আগামী তিন দিনের মধ্যেই রাজ্যে ঢুকতে পারে মৌসুমি বায়ু। এ বার এমনটাই জানাল আলিপুর আবহাওয়া দফতর। এর জেরে আপাতত সপ্তাহভর ঝড়বৃষ্টি চলতে পারে কলকাতা-সহ দক্ষিণবঙ্গে। সপ্তাহ জুড়ে সমুদ্র উত্তাল থাকবে। তাই আগামী কয়েক দিনের জন্য মৎস্যজীবীদের সমুদ্রে যাওয়ার উপরেও জারি হয়েছে সতর্কতা।
আলিপুর জানিয়েছে, সোমবার মধ্য-পশ্চিম বঙ্গোপসাগর এবং সংলগ্ন উত্তর বঙ্গোপসাগরে আরও কিছুটা পথ এগিয়েছে দক্ষিণ-পশ্চিম মৌসুমি বায়ু। প্রবেশ করেছে মিজ়োরাম, ত্রিপুরা, মণিপুর, অসম, মেঘালয়, অরুণাচল প্রদেশ এবং নাগাল্যান্ডের স্থলভাগেও। আগামী তিন দিনে দক্ষিণ-পশ্চিম মৌসুমি বায়ু উপকূলীয় বঙ্গোপসাগর এবং উত্তর-পূর্ব ভারতের রাজ্যগুলির পাশাপাশি সিকিম হয়ে উত্তরবঙ্গে ঢুকবে। এ ছাড়া, মঙ্গলবারই বঙ্গোপসাগরে একটি নিম্নচাপ দানা বাঁধার সম্ভাবনা রয়েছে। সেই সঙ্গে হাওয়ার গতি অনুকূল থাকার কারণে বুধবার থেকে পর পর কয়েক দিন কলকাতা-সহ দক্ষিণবঙ্গের বেশ কিছু জেলায় ভারী ঝড়বৃষ্টি হতে পারে। কোথাও কোথাও ভারী থেকে অতিভারী বৃষ্টির সম্ভাবনা রয়েছে। বৃষ্টির পাশাপাশি ঘণ্টায় ৩০ থেকে ৪০ কিলোমিটার বেগে বইবে ঝোড়ো হাওয়া।
আরও পড়ুন:
রবিবারের পর সোমবারও সকাল থেকে বৃষ্টি শুরু হয়েছে কলকাতা-সহ দক্ষিণবঙ্গের বেশ কিছু জেলায়। মঙ্গলবার থেকে সপ্তাহের প্রায় প্রতি দিনই দক্ষিণবঙ্গের জেলাগুলিতে বিক্ষিপ্ত ভাবে ঝড়বৃষ্টি চলবে। বুধবার থেকে দুর্যোগের প্রকোপ বাড়বে। ওই দিন উত্তর ২৪ পরগনা, দক্ষিণ ২৪ পরগনা, পূর্ব ও পশ্চিম মেদিনীপুরে ভারী বৃষ্টি (৭ থেকে ১১ সেন্টিমিটার) হতে পারে। বৃহস্পতিবার বজ্রবিদ্যুৎ-সহ ভারী বৃষ্টির সম্ভাবনা রয়েছে কলকাতা, হাওড়া, হুগলি, উত্তর ২৪ পরগনা, দক্ষিণ ২৪ পরগনা, দুই মেদিনীপুর, ঝাড়গ্রাম এবং বাঁকুড়ায়। ওই জেলাগুলিতে বৃষ্টির পাশাপাশি ঘণ্টায় ৩০ থেকে ৪০ কিলোমিটার বেগে ঝোড়ো হাওয়াও বইবে বলে জানিয়েছে আলিপুর। শুক্রবার ভারী থেকে অতিভারী বৃষ্টির (৭ থেকে ২০ সেন্টিমিটার) সতর্কতা রয়েছে দুই বর্ধমান, বাঁকুড়া, দুই মেদিনীপুর, হুগলি এবং বীরভূমে। ওই জেলাগুলির জন্য ভারী বর্ষণের লাল সতর্কতা জারি হয়েছে। শনিবার দুর্যোগ চলবে বীরভূম এবং মুর্শিদাবাদে। অন্য দিকে, উত্তরবঙ্গে বৃহস্পতিবার থেকে ভারী বৃষ্টি শুরু হবে। উত্তর দিনাজপুর এবং কোচবিহারে বৃহস্পতিবার ভারী থেকে অতিভারী বৃষ্টির (৭ থেকে ২০ সেন্টিমিটার) সম্ভাবনা রয়েছে। শুক্র ও শনিবার ভারী থেকে অতিভারী বৃষ্টি হতে পারে দার্জিলিং, কালিম্পং, জলপাইগুড়ি, আলিপুরদুয়ার এবং কোচবিহারে। ওই দিন উত্তরের বাকি জেলাগুলিতেও ভারী বৃষ্টি হতে পারে।
শনিবার কেরলে নির্দিষ্ট সময়ের আট দিন আগে আনুষ্ঠানিক ভাবে বর্ষার প্রবেশ ঘটেছে। এ রাজ্যেও আগাম বর্ষা প্রবেশের সম্ভাবনা রয়েছে। আবহাওয়া দফতর জানিয়েছে, আগামী তিন দিনের মধ্যেই উত্তরবঙ্গ হয়ে বর্ষা ঢুকে পড়বে রাজ্যে। সাগরে নিম্নচাপের জেরে বুধবার থেকে সমুদ্র উত্তাল থাকবে বলে জানিয়েছে আলিপুর। আপাতত চার দিন মৎস্যজীবীদের পশ্চিমবঙ্গ এবং ওড়িশার উপকূলে যেতে নিষেধ করা হয়েছে। সুন্দরবনের উপকূল জুড়ে দুর্যোগের আগাম প্রস্তুতিও শুরু করে দিয়েছে প্রশাসন। সোমবার সকাল থেকেই বকখালি ও গঙ্গাসাগরের মতো এলাকাগুলিতে মাইকিং করে সাধারণ মানুষকে সতর্ক করা হচ্ছে। সমুদ্রসৈকতে পর্যটকদের নিরাপত্তায় পুলিশবাহিনীও মোতায়েন করা হয়েছে। পানীয় জল ও শুকনো খাবার মজুত করে রাখা হয়েছে এখন থেকেই। সম্ভাব্য দুর্যোগের মোকাবিলায় প্রতিটি ব্লক অফিসে খোলা হয়েছে কন্ট্রোল রুম। সোমবার সাগর ব্লক অফিসে এ নিয়ে জরুরি প্রশাসনিক বৈঠকও ডাকা হয়েছে। বৈঠকে উপস্থিত থাকবেন সুন্দরবন উন্নয়নমন্ত্রী বঙ্কিমচন্দ্র হাজরা।