Advertisement
১৭ এপ্রিল ২০২৪
Navdeep Kaur

দলিতের এত কথা! মারতে মারতে বলছিল পুলিশ

নদীপ কউর। নিজস্ব চিত্র

নদীপ কউর। নিজস্ব চিত্র

চৈতালি বিশ্বাস
শেষ আপডেট: ২২ মার্চ ২০২১ ০৮:২১
Share: Save:

বিধানসভা ভোটের প্রচারে যে দিন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী রাজ্যের একপ্রান্তে পা রেখেছেন, সে দিনই আরেক জন দিল্লির সিংঘু সীমানা থেকে চলে এসেছিলেন কলকাতায়। শ্রমিক-মজদুর আন্দোলনের মুখ নদীপ কউর। শনিবার বীরেন্দ্র মঞ্চে একটি ফ্যাসিবাদ-বিরোধী সাহিত্য অনুষ্ঠানে সারা দিন উপস্থিত ছিলেন দলিত-শ্রমিক নেত্রী নদীপ কউর। গত ১২ জানুয়ারি যাঁকে সিংঘু সীমানা থেকে গ্রেফতার করে হরিয়ানা প়ুলিশ। নরেন্দ্র মোদী খড়্গপুরে শনিবারের সভা থেকে বার্তা দিয়েছেন বাবা অম্বেডকরের তৈরি সংবিধানের অধিকার, পুলিশ-প্রশাসনের গণতন্ত্রের মর্যাদা রক্ষার মতো জরুরি বিষয়ে। আর নদীপ কলকাতায় বসে বলছেন— এর কোনওটাই মোদী-রাজত্বে পালন করা হয়নি। নদীপের অভিযোগ— ‘‘দেশে ফ্যাসিবাদের রাজত্ব চলছে। গণতন্ত্র রক্ষা অনেক দূরের কথা, বিজেপি শ্রমিক, মজদুর, কৃষক-বিরোধী সরকার চালাচ্ছে।’’

দীর্ঘদিন ধরে শ্রমিক অধিকারের জন্য লড়াই চালানো বছর পঁচিশের মেয়েটি দিল্লির কৃষক আন্দোলন সমর্থন করে সেখানেও পৌঁছেছিলেন। গত জানুয়ারি মাসে সেখানেই তাঁকে গ্রেফতার করা হয়। দেশ জুড়ে এর প্রতিবাদ হয়। নদীপের মুক্তির দাবিতে টুইট করেন আমেরিকার ভাইস প্রেসিডেন্ট কমলা হ্যরিসের বোনঝি মীনা হারিস। হরিয়ানার কারনাল জেলে দেড় মাস বন্দি থাকার পরে পঞ্জাব ও হরিয়ানা হাইকোর্ট নদীপের জামিন মঞ্জুর করে। পুলিশ মেডিক্যালের সমস্ত রিপোর্ট পেশ না করায় হাইকোর্ট ওই মামলার রায়ে স্থগিতাদেশ আনে। পুলিশের বিরুদ্ধে বেআইনি ভাবে নদীপকে বন্দি করার যে অভিযোগ জানানো হয়েছিল, সেই মামলাটিও আলাদা করে শোনা হবে বলে আশ্বাস দেয় আদালত।

নদীপের অভিযোগ, কোনও মহিলা পুলিশ না থাকা সত্ত্বেও সে দিন তাঁকে হরিয়ানা পুলিশ তুলে নিয়ে যায়। তাঁর দাবি, ‘‘পুলিশ হেফাজতে কোনও মহিলা পুলিশ ছিল না। সেখানে আমায় মারধর করা হয়। গোপনাঙ্গেও আঘাত করে পুলিশ। মারধর করার সময়ে বার বার বলা হয়, দলিত হয়ে আমার আওয়াজ তোলার এত সাহস হয় কী করে! পাঁচ দিন পরে আমার মেডিক্যাল পরীক্ষা করানো হয়। ভয় পেয়ে পিছিয়ে গেলে এই অন্যায়গুলো জিতে যাবে। সেটা হবে না।’’

কখনও মনে হয়, শরীরে পুরুষ না হয়ে মেয়ে বলে লড়াইটা কোথাও আরও বেশি কঠিন হয়েছে? উত্তরে নদীপ বলছেন, ‘‘মেয়েরা সবাই যদি এটাই ভাবতে থাকে, তা হলে তো মেয়েরা আর এগোতেই পারবে না। শারীরিক শক্তিতে পিছিয়ে থেকেও আমাদের লড়াই কিন্তু জারি রয়েছে। আমার গ্রামে মেয়েদের অবস্থা এতটাই খারাপ যে সেখানে নারীর সমানাধিকারের ভাবনা কল্পনাও করা যায় না। তারা সেখানে এক দিকে সংসারের কাজকর্ম-দায়িত্ব সামলাচ্ছে, আর এক দিকে বাচ্চা মানুষ করছে, আবার, মাঠে গিয়ে চাষ-আবাদের কাজও করছে। তার পরেও তাদের কেউ শ্রমিক, কৃষক, মজদুর বলে যোগ্য সম্মান দেয় না। গ্রামে মেয়েদের ধর্ষণ হলে সেখানে অভিযোগ জানানোর মতো পরিসরটুকু নেই। এই মেয়েদেরই প্রতিনিধিত্ব করছি আমি। তাঁদের অধিকারের কথা গলা তুলে চেঁচিয়ে বলতে চেষ্টা করছি।’’

পঞ্জাবের গ্রামে থাকার সময়ে খেতে কাজ করেছেন তিনি। গ্রামের দলিত মেয়েদের কী ভাবে ধনী-উচ্চবর্ণের অত্যাচার সহ্য করতে হয়, সেই প্রত্যক্ষ অভিজ্ঞতাও রয়েছে। নদীপের কথায়, ‘‘যখন কারখানায় শ্রমিক হিসাবে কাজ করতে এলাম, সেখানেও প্রতিদিন দেখতে পাই, গরির মানুষের অধিকার ক্ষুণ্ণ হচ্ছে। তখনই সিদ্ধান্ত নিই, দলিত, শ্রমিক-মজদুরদের জন্য লড়াই করব।’’

‘জঙ্গিপনা’-মেয়ের দাপটে তাই আর বাড়ির লোকেরাও আপত্তি করেন না, জানাচ্ছেন নদীপ। জেলে থাকার সময়ে এই গ্রেফতারির বিরোধিতা করে নিয়মিত সামাজিক আন্দোলন চালিয়ে গিয়েছেন নদীপের বোন, সমাজকর্মী রাজবী কউর। নদীপ পাশে পেয়েছেন মাকেও। তিনি বলেন, ‘‘ছোট থেকে মাকে দেখেছি, ঘর-বাইরে দু’দিকের কাজই সামলাচ্ছে। বাড়িতে তর্ক করার, কথা বলার মতো পরিবেশ পেয়েছি। বাড়ি থেকেই মানুষের জন্য লড়াই করা শিখেছি। এক দিনে হঠাৎ নেত্রী হয়ে উঠিনি।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Haryana Navdeep Kaur
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE