Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪

উন্নয়নে ডাক গাঁধীদের, নয়া চাল প্রধানমন্ত্রীর

ডাক দিয়ে যাই! গাঁধীদের প্যাঁচে ফেলতে এটাই এখন নরেন্দ্র মোদীর নতুন কৌশল! সেই ডাকে সাড়া দিলে ভাল। কেউ বলতে পারবে না যে ডাকেনি। আর না দিলে বলা যাবে, ওঁরাই উন্নয়ন চান না। দেশের মানুষের তো দূর, নিজেদের নির্বাচনী কেন্দ্রের লোকজনেরও ভাল চান না তাঁরা।

দিগন্ত বন্দ্যোপাধ্যায়
নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ২২ মে ২০১৬ ০৩:৪০
Share: Save:

ডাক দিয়ে যাই! গাঁধীদের প্যাঁচে ফেলতে এটাই এখন নরেন্দ্র মোদীর নতুন কৌশল!

সেই ডাকে সাড়া দিলে ভাল। কেউ বলতে পারবে না যে ডাকেনি। আর না দিলে বলা যাবে, ওঁরাই উন্নয়ন চান না। দেশের মানুষের তো দূর, নিজেদের নির্বাচনী কেন্দ্রের লোকজনেরও ভাল চান না তাঁরা।

মোদী সরকার কিস্যুটি করছে না— বিরোধীদের আক্রমণের এই ঝাঁঝ কমাতেই এমন কৌশল নিয়েছেন মোদী। উন্নয়নের কাজে শরিক হওয়ার ডাক দিচ্ছেন সনিয়া ও রাহুল গাঁধীকেও। মন্ত্রীদের নির্দেশ দিয়েছেন, সনিয়া ও রাহুলের নির্বাচনী কেন্দ্রে কোন কোন গরিব পরিবারের কাছে কেন্দ্রীয় প্রকল্পের সুযোগ-সুবিধা পৌঁছনো দরকার, তা কংগ্রেসের এই নেতাদের থেকেই জেনে করা হোক।

এতে একটি প্রশ্ন অবশ্য উঠেছে। বিরোধীদের চাপের মুখে মোদী সরকার এখন উন্নয়নের উপরে জোর দিতে চাইছেন। কিন্তু তিনি কি ‘সকলকে নিয়ে সকলের উন্নয়ন’-এর নীতি থেকে সরে আসছেন? ভোটের মুখে উত্তরপ্রদেশে কেন্দ্র উন্নয়নের কাজ চালাবে সনিয়া-রাহুলদের কথা মতোই!

বিজেপি অবশ্য এ ভাবে দেখছে না বিষয়টি। তাদের মতে, ‘সকলকে নিয়ে’ উন্নয়নের পথে এগোনোর যে নীতি সরকার নিয়েছে, এটা তারই অঙ্গ। স্থানীয় জনপ্রতিনিধি হিসেবে সব সাংসদের ক্ষেত্রেই এমনটা করা হবে। তবে সনিয়া-রাহুলদের বক্তব্য জানতে চাওয়ার বিশেষ রাজনৈতিক তাৎপর্যও অস্বীকার করছে না বিজেপি। দলীয় সূত্রে চারটি সম্ভাবনার কথা বলা হচ্ছে। যার প্রতিটি থেকেই মোদী তথা বিজেপিরই লাভ তোলার সুযোগ থাকছে। তা হল: l সনিয়া-রাহুল যদি কোনও তালিকাই না দেন, বিজেপি তাঁদের বিরুদ্ধে ‘অসহযোগিতা’র অভিযোগ তুলে প্রচার করতে পারবে। l তাঁরা তালিকা দেওয়ার পরেও যদি অনেক লোক বঞ্চিত থেকে যান, তাতেও এটা প্রচারে আনা যাবে যে কংগ্রেসের শীর্ষনেতারাই সকলের উন্নয়ন চান না। যেমনটি চান মোদী। l যদি অনেক মানুষের তালিকা আসে তাঁদের থেকে, সে ক্ষেত্রেও বিজেপি বলতে পারবে এত দিন সাংসদ থেকেও নিজেদের নির্বাচনী কেন্দ্রে কত লোককে গরিব করে রেখেছে কংগ্রেস। l আর এক বার মোদীর উন্নয়ন কর্সূচিতে সামিল হলে তৃণমূল স্তরে কোনও কাজ হচ্ছে না— এমন অপবাদও দিতে পারবে না কংগ্রেস।

প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশ পেয়েই পেট্রোলিয়াম মন্ত্রী ধর্মেন্দ্র প্রধান হাতে-গরম একটি বিষয়ে চিঠি লিখে ফেলেছে সনিয়া ও রাহুল গাঁধীকে। প্রধানমন্ত্রী সম্প্রতি ৮ হাজার কোটি টাকা খরচ করে দেশের পাঁচ কোটি গরিব পরিবারকে বিনামূল্যে রান্নার গ্যাস দেওয়ার কথা ঘোষণা করেছেন। সম্প্রতি বিজেপি সভাপতি অমিত শাহ ও ধর্মেন্দ্র প্রধান এই প্রকল্প নিয়ে পৌঁছে গিয়েছিলেন গুজরাতে। ধর্মেন্দ্র সেখানে জানান, তিনি সনিয়া ও রাহুলকে চিঠি লিখেছেন তাঁদের নির্বাচনী কেন্দ্রের মানুষদের এই প্রকল্পে সামিল করার জন্য।

তবে গোটা বিষয়টি যাতে নিছক রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত বলে মনে না হয়, তার জন্য উত্তরপ্রদেশের সব সাংসদকেই চিঠি লেখা হয়েছে। ধর্মেন্দ্র প্রধানের কথায়, ‘‘আপাতত উত্তরপ্রদেশের সাংসদদের চিঠি লেখা হয়েছে। পরে সব রাজ্যের সাংসদকেই চিঠি লিখব।’’

শুরুটা কেন উত্তরেপ্রদেশ দিয়ে?

এটা ঘটনা, এই রাজ্যে ভোটের বেশি দেরি নেই আর। তবু বিজেপি সূত্র কবুল করছে, প্রথমেই উত্তরপ্রদেশকে বেছে নেওয়া হয়েছে, যাতে সনিয়া ও রাহুলকে এর মধ্যে সামিল করা যায়। দলের সূত্রে এ-ও দাবি, স্মৃতি ইরানিকেও অমেঠী কেন্দ্রের তালিকা দিতে বলা হয়েছে। এক বার রাহুলের থেকে তালিকা আসার পর স্মৃতির তালিকার সঙ্গে সেটি তুলনা করা হবে। লক্ষ্য স্পষ্ট, বিজেপি এটিকে পুরোদস্তুর রাজনৈতিক কাজেই ব্যবহার করতে চাইছে। এই বিষয়ে জিজ্ঞাসা করা হলে কংগ্রেস নেতা আনন্দ শর্মা অবশ্য জানান, এই চিঠির ব্যাপারে তাঁর কিছু জানা নেই। বিষয়টি তিনি খোঁজ নেবেন।

বিজেপি নেতারা জানেন, সরকার তার দু’বছর পূর্তি উপলক্ষে ২৬ মে থেকে নিজেদের সাফল্য মেলে ধরবে বিভিন্ন অনুষ্ঠানের মাধ্যমে। এর পাশাপাশি কংগ্রেস ও অন্য বিরোধী দলগুলিও পাল্টা রিপোর্ট কার্ড পেশ করবে। খুঁজেপেতে সরকারের ব্যর্থতাগুলিই বড় করে দেখাবে। গত বারেও একই কাজ করেছিল কংগ্রেস। সন্দেহ নেই, সরকারের দ্বিতীয় বছর পূর্তিতেও তারা মোদীর ব্যর্থতা নিয়ে সরব হবে। তাদের সেই প্রচারকে ভোঁতা করতেই আগাম কৌশল নিয়েছে মোদী সরকার। উন্নয়নের কাজে বিরোধীদের সঙ্গে নিয়ে চলার আবেদন অনেক দিন ধরেই করে আসছেন প্রধানমন্ত্রী।

সেটাকেই এ বার আনুষ্ঠানিক মোড়ক দিয়ে প্রতিপক্ষকে চাপে ফেলতে চান তিনি।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

narendra modi sonia rahul
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE