়ে সরব হতে হবে। না হলে কোনও দলই কৃষকদের ভোট পাবে না। রাহুল গাঁধী-সহ কংগ্রেস সাংসদরা এ দিন সংসদ চত্বরে গাঁধী মূর্তির সামনে কৃষি আইনের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ দেখিয়েছেন। ১৩ অগস্ট পর্যন্ত প্রতিদিন কৃষকদের সংসদ চলবে। প্রতিদিনই কি ২০০ জন কৃষক নেতার জন্য এত নিরাপত্তা থাকবে?
পুলিশ কর্তাদের মুখে কুলুপ। কৃষক আন্দোলনের নেতা যোগেন্দ্র যাদব বলেন, “টিভির পর্দায় দেখা যাচ্ছে না বলে কৃষক আন্দোলন শেষ হয়নি। তবে সরকারের ভয়ের কারণ রয়েছে। কারণ সরকার জানে, এই ২০০ জনের পিছনে ২০ লক্ষ কৃষক রয়েছেন।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy