‘মরেছে তো কয়েকটা পাইন গাছ আর একটা কাক! আর কিছুই হয়নি’! ২০১৯ সালের ২৬ ফেব্রুয়ারি খাইবার পাখতুনখোয়া প্রদেশের বালাকোটে ভারতীয় বায়ুসেনার হামলার পরে স্থানীয় বাসিন্দাদের জনে জনে ধরে এমন মন্তব্য প্রচার করেছিল পাক মিডিয়া। দাবি করেছিল, পুলওয়ামা নাশকতার ১২ দিন পরের ভারতীয় প্রত্যাঘাত পুরোপুরি ব্যর্থ!
পহেলগাঁও হত্যাকাণ্ডের ১৫ দিনের মাথায় পাক অধিকৃত কাশ্মীর এবং পঞ্জাব প্রদেশের ন’টি জঙ্গি ডেরায় ‘অপারেশন সিঁদুর’-এর পরে কিন্তু ক্ষয়ক্ষতির কথা প্রকাশ্যে কবুল করছে ইসলামাবাদ। পাক সংবাদমাধ্যমেও উঠে আসছে ‘আকস্মিকতা এবং ভয়াবহতা’র খণ্ডচিত্র। বালাকোট কাণ্ডের পরে নয়াদিল্লির সাফল্য নিয়ে সংশয় প্রকাশ করা আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যেও উঠে এসেছে পাকিস্তানের মাটিতে নিখুঁত নিশানায় ভারতীয় বাহিনীর প্রত্যাঘাতের কথা।
সংবাদ সংস্থা রয়টার্সে প্রত্যক্ষদর্শীদের বয়ান প্রকাশ করে জানিয়েছে, পাক অধিকৃত কাশ্মীরের রাজধানী মুজফ্ফরাবাদের একটি এলাকায় অন্তত ১০-১৫টি ক্ষেপণাস্ত্র আঘাত হেনেছে। মুজফ্ফরাবাদের উপকণ্ঠে নীলম রোড এলাকার বাসিন্দা আহমেদ আব্বাসি বলেছেন, ‘‘গভীর রাতে অন্তত ১০-১৫টা ক্ষেপণাস্ত্র আছড়ে পড়ল বায়াত-উল-মুজাহিদিনে।’’ ওই বায়াত-উল-মুজাহিদিন মাদ্রাসা আদতে লশকরের প্রশিক্ষণ এবং অস্ত্র-রসদ সরবরাহে ব্যবহৃত সওয়াই নালা ক্যাম্প বলে ভারতীয় সেনার দাবি। আব্বাসি এবং তাঁর পড়শিরা জানিয়েছেন, আবার হামলার আশঙ্কায় তাঁরা আতঙ্কিত।
বুধবার সকালে ভারতীয় সেনার ‘প্রেস ব্রিফিং’ (সাংবাদিক বৈঠক নয়) জানিয়েছিল, মঙ্গলবার রাত ১টা ৫ থেকে দেড়টা পর্যন্ত চলা অপারেশনে মুজফ্ফরাবাদের মোট দু’টি সন্ত্রাসবাদী ডেরায় হামলা চালানো হয়েছে। প্রথমটি নিয়ন্ত্রণরেখা থেকে প্রায় ৩০ কিলোমিটার দূরবর্তী সওয়াই নালায় লশকর-এ-ত্যায়বার শিবির। পহেলগাঁও হত্যাকাণ্ডের আগে এখানেই আশ্রয় নিয়েছিল লশকরের ছায়া সংগঠন ‘দ্য রেজিস্ট্যান্স ফ্রন্ট’ (টিআরএফ)-এর ঘাতকবাহিনী। ২৬/১১ সন্ত্রাসের জঙ্গি আজমল কসাব প্রশিক্ষণ নিয়েছিল এখানেই। দ্বিতীয়টি তার অদূরের মারকাজ় সঈদনা বিলালে আর এক পাক জঙ্গিগোষ্ঠী জইশ-ই-মহম্মদের প্রশিক্ষণ শিবির। সেখানকার বাসিন্দা মহম্মদ শাহির মির রয়টার্সকে জানিয়েছেন, তীব্র আগুনের ঝলক আর প্রচণ্ড বিস্ফোরণের শব্দ শোনার পরে বাড়ি ছেড়ে অদূরের পাহাড়ের দিকে পালিয়ে গিয়েছিলেন তাঁরা।