E-Paper

কাশ্মীরকে রাজ্যের মর্যাদা মামলার কেন্দ্রে পহেলগাম

নরেন্দ্র মোদী সরকার ২০১৯-এ জম্মু-কাশ্মীরের বিশেষ মর্যাদার ৩৭০ অনুচ্ছেদ রদ করে রাজ্য ভেঙে দু’টি কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল গঠন করেছিল।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ১১ অক্টোবর ২০২৫ ১০:৩৯
—প্রতিনিধিত্বমূলক ছবি।

—প্রতিনিধিত্বমূলক ছবি।

জম্মু-কাশ্মীরের রাজ্যের মর্যাদা ফেরানোর সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে পহেলগামের সন্ত্রাসবাদী হামলার মতো বিষয় বিবেচনা করতে হবে বলে সুপ্রিম কোর্টে যুক্তি দিল মোদী সরকার। কিন্তু রাজ্যের মর্যাদা ফেরানোর দাবিতে মামলাকারীরা সুপ্রিম কোর্টে অভিযোগ তুলেছেন, কেন্দ্রের হাতে রাজ্যের আইনশৃঙ্খলার ভার থাকাকালীনই পহেলগামের হামলার ঘটনা ঘটেছে।

এ নিয়ে কেন্দ্রীয় সরকার ও মামলাকারীদের আইনজীবীদের উত্তপ্ত বাক্য বিনিময়ের মধ্যেই, কবে জম্মু-কাশ্মীরের রাজ্যের মর্যাদা ফেরানো হবে, সেই সময়রেখা নিয়ে মোদী সরকারের বক্তব্য জানাতে কেন্দ্রের সলিসিটর জেনারেল তুষার মেহতা আজ সুপ্রিম কোর্টের কাছে ছয় সপ্তাহ সময় চেয়েছেন। অভিযোগ উঠেছে, বার বার কেন্দ্র সময় চেয়ে দেরি করছে। মামলাকারীদের আইনজীবীরা প্রধান বিচারপতি বি আর গাভাইকে মনে করিয়ে দিয়েছেন, কেন্দ্রকে ছয় সপ্তাহ সময় দেওয়া হলে, শুনানি হতে হতে প্রধান বিচারপতির অবসরের দিন, ২৩ নভেম্বর চলে আসবে। প্রধান বিচারপতির বেঞ্চ শেষ পর্যন্ত চার সপ্তাহের মধ্যে কেন্দ্রকে তার বক্তব্য জানাতে বলেছে।

নরেন্দ্র মোদী সরকার ২০১৯-এ জম্মু-কাশ্মীরের বিশেষ মর্যাদার ৩৭০ অনুচ্ছেদ রদ করে রাজ্য ভেঙে দু’টি কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল গঠন করেছিল। এর আগে সুপ্রিম কোর্ট ৩৭০ রদের সিদ্ধান্তে সিলমোহর দিয়েছিল। কিন্তু জম্মু-কাশ্মীর রাজ্য ভেঙে দু’টি কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল গঠনকে চ্যালেঞ্জ করে যে সব মামলা হয়, তা নিয়ে কোনও সিদ্ধান্ত নেয়নি। কারণ, সে সময় কেন্দ্রের সলিসিটর জেনারেল আশ্বাস দিয়েছিলেন, জম্মু-কাশ্মীরের রাজ্যের তকমা ফেরানো হবে। সুপ্রিম কোর্ট ‘যত দ্রুত সম্ভব’ তা ফেরানোর নির্দেশ দিলেও সময়সীমাবেঁধে দেয়নি।

এ বার সুপ্রিম কোর্টে এসে জম্মু-কাশ্মীরের বিধায়ক ইরফান হাফিজ় লোন, শিক্ষক জ়াহুর আহমেদ ভাট ও সমাজকর্মী খুরশিদ আহমেদের মতো মামলাকারীরা অভিযোগ তুলেছেন, গত বছর অক্টোবরে জম্মু-কাশ্মীর কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলের বিধানসভার ভোট হয়েছে। তার পরেও কেন্দ্র রাজ্যের তকমা ফিরিয়ে না দিয়ে আদালতের নির্দেশ লঙ্ঘন করেছে।

কেন্দ্রীয় সরকার সুপ্রিম কোর্টে যুক্তি দিয়েছে, শান্তিপূর্ণ ভাবে নির্বাচন এবং তার পরে নির্বাচিত সরকার ক্ষমতায় এসেছে ঠিকই, কিন্তু সাম্প্রতিক অতীতে পহেলগামের মতো কিছু ঘটনাও ঘটেছে। শুনানির সময় তা-ও বিবেচনা করতে হবে। সলিসিটর জেনারেলের দাবি, কেন্দ্র স্থানীয় প্রশাসনের সঙ্গে রাজ্যের তকমা ফেরানো নিয়ে আলোচনা করছে। প্রধান বিচারপতি গাভাইও পহেলগামের ঘটনার উল্লেখ করে বলেন, “ওই অঞ্চলে বরাবরই নিরাপত্তার আশঙ্কা রয়েছে। সব দিক দেখেই সিদ্ধান্ত নিতে হবে। দেখুন, পহলেগামে কী হয়েছে।’’

মামলাকারী জ়াহুর ভাটের আইনজীবী গোপাল শঙ্করনারায়ণন বলেন, ‘‘পহেলগামের হামলা ওদের নজরদারির সময়কালেই হয়েছে। কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল কেন্দ্রের আওতাধীন।’’ প্রবল আপত্তি তুলে মেহতা বলেন, ‘‘ওদের নজরদারি মানে কী? এটা আমাদের সকলের সরকার। একজন নাগরিক সুপ্রিম কোর্টে মামলা করে কেন্দ্রীয় সরকারকে ওদের সরকার বলছেন, আমার সরকার বলছেন না। জম্মু-কাশ্মীরের ৯৯.৯ শতাংশ মানুষ কেন্দ্রীয় সরকারকে নিজেদের সরকার মনে করেন। মামলাকারীরা যা বলছেন, তা খতিয়ে দেখা উচিত।’’

রাজ্যের মর্যাদা ফেরানো নিয়ে কেন্দ্রের আশ্বাসের উল্লেখ করে শঙ্করনারায়ণন বলেন, তার পরে অনেক জল বয়ে গিয়েছে। মেহতা বলেন, ‘‘অনেক রক্তও বয়ে গিয়েছে।’’ শঙ্করনারায়ণন বলেন, মামলাকারীরা চাইছেন জম্মু-কাশ্মীরের রাজ্যের তকমা ফেরানো নিয়ে কেন্দ্রের প্রতিশ্রুতি যুক্তিসঙ্গত সময়ের মধ্যে কার্যকর করা হোক। তাঁর মতে, এই মামলা পাঁচ বিচারপতির সাংবিঝানিক বেঞ্চে পাঠানো উচিত। কারণ ৩৭০ রদের মামলাও পাঁচ বিচারপতির বেঞ্চে শুনানি হয়েছিল।

বিধায়ক ইরফান হাফিজ় লোনের আইনজীবী মেনকা গুরুস্বামী যুক্তি দেন, যদি রাজ্যকে কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলে পরিণত করা হয়, তা হলে যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামোর কী হবে? বিধানসভায় এক বছর আগে জম্মু-কাশ্মীরের রাজ্যের মর্যাদা ফেরানোর প্রস্তাব গৃহীত হয়েছে। জম্মু-কাশ্মীরকে কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল হিসেবে রেখে দেওয়া বিপজ্জনক দৃষ্টান্ত। সংবিধানের ১, ২ ও ৩ অনুচ্ছেদে রাজ্যকে কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলে পরিণত করে ফেলার ব্যবস্থা নেই। আর একআইনজীবী এন কে ভরদ্বাজ বলেন, ইতিহাসে এমন ঘটনা ঘটেনি। ভবিষ্যতে যদি উত্তরপ্রদেশ বা তামিলনাড়ুকে কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল করে ফেলা হয়, তা হলে কী হবে! জম্মু-কাশ্মীরে আত্মহত্যা বেড়েছে, লগ্নি কমেছে বলেও অভিযোগ ওঠে। সলিসিটর জেনারেল বলেন, আদালতে জম্মু-কাশ্মীরের করুণ ছবি তুলে ধরার চেষ্টা হচ্ছে।

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

Central Government

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy