Advertisement
E-Paper

ঋণ মকুব না করে বাড়ানো হোক ফসলের সহায়ক মূল্য, বললেন সবুজ বিপ্লবের জনক

স্বামীনাথনের বক্তব্য, কৃষি ঋণ মকুব করলেই কৃষির উন্নতি হয় না। বরং তাতে দেশের অর্থনীতির উপর বোঝাটা বেড়ে যায়। চাষবাসও লাভজনক হয়ে ওঠে না। কৃষিকে বাজারমুখী করে তোলা যায় না।

সংবাদ সংস্থা

শেষ আপডেট: ২৩ ডিসেম্বর ২০১৮ ১৬:৫৫
কৃষিবিজ্ঞানী এম এস স্বামীনাথন। -ফাইল ছবি।

কৃষিবিজ্ঞানী এম এস স্বামীনাথন। -ফাইল ছবি।

ভোট কুড়নোর জন্য রাজনীতিকদের ঢালাও কৃষি ঋণ মকুব করতে বারণ করলেন ভারতে ‘সবুজ বিপ্লব’-এর জনক বিশিষ্ট কৃষিবিজ্ঞানী এম এস স্বামীনাথন। বললেন, তার বদলে বরং কৃষকরা যাতে ফসলের ন্যায্য দাম পান, ফসলের সহায়ক মূল্য যাতে অন্তত দেড় গুণ বাড়ে, তার উপর নজর দিন রাজনীতিকরা।

ভারতে ‘সবুজ বিপ্লব’-এর জনক, বিশিষ্ট কৃষিবিজ্ঞানী স্বামীনাথনের কথায়, ‘‘এ দেশে কৃষিতে যে সমস্যা রয়েছে, তা আমাদের অর্থনীতির সমস্যা। কৃষকদের বাঁচা-মরা নির্ভর করে বৃষ্টির পরিমাণ আর তাদের ফলানো ফসলের বাজারের উপর। ভোটের কথা ভেবে এটা রাজনীতিকরা বুঝতে চান না।’’ স্বামীনাথনের বক্তব্য, কৃষি ঋণ মকুব করলেই কৃষির উন্নতি হয় না। বরং তাতে দেশের অর্থনীতির উপর বোঝাটা বেড়ে যায়। চাষবাসও লাভজনক হয়ে ওঠে না। কৃষিকে বাজারমুখী করে তোলা যায় না। দিনকয়েক আগে একই কথা বলেছিলেন রিজার্ভ ব্যাঙ্কের প্রাক্তন গভর্নর বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ রঘুরাম রাজনও।

‘সবুজ বিপ্লব’-এর জনক মনে করেন, কৃষকরা যাতে তাঁদের ফলানো ফসলের ন্যায্য দাম পান, সেটাই সবার আগে ভাবা দরকার রাজনীতিকদের।

দেশের কৃষিব্যবস্থার হাল ফেরাতে তাঁর দেওয়া জনপ্রিয় রিপোর্টেও (‘স্বামীনাথন রিপোর্ট) একই কথা বলা হয়েছে। দেশের আপামর কৃষকদের অন্যতম প্রধান দাবিও সেটাই। দেশের বিভিন্ন প্রান্তের কৃষকদের দীর্ঘ দিনের দাবি, স্বামীনাথন রিপোর্ট কার্যকর করা হোক। কিন্তু তা করা হচ্ছে না।

আরও পড়ুন- কৃষি ঋণ মাফ রাজস্থানেও​

আরও পড়ুন- এ বার কৃষিঋণ মকুব মহারাষ্ট্রে, ৩৪০০০ কোটি টাকার দায় নিল সরকার​

কৃষিবজ্ঞানী স্বামীনাথনের মতো দেশের বেশির ভাগ কৃষকই মনে করেন, ফলানো ফসলের ন্যায্য দাম পেলে তাঁরা নিজের পায়ে দাঁড়াতে পারবেন। তখন চাষবাসের জন্য নেওয়া ঋণ শুধতে তাঁদের অসুবিধা হবে না।

কিন্তু সস্তায় ভোট কুড়োতে গত ৫ বছর ধরেই দেখা যাচ্ছে, বিভিন্ন রাজ্যের বিধানসভা ভোটে বামপন্থী, দক্ষিণপন্থী, অতি দক্ষিণপন্থী, সব দলই কৃষি ঋণ মকুবের প্রতিশ্রুতি দেয় তাদের নির্বাচনী ইশ্‌তেহারে। ভোটে জিতে এসে তারা ঢালাও ভাবে কৃষি ঋণ মকুবও করে দেয়। আর তার ফলে, সরকারের রাজস্ব আদায়ের পরিমাণ কমে। চাপ বাড়ে সেই আর্থিক বছরের বাজেটের উপর। তার ফলে উৎপাদিত ফসলের পর্যাপ্ত বাজার গড়ে তোলা যায় না।

এ বারও তার ব্যাতিক্রম হয়নি পাঁচ রাজ্যের সদ্য সমাপ্ত বিধানসভা নির্বাচনে। ভোটে জিতে দায়িত্ব নেওয়ার পর মধ্যপ্রদেশের কংগ্রেসি মুখ্যমন্ত্রী কমল নাথের প্রথম কাজটাই ছিল কৃষি ঋণ মকুব করে দেওয়া। তিনি ২ লক্ষ টাকা পর্যন্ত কৃষি ঋণ মকুবের ঘোষণা করেন। তাতে ওই রাজ্যের প্রায় ৩৪ লক্ষ কৃষক কিছুটা রেহাই পেলেও, ওই সরকারি সিদ্ধান্তের জেরে মধ্যপ্রদেশ সরকারকে বাড়তি ৩৫ হাজার থেকে ৩৮ হাজার কোটি টাকার বোঝা ঘাড়ে নিতে হয়েছে। ছত্তীসগঢ়েও টানা ১৫ বছর ক্ষমতাসীন বিজেপি সরকারকে গদীচ্যূত করে কংগ্রেসের ভূপেশ বাঘেল মুখ্যমন্ত্রী হওয়ার পরেই সাড়ে ১৬ লক্ষেরও বেশি কৃষকের স্বল্পমেয়াদি ঋণ মকুবের কথা ঘোষণা করেছেন। যার জেরে ছত্তীসগঢ় সরকারের ঘাড়ে বাড়তি আর্থিক বোঝা চেপেছে ৬ হাজার ১০০ কোটি টাকার। রাজস্থানে বিজেপি সরকারকে হঠিয়ে ক্ষমতায় এসে কংগ্রেসি মুখ্যমন্ত্রী অশোক গেহলতও ওই ঋণ মকুবের ঘোষণা করেছেন। যার ফলে, রাজস্থান সরকারকে বাড়তি ১৮ হাজার কোটি টাকার বোঝা ঘাড়ে নিতে হয়েছে। কৃষি ঋণ মকুব করে শুধু ওই তিনটি রাজ্যেরই ৫৯ হাজার ১০০ কোটি থেকে ৬২ হাজার ১০০ কোটি টাকার বাড়তি বোঝা কাঁধে নিতে হয়েছে।

স্বামীনাথনের কথায়, ‘‘এর ফলে, কৃষির বাজার তৈরি করতে অসুবিধা হবে। কৃষি লাভজনক হয়ে উঠবে না এই কৃষিনর্ভর দেশের অর্থনীতিতে। খুব সঙ্কটজনক পরিস্থিতিতেই কৃষি ঋণ মকুব করা যায়। কিন্তু এখন সেটা ঢালাও ভাবে হচ্ছে। এতে ভোটের বাক্সে রাজনীতিকদের লাভ হচ্ছে ঠিকই, কিন্তু আখেরে কৃষিরই ক্ষতি হচ্ছে।’’

কোনটা করলে ভাল হত, তারও দিশা দেখিয়েছেন স্বামীনাথন। বলেছেন, ‘‘ফসলের সহায়ক মূল্য অন্তত দেড় গুণ বাড়ানো অনেক বেশি জরুরি। তাতে কৃষকরা নিজের পায়ে দাঁড়াতে পারবেন।’’

Swaminathan Loan Waiver Farmers এম এস স্বামীনাথন
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy