চলতি বছরে নির্ধারিত সময়ের আগেই বর্ষা ঢুকে গিয়েছে কেরলে। গত ৭৫ বছরে এই প্রথম বার বর্ষার আগাম আগমন! তার প্রভাব পড়েছে মহারাষ্ট্রেও। একটানা বৃষ্টিতে রীতিমতো নাজেহাল অবস্থা দেশের বাণিজ্যনগরী মুম্বইয়ের। সোমবার সারা রাত বৃষ্টির পর সকালেও ঝিরঝির করে বৃষ্টি চলছে। শুধু রবিবার রাত থেকে সোমবার বিকেলের মধ্যেই শহরের কোথাও কোথাও ২০০ মিলিমিটারেরও বেশি বৃষ্টি হয়েছে! ভারতের আবহাওয়া দফতর (আইএমডি)-এর রেকর্ড বলছে, শেষবার মুম্বইয়ে মে মাসে এত বৃষ্টি হয়েছিল ১৯১৮ সালে, অর্থাৎ আজ থেকে ১০৭ বছর আগে!
আরও পড়ুন:
মুম্বইয়ের পাশাপাশি মহারাষ্ট্রের ঠাণে, রায়গড়, রত্নগিরি এবং পার্শ্ববর্তী জেলাগুলিতে বজ্রবিদ্যুৎ-সহ ঝড়বৃষ্টির লাল সতর্কতা জারি হয়েছে। সোমবারও দিনভর বৃষ্টিতে শহরে ব্যাহত হয়েছিল ট্রেনচলাচল। যানচলাচলে ভোগান্তি পোহাতে হয়েছিল শহরবাসীকে। জলমগ্ন হয়ে যায় শহরের বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ এলাকা। একটি ভূগর্ভস্থ স্টেশন জলে ডুবে যাওয়ায় মেট্রো পরিষেবাও স্থগিত রাখা হয়। বৃহন্মুম্বই পুরসভা (বিএমসি)-র স্বয়ংক্রিয় আবহাওয়া স্টেশনের রেকর্ড অনুসারে, রবিবার মধ্যরাত থেকে সোমবার সকাল পর্যন্ত শহরের কোথাও কোথাও ২০০ মিলিমিটারেরও বেশি বৃষ্টি হয়েছে। নরিমান পয়েন্টে ২৫২ মিলিমিটার, বাইকুল্লায় ২১৩ মিলিমিটার, কোলাবায় ২০৭ মিলিমিটার, মেরিন লাইন্স এবং চন্দনওয়াড়ি এলাকায় ১৮০ মিলিমিটার, মেমনওয়াড়ায় ১৮৩ মিলিমিটার এবং ওরলিতে ১৭১ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছে। সমগ্র মুম্বইয়ে গড়ে মোট ১০৬ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছে গত ২৪ ঘণ্টায়।
আরও পড়ুন:
রেকর্ড বলছে, চলতি বছরের মে মাসে এখনও পর্যন্ত কোলাবায় মোট ২৯৫ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছে। এর আগে ১৯১৮ সালের মে মাসে সেখানে ২৭৯.৪ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছিল। তার পর থেকে ১০৭ বছরে এত বৃষ্টি দেখেনি মুম্বই! আইএমডি-র বিজ্ঞানী সুষমা নায়ার ‘ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস’কে বলেন, ‘‘আমরা এখন যা দেখছি তা হল মৌসুমি বৃষ্টিপাত। দক্ষিণ মুম্বইয়ের কোলাবায় মঙ্গলবার সকালেও অতিভারী বৃষ্টি হয়েছে। ভারী বৃষ্টি হচ্ছে রায়গড় জেলাতেও। মঙ্গলবারও দিনভর মাঝারি থেকে ভারী বৃষ্টি চলবে।’’
মুম্বইয়ে বর্ষা শুরুর স্বাভাবিক তারিখ ১১ জুন। ১৯৫০ সাল থেকে এখনও পর্যন্ত প্রাপ্ত তথ্য ঘেঁটে দেখা যাচ্ছে, গত ৩৫ বছরে এই প্রথম বার এত দিন আগে বর্ষার আগমন ঘটেছে শহরে! ফলে জুন মাস পড়ার আগেই টানা বৃষ্টির জেরে কার্যত থমকে গিয়েছে মুম্বই। শহরের একাধিক এলাকা জলমগ্ন। ব্যাহত যান চলাচল ও বিমান পরিষেবা। কুরলা, সিওন, দাদার এবং পারেলের নিচু এলাকাগুলিতে জনজীবন বিপর্যস্ত। জলমগ্ন রাস্তা দিয়েই কোনওমতে চলছে যানবাহন। অবিরাম বৃষ্টির জেরে কোথাও কোথাও জল জমে গিয়েছে রেললাইনেও। নাগরিকদের সতর্ক থাকার পরামর্শ দিয়েছে রাজ্য প্রশাসন। সোমবার পরিস্থিতি পর্যালোচনা করতে বারামতীর দুর্যোগ-কবলিত এলাকা পরিদর্শন করেন মহারাষ্ট্রের উপ-মুখ্যমন্ত্রী অজিত পওয়ার। মুখ্যমন্ত্রী দেবেন্দ্র ফডণবীস এবং উপ-মুখ্যমন্ত্রী একনাথ শিন্দেও সমস্ত নিরাপত্তা সংস্থাকে সতর্ক থাকার নির্দেশ দিয়েছেন।