দিল্লি পুলিশ বা অন্য তদন্তকারী সংস্থার তরফে এখনও পর্যন্ত সরকারি ভাবে কিছু জানানো হয়নি। তবে লালকেল্লার সামনে গাড়ি বিস্ফোরণের ঘটনায় উঠে এসেছে এক কাশ্মীরি চিকিৎসকের নাম। সংবাদ সংস্থা পিটিআই সূত্রে খবর, বিস্ফোরণের আগে ওই গাড়িটি ব্যবহার করছিলেন কাশ্মীরের পুলওয়ামার বাসিন্দা উমর মহম্মদ নামে জনৈক এক চিকিৎসক।
সংবাদমাধ্যমের একাংশ বিভিন্ন সূত্রে জানাচ্ছে, শ্রীনগরের এক মেডিক্যাল কলেজ থেকে ডাক্তারির পড়াশোনা করেছেন ৩৬ বছর বয়সি উমর। ২০১৭ সালে এমবিবিএস পাশ করেন। ফরিদাবাদকাণ্ডের সঙ্গে দিল্লির বিস্ফোরণের সরাসরি কোনও যোগসূত্র এখনও উঠে আসেনি। পুলিশ এখনও এ বিষয়ে প্রকাশ্যে কোনও মন্তব্য করেনি। তবে যোগসূত্র থাকার সম্ভাবনাও একে বারে উড়িয়ে দেওয়া যাচ্ছে না।
সোমবার সন্ধ্যায় যে গাড়িটিতে বিস্ফোরণ হয়েছিল, সেটির নম্বর প্লেট ছিল হরিয়ানার। সাদা রঙের ওই ‘হুন্ডাই আই২০’ গাড়ির রেজিস্ট্রেশন রয়েছে জনৈক মহম্মদ সলমনের নামে। সোমবার রাতেই তাঁকে আটক করে জিজ্ঞাসাবাদ শুরু করেন তদন্তকারীরা। সূত্রের খবর, জেরায় সলমন দাবি করেছেন, তিনি আর ওই গাড়ির মালিক নন। গাড়িটি তিনি তারেক নামে পুলওয়ামার এক বাসিন্দাকে বিক্রি করে দিয়েছেন। পিটিআই সূত্রে দাবি করা হচ্ছে, জনৈক ওই তারেকের থেকেই গাড়িটি পেয়েছেন উমর।
লালকেল্লার কাছে ওই গাড়িতে বিস্ফোরণের পরে আশপাশের এলাকার বিভিন্ন সিসি ক্যামেরার ফুটেজ খতিয়ে দেখতে শুরু করেছেন তদন্তকারীরা। সিসি ক্যামেরার একটি ফুটেজ ইতিমধ্যে প্রকাশ্যে এসেছে। তাতে দেখা যাচ্ছে, দুপুর থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত প্রায় তিন ঘণ্টা লালকেল্লার কাছে একটি পার্কিংয়ে দাঁড়িয়ে ছিল গাড়িটি। গাড়ির মধ্যে বসা নীল-কালো রঙের টি-শার্ট পরা এক ব্যক্তিকে দেখা গিয়েছে ফুটেজে। তবে বিস্ফোরণের সময়ে ওই চিকিৎসক গাড়িতে ছিলেন কি না, তা স্পষ্ট নয়।
আরও পড়ুন:
সূত্রের খবর, গাড়িটি দুপুর ৩টে ১৯ মিনিটে লালকেল্লার অদূরে সুনহেরি মসজিদ কাছে একটি পার্কিংয়ে প্রবেশ করেছিল। সন্ধ্যা ৬টা ৪৮ মিনিট পর্যন্ত সেখানেই দাঁড়িয়ে ছিল। তার পরে ওই পার্কিং থেকে বেরোয় গাড়িটি। পার্কিং থেকে বার হওয়ার কিছু ক্ষণের মধ্যেই সন্ধ্যা ৬টা ৫২ মিনিটে লালকেল্লার কাছে গাড়িটিতে বিস্ফোরণ হয়।
পুলওয়ামার ওই চিকিৎসকের নাম দিল্লির বিস্ফোরণকাণ্ডে উঠে আসার পরে মুখ খুলেছে তাঁর পরিবারও। উপরের এক আত্মীয় জানান, নিরাপত্তাবাহিনী তাঁদের কাছে ওমরের বিষয়ে জানতে চাইছিলেন। তাঁরা জানান, ওমর দিল্লিতে রয়েছেন। ওই সময়ে নিরাপত্তাবাহিনী তাঁর স্বামী, শাশুড়ি এবং অপর এক আত্মীয়কে জিজ্ঞাবাসাদের জন্য তুলে নিয়ে গিয়েছে বলে দাবি পুলওয়ামার চিকিৎসকের আত্মীয়ের। তিনি বলেন, “গত শুক্রবার উমরের সঙ্গে শেষ কথা হয়েছিল আমাদের। ও (উমর) আমার সন্তানদের খুব ভালবাসত। যখনই বাড়িতে আসত, ক্রিকেট নিয়েই ব্যস্ত থাকত। ক্রিকেট খেলতে ভাসবাসত।”
সম্প্রতি ফরিদাবাদকাণ্ডে গ্রেফতার সন্দেহভাজন চিকিৎসক আদিলের বিষয়েও সাংবাদিকেরা প্রশ্ন করেন তাঁকে। তবে উমরের ওই আত্মীয়ের দাবি, তিনি আদিলকে চেনেন না। তাঁর কথায়, “উমর ওই ধরনের মানুষই নয়। অনেক কষ্ট করে পড়াশোনা করতে হয়েছে। আমরা কঠোর পরিশ্রম করেছি, যাতে ও নিজের পায়ে দাঁড়াতে পারে। আমি এ সব বিশ্বাসই করতে পারছি না।” ওই আত্মীয় আরও জানান, উমরের বাগদান হয়ে গিয়েছিল। তবে এখনও বিয়ে হয়নি। গত দু’মাস ধরে ওই চিকিৎসক বাড়িতেও ছিলেন না। ওই আত্মীয়ের দাবি, উমর সারাক্ষণ পড়াশোনাই করতেন। তাঁর খুব বেশি বন্ধুও ছিল না বলে দাবি ওই মহিলার।