ফাইল ছবি
পয়গম্বরকে নিয়ে বিজেপি নেতাদের বিতর্কিত মন্তব্যের জেরে আন্তর্জাতিক স্তরে সমালোচনার মুখে পড়েছে নরেন্দ্র মোদী সরকার। তার মধ্যেই কেন্দ্রের সামনে সুযোগ এসেছিল, গুজরাতে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির উদাহরণ নিয়ে বিজ্ঞাপনের। রাজনৈতিক শিবির মনে করছে, ভোটের কথা মাথায় রেখে শনিবার পঞ্চমহল জেলায় কালিকা মাতা মন্দিরের পুনর্নির্মাণের উদ্বোধন মঞ্চে সেই পদক্ষেপ করলেন না প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী।
জ্ঞানবাপী মসজিদ নিয়ে বিতর্ক তুঙ্গে। পাশাপাশি কর্নাটকের শ্রীরঙ্গপত্তনমে টিপু সুলতানের আমলের জামিয়া মসজিদ এলাকার হনুমান মন্দিরে পুজোর অনুমতি নিয়ে হইচই শুরু হয়েছে। উপাসনাস্থলের সুরক্ষা আইনটিই প্রশ্নের মুখে। এই পরিস্থিতিতে গুজরাতের পঞ্চমহল জেলায় পাওয়াগড় পাহাড়ের চূড়ায় সুপ্রাচীন একাদশ শতাব্দীর কালিকা মাতা মন্দিরটির সংস্কার করা হয়েছে সংলগ্ন একটি দরগাকে অক্ষুণ্ণ রেখেই। শনিবার সেই নতুন সংস্কার হওয়া মন্দির শিখরে পতাকার উদ্বোধন করে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী দীর্ঘ বক্তৃতা দিলেন। তাতে অবশ্য সাম্প্রদায়িক ঐক্যের বার্তা নয়, বরং হিন্দুত্ব ও আধ্যাত্মিকতার সঙ্গে দেশের সংস্কৃতি ও বিকাশের সংযোগকেই তুলে ধরলেন তিনি।
গুজরাতের ভোট এগিয়ে আসার সঙ্গে সঙ্গে কেন্দ্রীয় এবং রাজ্য সরকারের ‘ডাবল ইঞ্জিন’কে তুলে ধরে বারবার প্রচার বক্তৃতা করতে দেখা গিয়েছে মোদীকে। পাল্লা দিয়ে চলছে বিপুল অর্থের বিভিন্ন নতুন প্রকল্পের শিলান্যাস। তবে আজ মোদী গুজরাতের প্রাচীন হিন্দু মন্দিরগুলির এক মানচিত্র তৈরি করে দিলেন রাজ্যের ভোটারদের সামনে। সেই সঙ্গে জানালেন, আধ্যাত্মিক স্থলের উন্নয়ন হলে পর্যটন বাড়বে, যার লাভ পৌঁছাবে আদিবাসী সম্প্রদায়ের কাছেও।
অথচ রাজনৈতিক শিবির বলছে, সহিষ্ণুতার প্রশ্নে প্রবল আন্তর্জাতিক চাপের মুখে দাঁড়িয়ে এই কালিকা মাতা মন্দিরকে কেন্দ্র এক চমৎকার সম্প্রীতির বিজ্ঞাপন হিসেবে সামনে নিয়ে আসতে পারত। মন্দিরের অছি পরিষদই জানাচ্ছে, এই পাহাড়ি মন্দিরের শিখরদেশে গোড়ায় ছিল হজরত সদনশাহ ওয়ালি পীরের দরগা। ‘বন্ধুত্বপূর্ণ’ ভাবেই এই দরগাকে কয়েক মিটার দূরে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে প্রয়োজনীয় সংশোধন করে। মামলা অবশ্যই হয়েছে, কিন্তু তা মিটেও গিয়েছে আপোসে।
কিন্তু ভোটের দায় বড় দায়। রাজনৈতিক শিবির বলছে, যে মেরুকরণের স্রোত উত্তরপ্রদেশের ভোটের আগে গেরুয়া দল বইয়ে দিয়েছিল, গুজরাতের ভোটে তা আরও বাড়ানো হবে। কালিকা মাতার এই মন্দিরকে তাই প্রধানমন্ত্রী তাঁর বক্তৃতায় সংযুক্ত করেছেন তাঁর প্রিয় স্লোগান ‘সব কা সাথ, সব কা বিশ্বাস, সব কা বিকাশ’-এর সঙ্গে। দেশের স্বাধীনতার পঁচাত্তর বছরের উৎসবের সঙ্গেও। তাঁর কথায়, “মায়ের মন্দিরের শিখরের এই ধ্বজা কেবলমাত্র অধ্যাত্মবাদের প্রতীকই নয়। ভারতের সাংস্কৃতিক গৌরবেরও পুনঃপ্রতিষ্ঠা হচ্ছে। সময় এবং যুগ বদলায় কিন্তু আস্থার এই শিখর অক্ষুণ্ণ থাকে। অযোধ্যায় আপনারা দেখেছেন রামমন্দির তৈরি হচ্ছে, কাশীতে বাবা বিশ্বনাথের ধাম। বাবা কেদারনাথের ধামেও কাজ চলছে। নতুন ভারতের আশার সঙ্গে ভারতের প্রাচীন পরিচয়ও উৎসাহের সঙ্গে বেঁচে উঠছে। প্রত্যেক ভারতবাসী তাতে গর্বিত। কালিকা মাতার মন্দিরের এই পুনর্নির্মাণ এই গৌরব
যাত্রার অংশ।”
শনিবার তাঁর বক্তৃতায় সংলগ্ন প্রাচীন দরগার কথা না থাকলেও পঞ্চমহলের একটি জৈন মন্দিরের উল্লেখ করে এই এলাকাকে ‘সর্বধর্মসমন্বয়ের কেন্দ্র’ হিসেবে তুলে ধরতে দেখা গিয়েছে মোদীকে। বলেছেন, “বিভিন্ন কলা সংস্কৃতির পাশাপাশি মহাকালীর শক্তিপীঠ রয়েছে এখানে। আবার রয়েছে জৈন মন্দিরও। ভারতের ঐতিহাসিক সর্বধর্মসম্ভবের কেন্দ্রটি আজ বিকাশের পথে চলেছে।” প্রধানমন্ত্রী এই নতুন করে তৈরি করা মন্দিরটিকে ঘিরে বিস্তারিত পরিকাঠামো প্রকল্পের ঘোষণা করে বলেছেন, “পর্যটন বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে পঞ্চমহলে যুবকদের নতুন কাজের সুযোগ বাড়বে। বিশেষ করে আদিবাসীদের রোজগারের সুযোগ বাড়বে।”
ভোটমুখী গুজরাতকে দেশের জাতীয়তাবাদের সঙ্গেও আজ জুড়তে দেখা গিয়েছে প্রধানমন্ত্রীকে। তাঁর কথায়, “গুজরাতের মাটিতে দাঁড়িয়ে মা কালীর চরণ থেকে আজ দেশের অমৃত মহোৎসবকে স্মরণ করছি।’’
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, Twitter এবং Instagram পেজ।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy