Advertisement
E-Paper

মোদীকে দুষে খেতাব ফেরালেন নয়নতারা

শুধু বিজেপি নয়, দাদরির হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় এখন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর বিরুদ্ধে সমালোচনাও ক্রমশই বাড়ছে। ভারতের বহুত্ববাদ ও বৈচিত্রকে সুরক্ষিত রাখতে না পারা ও দাদরির ঘটনা নিয়ে প্রধানমন্ত্রী মৌন থাকার জন্য আজ মোদীর কঠোর সমালোচনা করে সাহিত্য অকাদেমি পুরস্কার ফিরিয়ে দিয়েছেন বিশিষ্ট লেখিকা নয়নতারা সহগল।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ০৭ অক্টোবর ২০১৫ ০০:৩৫
নয়নতারা সহগল

নয়নতারা সহগল

শুধু বিজেপি নয়, দাদরির হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় এখন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর বিরুদ্ধে সমালোচনাও ক্রমশই বাড়ছে। ভারতের বহুত্ববাদ ও বৈচিত্রকে সুরক্ষিত রাখতে না পারা ও দাদরির ঘটনা নিয়ে প্রধানমন্ত্রী মৌন থাকার জন্য আজ মোদীর কঠোর সমালোচনা করে সাহিত্য অকাদেমি পুরস্কার ফিরিয়ে দিয়েছেন বিশিষ্ট লেখিকা নয়নতারা সহগল। ১৯৮৬ সালে এই পুরস্কার পেয়েছিলেন তিনি। আর এই ঘটনায় অক্সিজেন পেয়ে জওহরলাল নেহরুর দর্শনকে সামনে রেখে ফের ধর্মনিরপেক্ষতার রাজনীতির সলতে পাকাতে চাইছেন কংগ্রেস সভানেত্রী সনিয়া গাঁধী।

আগামী ১৪ নভেম্বর নেহরুর ১২৬তম জন্মদিন। গত বছর তাঁর ১২৫তম জন্মবার্ষিকী উদ্‌যাপন মঞ্চে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, শরদ যাদব, প্রকাশ কারাটের মতো তথাকথিত ধর্মনিরপেক্ষ দলের নেতাদের আমন্ত্রণ করে একপ্রস্ত এই রাজনীতি করেছিলেন সনিয়া গাঁধী। দাদরি, জামশেদপুর, রাঁচি, মুজফ্ফরনগর-সহ দেশের বিভিন্ন অংশে গোষ্ঠী সংঘর্ষ ও হত্যাকাণ্ডের বাতাবরণে ফের সেই রাজনীতিতে হাওয়া দিতে চাইছেন কংগ্রেস সভানেত্রী।

৮৮ বছরের নয়নতারা সহগল সম্পর্কে নেহরুর ভাগ্নি। গোমাংস খাওয়ার গুজবে দাদরিতে এক সংখ্যালঘুকে পিটিয়ে হত্যা করা, কন্নড় যুক্তিবাদী এম এম কালবার্গি, নরেন্দ্র দাভোলকর ও গোবিন্দ পানসারেকে হত্যার ঘটনাকে ভারতীয়ত্বের ওপর আঘাত হিসেবে আখ্যা দিয়ে আজ তিনি সাহিত্য অকাদেমি পুরস্কার ফিরিয়ে দেন। সেই সঙ্গে এক বিবৃতিতে প্রধানমন্ত্রীর তীক্ষ্ণ সমালোচনা করে বলেন, ‘‘প্রধানমন্ত্রী নীরব। এ সব ঘটনার নিন্দা করে তিনি একটি শব্দও উচ্চারণ করেননি। গোটা দেশ তাঁর বিবৃতির অপেক্ষায় রয়েছে, কারণ প্রতিদিন একটু একটু করে পরিস্থিতি ভয়ানক হয়ে উঠছে!’’ তাঁর কথায়, ‘‘মোদীর নেতৃত্বে পিছিয়ে যাচ্ছে ভারত। সংকীর্ণ হিন্দুত্বের পথে আশ্রয় নিচ্ছে! সমাজে অসহিষ্ণুতা বাড়ায় বহু মানুষ ভয়ে রয়েছেন।’’

অতীতে দেশে জরুরি অবস্থা জারি করার জন্য ইন্দিরা গাঁধীর বিরুদ্ধে ঝাঁঝালো সমালোচনা করেছিলেন নয়নতারা। নেহরু পরিবারের সঙ্গে যোগ থাকলেও সেই অর্থে কংগ্রেসের রাজনীতির সঙ্গে তাঁর বিশেষ যোগ ছিল না। কিন্তু তাঁর পদক্ষেপকে আজ সাধুবাদ জানিয়েছে কংগ্রেস। সেই সঙ্গে দলের শীর্ষ সারির নেতা দিগ্বিজয় সিংহ বলেন, ‘‘দাদরির ঘটনা নিয়ে প্রধানমন্ত্রী নীরব কে বলেছে? রাজনৈতিক বার্তা সব সময় মুখে প্রকাশ হয় না। মুজফ্ফরপুরের গোষ্ঠী সংঘর্ষে অন্যতম অভিযুক্ত বিজেপি সাংসদ সঞ্জীব বালিয়ানকে কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভার সদস্য করেই মোদী বুঝিয়ে দিয়েছেন, এই বিভাজনের রাজনীতিতে প্রত্যক্ষ সমর্থন রয়েছে।’’

কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক গতকালই অবশ্য একটি নির্দেশিকা জারি করে সব রাজ্য সরকারকে বার্তা দিয়েছে যে, ধর্মীয় হিংসা কখনওই বরদাস্ত করা হবে না। দাদরির হত্যাকাণ্ডে অভিযুক্তদের সমর্থনে বেশ কয়েক জন বিজেপি বিধায়ক মুখ খুলেছিলেন। তখনই কংগ্রেস, সমাদবাদী পার্টি, আপ ও বামেরা বিজেপির সমালোচনায় সরব হয়। আরজেডি প্রধান লালু প্রসাদ বলেছিলেন, ‘‘প্রধানমন্ত্রী শুধু ধৃতরাষ্ট্রের মতো অন্ধই নন, মূক ও বধিরও বটে!’’ কাল কেন্দ্রের নির্দেশিকা জারি হলেও প্রধানমন্ত্রী কিন্তু এ নিয়ে এখনও কিছুই বলেননি।

কংগ্রেস ওয়ার্কিং কমিটির এক সদস্য আজ জানান, দাদরির এই ঘটনার সূত্রেই আগামী মাসে নেহরুর জন্মদিন উদ্‌যাপনের গুরুত্ব বাড়ছে। যে ভাবে নেহরুর ঐতিহ্যকে মোদী সরকার খাটো করার চেষ্টা করছে এবং বিভিন্ন প্রকল্প ও প্রতিষ্ঠান থেকে নেহরুর নামকে সরিয়ে দেওয়া হচ্ছে, তাতে এক সময় দল ভেবেছিল উদ্‌যাপনের সেটাই থিম হোক। কিন্তু কংগ্রেসের শীর্ষ নেতাদের অনেকের মতে সেটাই থিম করলে মনে হবে বংশবাদকেই আগলে রাখছে কংগ্রেস। এমনকী, সনিয়া-রাহুলও মনে করছেন, ধর্মনিরপেক্ষতা ও দেশে সহিষ্ণুতার বাতাবরণ টিকিয়ে রাখার জন্য নেহরুর দশর্নকেই থিম করা হোক। বর্তমান সময়ে সেটাই প্রাসঙ্গিক। তাতে সরকার বিরোধী ধর্মনিরপেক্ষ রাজনৈতিক দলগুলোকে এক ছাতার তলায় আনার চেষ্টাও করা যাবে তার মাধ্যমে।

প্রশ্ন হল, এ বারও কি সেই অনুষ্ঠানে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, সীতারাম ইয়েচুরিদের নিমন্ত্রণ জানানো হবে? জবাবে দলের ওই কেন্দ্রীয় নেতা জানান, সে বিষয়ে সম্ভাবনা থাকলেও এখনও চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হয়নি। তবে এ ব্যাপারে সন্দেহ নেই যে, নেহরুর জন্মদিন উদ্‌যাপনকে কেন্দ্র করে রাজনৈতিক বার্তা দিয়ে সাড়া ফেলার সব রকম চেষ্টা করবে কংগ্রেস। সে জন্য কাল সব রাজ্যের প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতিকে দিল্লিতে বৈঠকে ডেকেছেন সনিয়া। নেহরুর জন্মদিন উদ্‌যাপনের মূল অনুষ্ঠান হবে দিল্লির তালকাটোরা স্টেডিয়ামে। কালকের বৈঠকে রাজ্যস্তরে কর্মসূচি স্থির করার পর মূল অনুষ্ঠানের আয়োজন নিয়ে আলোচনায় বসবেন সনিয়া। তবে সর্বভারতীয় কংগ্রেসের এক সাধারণ সম্পাদকের কথায়, নেহরুর জন্মদিনকে কেন্দ্র করে কংগ্রেস রাজনৈতিক সাড়া ফেলতে পারবে কি না তা অনেকটাই নির্ভর করছে বিহার ভোটের ওপর। ৮ নভেম্বর বিহার ভোটের ফল প্রকাশ হবে। তাতে বিজেপি জিতলে ১৪ নভেম্বরের অনুষ্ঠান রাজনৈতিক ভাবেই দমে যাবে। কিন্তু বিহারে লালু-নীতীশ-কংগ্রেসের মহাজোটের পক্ষে ফল হলে নেহরুর জন্মদিন পালনের অনুষ্ঠানের মাত্রাও বদলে যাবে। সেই মঞ্চকে পুরোদস্তুর ধর্মনিরপেক্ষ জোটের মঞ্চে পরিণত করার চেষ্টা করবেন সনিয়া গাঁধী।

Nayantara Sahgal Nayantara Sahgal protests dadri lynching akademi awards nayantara sahgal akademy awards academy awards abpnewsletters
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy