Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪
NPR

এনপিআর নিয়ে অমিতের উল্টো সুর প্রধানমন্ত্রীর

দেশে এনআরসি হবে বলে অমিত শাহ একাধিক বার দাবি করেছেন। সিএএ, এনপিআর-এর পরে এনআরসি হবে বলে ‘ক্রনোলজি’-ও বুঝিয়েছিলেন।

অমিত শাহ ও নরেন্দ্র মোদী। ফাইল চিত্র।

অমিত শাহ ও নরেন্দ্র মোদী। ফাইল চিত্র।

নিজস্ব সংবাদদাতা
নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ০৭ ফেব্রুয়ারি ২০২০ ০৩:৪৬
Share: Save:

এত দিন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক বলছিল, এনপিআর তৈরির সময় বাবা-মায়ের জন্মস্থান, জন্মতারিখ, মাতৃভাষা বা শেষ ঠিকানা জানতে চাওয়া হলেও সে সব প্রশ্ন ঐচ্ছিক। কেউ চাইলে উত্তর না-ই দিতে পারেন। আজ প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী সেই সব প্রশ্নের উত্তর জানা দরকার বলে বুক চিতিয়ে রুখে দাঁড়ালেন। প্রায় ‘যুদ্ধং দেহি’ সুরে দাবি করলেন, এ সব তথ্য লাগবেই। কোথায় কত ভাষাভাষী মানুষ বাস করছেন, কোন জেলা থেকে লোকে অন্যত্র কাজের খোঁজে যাচ্ছে, তা বুঝতে এ সব তথ্য দরকার। বিরোধীদের কটাক্ষ, এনআরসি-র পরে এ বার এনপিএর নিয়েও অমিত শাহের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের উল্টো অবস্থান নিলেন মোদী।

দেশে এনআরসি হবে বলে অমিত শাহ একাধিক বার দাবি করেছেন। সিএএ, এনপিআর-এর পরে এনআরসি হবে বলে ‘ক্রনোলজি’-ও বুঝিয়েছিলেন। কিন্তু তার পরে উল্টো অবস্থান নিয়ে প্রধানমন্ত্রী দাবি করেন, এনআরসি নিয়ে কোনও সিদ্ধান্তই হয়নি। আজ অবশ্য প্রধানমন্ত্রী এনআরসি-র মতো এনপিআর নিয়েও কোনও সিদ্ধান্ত হয়নি বলে দাবি করেননি। উল্টে রাজ্যসভায় রাষ্ট্রপতির বক্তৃতা নিয়ে বিতর্কের জবাবে এনপিআর-এ যে সব নতুন প্রশ্ন যোগ করা হয়েছে, তার পক্ষেই দাঁড়িয়েছেন। বিরোধীদের লক্ষ্য করে রীতিমতো ধমকের সুরে প্রশ্ন ছুড়েছেন, ‘‘কেন মানুষকে মূর্খ বানাচ্ছেন?’’

বাবা-মায়ের জন্মস্থান কোথায়, জন্মতারিখ কী, মাতৃভাষা কী, শেষ ঠিকানা কোথায় ছিল— এনপিআর বা জাতীয় জনসংখ্যা পঞ্জিতে এই সব প্রশ্ন দেখিয়েই বিরোধীরা অভিযোগ তুলেছেন, এনপিআর-এর মাধ্যমে এনআরসি-র ভিত তৈরি করা হচ্ছে। বাংলাদেশি বলে চিহ্নিত করতেই বাবা-মায়ের জন্মস্থান, জন্মতারিখ, শেষ ঠিকানা জানতে চাওয়া হচ্ছে। একই কারণে মাতৃভাষাও জানতে চাওয়া হচ্ছে। পশ্চিমবঙ্গের বাইরে কেউ নিজের মাতৃভাষা বাংলা বললেই তাঁকে সন্দেহভাজন বাংলাদেশি বলে দাগিয়ে দিতে সুবিধা হবে। তৃণমূলের অভিযোগ ছিল, কেউ বাবা-মায়ের জন্মভিটে কোথায়, তা জানেন না বললেই সন্দেহের তালিকায় চলে যাবেন। পশ্চিমবঙ্গের ক্ষেত্রে যাঁরা বাবা-মায়ের জন্মভিটে ও-পার বাংলায় বলে জানাবেন, তাঁদের সন্দেহজনক তালিকার অন্তর্ভুক্ত করা হবে।

আরও পড়ুন: ওমর-মেহবুবারা গৃহবন্দি কেন, ব্যাখ্যা দিলেন মোদী

এই বিরোধিতার মুখেই আজ প্রধানমন্ত্রী এনপিআর নিয়ে কংগ্রেসের বিরুদ্ধে ‘ইউ-টার্ন’ নেওয়ার অভিযোগ তুলেছেন। কিন্তু বিরোধীদের অভিযোগ, প্রধানমন্ত্রী নিজেই স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের অবস্থান থেকে ‘ইউ-টার্ন’ নিয়েছেন। এনপিআর নিয়ে রাজ্যগুলির সঙ্গে বৈঠকে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক বলেছিল, বাবা-মায়ের জন্মস্থানের মতো প্রশ্ন ঐচ্ছিক। কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী জি কিষেণ রেড্ডিও বলেছিলেন, ‘‘এনপিআর-এ তথ্য দেওয়া আবশ্যিক নয়। বরং ঐচ্ছিক।’’ আজ কংগ্রেস নেতা জয়রাম রমেশ বলেন, ‘‘প্রধানমন্ত্রী তো স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের উল্টো কথা বলছেন।’’

প্রধানমন্ত্রী জোর গলায় বলেন, ‘‘মাতৃভাষা নিয়ে আগে কোনও সমস্যা ছিল না। এখন সুরাতে ওড়িশার বহু শ্রমিক রয়েছেন। মাতৃভাষা নিয়ে তথ্য না জানলে গুজরাত সরকার কী ভাবে সিদ্ধান্ত নেবে, সেখানে ওড়িয়া স্কুল খোলার দরকার কি না?’’ শেষ ঠিকানা বা বাবা-মায়ের জন্মস্থান নিয়ে প্রশ্নের সমর্থনে মোদী বলেন, ‘‘আগে এক রাজ্য থেকে অন্য রাজ্যে স্থানান্তর কম মাত্রায় হত। এখন জানা দরকার কোন জেলা থেকে মানুষ বেশি স্থানান্তরিত হচ্ছেন। না জানলে সেই জেলায় উন্নয়ন হবে না।’’ মোদীর প্রশ্ন, এনপিআর তো ২০১০-এ কংগ্রেসই এনেছিল। এখন কংগ্রেসই কেন বিরোধিতা করছে? কেন গুজব ছড়িয়ে মানুষের মনে বিভ্রান্তি তৈরি করছে? জয়রাম রমেশ থেকে প্রদীপ ভট্টাচার্যরা রুখে দাঁড়িয়ে বলেন, ২০১০ ও ২০১৯-এর এনপিআর সম্পূর্ণ আলাদা। প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘‘ইউপিএ-জমানার এনপিআরের তথ্য আমাদের কাছে রয়েছে। তার ভিত্তিতে কাউকে উৎপীড়ন করা হয়নি।’’

কেন এনপিআর নিয়ে রাজ্যসভায় এ ভাবে জোরালো সওয়াল করলেন? বিরোধীদের ব্যাখ্যা, বড় সংখ্যক রাজ্য এনপিআর না করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। জনগণনার সঙ্গেই এনপিআর-এর কাজ হবে। রাজ্য বেঁকে বসলে রাজ্য সরকারি কর্মীদের দিয়ে কাজ করানো যাবে না। কেন্দ্রীয় সরকারের কাজে রাজ্য বাধা দিলে সংবিধান মেনে কেন্দ্র রাজ্যের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে পারে। রাষ্ট্রপতি শাসন পর্যন্ত জারি করতে পারে। কিন্তু একাধিক রাজ্যে একসঙ্গে রাষ্ট্রপতি শাসন জারি করা মুশকিল। সাংবিধানিক সঙ্কট তৈরি হবে। সেই বিপদ বুঝেই আজ ধমক দিয়ে বাগ বানানোর চেষ্টা করেছেন মোদী।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

NPR Amit Shah Narendra Modi NRC CAA
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE