গত ২৭ ফেব্রুয়ারি বাদগামে ভেঙে পড়ে এই চপার। ছবি- টুইটারের সৌজন্যে।
কোথায় গেল সেই ব্ল্যাক বক্সটা? কেউ তার খোঁজ পাচ্ছেন না। চলছে হা-হন্যে তল্লাশি। বায়ুসেনার অফিসাররা এলাকার ঘরে ঘরে ঢুকে খুঁজেছেন। পাননি। গ্রামে গ্রামে সেই ব্ল্যাক বক্স হারিয়ে যাওয়ার বার্তা এতটাই রটে গিয়েছে যে, ৮০ বছর বয়সী ফতিমা দেবী কোনও দিন বিমান না দেখলেও, তাঁর কানে ঢুকে গিয়েছে শব্দটা। ব্ল্যাক বক্স। ছেলেছোকরাদের হাতে হাতে ঘোরা মোবাইল ফোনে ছবিও দেখেছেন ব্ল্যাক বক্সের।
বালাকোটের ঘটনার পরেই গত ২৭ ফেব্রুয়ারি জম্মু-কাশ্মীরের গারিয়েন্দ কালান গ্রামের একটি ক্ষেতে ভেঙে পড়েছিল যে ‘এমআই-১৭ ভি-ফাইভ’ চপার, ব্ল্যাক বক্সটি তারই। হেলিকপ্টারটি ভেঙে পড়ায় ৬ ভারতীয় বায়ুসেনা ও এক গ্রামবাসীর মৃত্যু হয়েছিল।
বায়ুসেনার দাবি, কী ভাবে সেই হেলিকপ্টার ভেঙে পড়ল তার তদন্ত সম্ভব হচ্ছে না। কারণ, খোঁজ মিলছে না চপারের ব্ল্যাক বক্সের। কমলা রঙের সেই ব্ল্যাক বক্সেই যে থাকে ভয়েস রেকর্ডার। যেখানে ধরা থাকে ককপিটের যাবতীয় কথোপকথন।
যে ফতিমা দেবী কখনও বিমানই দেখেননি, তিনি বললেন, ‘‘এই ক’দিনে বহু লোক এখানে এসে ওই ডাব্বাটা খুঁজেছে। ওরা আমাকে বলেছে সেটা দেখতে কেমন। সেটা দিয়ে কী কাজ হয়।’’
আরও পড়ুন- ভোট নিয়ে উদাসীন পুলওয়ামা-শোপিয়ান
আরও পড়ুন- নৌবাহিনীর জাহাজে সপরিবার প্রমোদ ভ্রমণ, রাজীব গাঁধীকে ফের আক্রমণ মোদীর
ওই বায়ুসেনা অফিসারদের মুখে শুনে শুনেই ব্ল্যাক বক্স সম্পর্কে মনে মনে একটা ধারণা তৈরি করে নিয়েছেন ফতিমা দেবী। এলাকার ছেলেছোকরারা এসেও সেই ব্ল্যাক বক্সের গল্প শুনিয়েছে বৃদ্ধাকে।
ছোটদের মুখে শুনে শুনে এতটাই জেনে গিয়েছেন যে ফতিমা দেবীও বললেন, ‘‘আমাদের সব বাচ্চারা জানে, সেটা কী জিনিস। সেটা কী ভাবে কাজ করে, আমাদের বাচ্চারা সেটাও বুঝিয়ে দিতে পারবে আপনাদের। আমিও পারব। আমরা সবাই জিনিসটা দেখেছি ফোনে।’’
কী হয়েছিল ওই দিনটায়?
এলাকার বাসিন্দা ৩৬ বছর বয়সী ফাহমিদা বললেন, ‘‘তিনটি বিমানকে একই সঙ্গে উড়তে দেখেছিলাম। চপার ভেঙে পড়ার সময় বাড়ির উঠোনেই ছিলাম। দেখলাম, চপার (হেলিকপ্টার)-টার পিছনে খুব জোরে ধাওয়া করছে দু’টি বিমান।’’
দু’টি বিমান চপারটিকে খুব দ্রুত গতিতে ধাওয়া করছে দেখে ফাহমিদা আর তাঁর পড়শিরা ভেবেছিলেন, ভারত, পাকিস্তানের মধ্যে বোধহয় যুদ্ধ লেগে গিয়েছে।
ফাহমিদা আর তাঁর পড়শি গুলশন বানু বললেন, ‘‘হঠাৎ দেখলাম, চপারটিকে পিছন থেকে গিয়ে অসম্ভব জোরে ধাক্কা মারল একটি বিমান। বিকট একটা শব্দ হল। আকাশে দেখলাম আগুনের গোলা। আর দেখলাম চপারটি জ্বলতে জ্বলতে নীচে নেমে আসছে। ভয় পেয়ে আমরা যে যে দিকে পারি ছুটে পালানোর চেষ্টা করেছিলাম, প্রাণে বাঁচতে।’’
গুলশনের বাড়ির অল্প দূরেই আছড়ে পড়েছিল ভেঙে পড়া চপারের বড় অংশটি। আরও বহু টুকরো ছড়িয়ে পড়েছিল বিশাল এলাকা জুড়ে।
‘‘বিমান ভেঙে পড়ার বিকট শব্দে আমার বাড়ির দেওয়ালেও চিড় ধরে’’, বললেন গুলশন। আর এক গ্রামবাসী মহম্মদ জাফরের কথায়, ‘‘অনেকের বাড়ির ছাদ এমনকী, উচু উচু গাছের মাথাতেও পড়েছিল ভেঙে পড়া চপারের টুকরোটাকরা। জাফর এও জানালেন, দু’-দু’টি অ্যাপল ফোনও তাঁদের বাড়ির উঠোনে এসে পড়েছিল। একটি একেবারেই পুড়ে গিয়েছিল। অন্যটি তখনও চলছিল।’’
চপারটি ভেঙে পড়ার কিছু ক্ষণের মধ্যেই গ্রামে চলে এসেছিলেন বায়ুসেনার অফিসাররা। তাঁদের দেখে ইট-পাটকেল ছুড়তে শুরু করেন গ্রামবাসীরা। পরে গ্রামের অন্য বাসিন্দারা তাঁদের বুঝিয়েসুজিয়ে নিরস্ত করেন। বড়সড় একটা ব্যাগও এসে পড়েছিল গ্রামের বাসিন্দা মহম্মদ ইউসুফ গানাইয়ের বাড়ির উঠোনে। গানাইয়ের কথায়, ‘‘প্রথমে ভেবেছিলাম আমার ছেলের স্কুল ব্যাগ। কিন্তু কাছে গিয়ে মনে হল, ওটা বিমান থেকেই পড়েছে। ওর ভিতের কোনও বোমাটোমা থাকতে পারে।’’ বায়ুসেনার অফিসাররা এসে ওই ব্যাগটি নিয়ে যান, জানালেন গানাই।
গানাই বললেন, ‘‘ওরা বলছে বটে, বিমানের ব্ল্যাক বক্স পায়নি। আমাদের ছেলেছোকরারা সেটা লুকিয়ে রেখেছে। কিন্তু আমরা ও সবে বিশ্বাস করি না। ওরা এসে তন্নতন্ন খুঁজে হাতের কাছে যা যা পেয়েছিল, সব নিয়ে গিয়েছে। ওরা ঘরে ঘরে ঢুকে তন্নতন্ন করে সব কিছু খুঁজেছে, নিয়েও গিয়েছে। তাই আমার বিশ্বাস হয় না, ব্ল্যাক বক্সটা আমাদের গ্রামেই কোথাও রয়ে গিয়েছে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy