সকাল থেকেই গোটা পরিবার উত্সবের মেজাজে ছিল। কিন্তু মুহূর্তেই জন্মদিনের সেই আনন্দ যে শোকের চেহারা নেবে তা জানতেন না কেউই। যার জন্মদিন, সাত সকালেই লখনউয়ের অভিজাত এলাকায় রাস্তার ধারে খুঁজে পাওয়া গেল তাঁর দেহ। আর সেই খবর উত্তরপ্রদেশের বাহারাইচের বাড়িতে পৌঁছতেই কান্নায় ভেঙে পড়ল গোটা পরিবার।
পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, বুধবার সকালে লখনউয়ের হজরতগঞ্জ এলাকায় রাস্তার ধারে আইএএস অফিসার অনুরাগ তিওয়ারির দেহ মেলে। রাস্তায় দেহ পড়ে থাকতে দেখে পুলিশে খবর দেন স্থানীয়েরা। এর পর সেই দেহ উদ্ধার করে পুলিশ। হজরতগঞ্জ থানার এক পুলিশ আধিকারিক এ পি সিংহ জানিয়েছেন, অনুরাগের আইডেন্টিটি কার্ড দেখে তাঁরা শনাক্ত করেন। থুতনি ছাড়া তাঁর দেহের অন্য কোথাও কোনও আঘাতের চিহ্ন ছিল না।
ওই আইএস আধিকারিকের পরিবার সূত্রে খবর, অনুরাগের জন্মদিন উপলক্ষে বাড়িতে পুজোর আয়োজন করেছিলেন তাঁরা। কিন্তু এই আকস্মিক মৃত্যু সব কিছুই শেষ করে দিয়েছে। পুলিশ সূত্রে খবর, উত্তরপ্রদেশের বাহারাইচের বাসিন্দা অনুরাগ তিওয়ারি বেঙ্গালুরুতে খাদ্য সরবরাহ এবং ক্রেতাসুরক্ষা দফতরে কমিশনার পদে কর্মরত ছিলেন। গত দু’দিন ধরে হজরতগঞ্জের মীরাবাঈ গেস্ট হাউসে ছিলেন তিনি। সঙ্গে ছিলেন বন্ধু প্রভু নারাইন সিংহ। দু’দিন আগে লালবাহাদুর শাস্ত্রী ন্যাশনাল অ্যাকাডেমি অফ অ্যাডমিনিস্ট্রেশন আয়োজিত একটি প্রশিক্ষণ কর্মসূচিতে যোগদান করতে তাঁরা দু’জনেই মুসৌরি গিয়েছিলেন। সেখান থেকে লখনউতে এসে মীরা গেস্ট হাউসে ওঠেন।
আরও পড়ুন
৮ অগস্ট রাজ্যসভার ভোট, বাংলার ৬ আসনের মধ্যে ৫টিতেই নিশ্চিত তৃণমূল
লখনউ পুলিশের আইজি জে এন সিংহ জানান, গেস্ট হাউস থেকে মাত্র দশ মিটার দূরে অনুরাগের দেহ পড়ে ছিল। পরনে ছিল রাতপোশাক। মঙ্গলবার ওই বন্ধুর সঙ্গেই রাতের খাওয়া সারেন তিনি। ওই বন্ধু পি এন সিংহ সকাল ৬টা নাগাদ গোমতী নগর স্টেডিয়ামে ব্যাডমিন্টন খেলতে বেরিয়ে যান। একই সময় প্রাতঃভ্রমণে বেরোন অনুরাগ। সকাল পৌনে সাতটা নাগাদ পুলিশের কাছে ফোন আসে, রাস্তার ধারে এক অজ্ঞাতপরিচয় ব্যক্তির দেহ পড়ে রয়েছে। ঘটনাস্থলে পৌঁছে দেহ শনাক্ত করে পুলিশ।
এই মৃত্যুতে সত্যিই কোনও রহস্য রয়েছে কি না তা খতিয়ে দেখছে পুলিশ। প্রাথমিক তদন্তে পুলিশের অনুমান, হৃদরোগে আক্রান্ত হয়েই মৃত্যু হয়েছে ওই অফিসারের। আইজি জানিয়েছেন, তাঁর দেহ ফরেন্সিক ল্যাবরেটরিতে পাঠানো হয়েছে। ময়নাতদন্দের রিপোর্ট আসার পরেই মৃত্যুর সঠিক কারণ জানা যাবে।
অনুরাগের পরিবার সূত্রে খবর, বেশ কয়েক মাস ধরেই তিনি মানসিক অবসাদে ভুগছিলেন। স্ত্রীর সঙ্গে বিবাহবিচ্ছেদই এই অবসাদের কারণ বলে তাঁদের মত। তাঁর এক আত্মীয়ের কথায়, ‘‘টিভি দেখে তাঁর মৃত্যুর খবর জানতে পারি। মাত্র ১৫দিন আগেই আমাদের সঙ্গে কথা হয়েছে।’’
তাঁর মৃত্যুতে শোক প্রকাশ করে টুইট করেছেন কর্নাটকের মুখ্যমন্ত্রী সিদ্দারামাইয়া। তিনি লেখেন, ‘কর্নাটকের আইএএস অফিসারের এই দুর্ভাগ্যজনক মৃত্যুতে আমি শোকাহত। তাঁর পরিবারের প্রতি সমবেদনা জানাই।’