Advertisement
E-Paper

প্রাণ দিয়ে পাকা সেতুর ব্যবস্থা করল ছোট্ট পিজু

টলমলে, পিছল বাঁশ-দড়ির সেতু থেকে বন্যার জলে ফুঁসতে থাকা পাহাড়ি নদীতে পড়ে যাচ্ছিল দুই বন্ধু। তাদের বাঁচাতে প্রাণপণে চেষ্টা করে ন’বছরের টার পিজু। দুই বন্ধুকে বাঁচাতে পারলেও সে নিজে সেতু থেকে নদীতে পড়ে ভেসে যায় জলের তোড়ে। কিন্তু পিজুর মৃত্যু একেবারে বিফলে গেল না। ঘটনার কথা জানতে পেরে রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী পিজুর বাড়িতে হাজির হন। ঘোষণা করেন, জুলাং গ্রামের যে নদীতে ভেসে গিয়েছে পিজু, সেই পাচিন নদীর উপরে সরকার পাকা সেতু গড়ে দেবে। আর সেতুর নাম হবে পিজুর নামেই।

রাজীবাক্ষ রক্ষিত

শেষ আপডেট: ২৪ মে ২০১৬ ০৩:১৯
পিজুর সাহসের সামনে নতমস্তক অরুণাচলের মুখ্যমন্ত্রী কালিখো পুল।  ছবি: নিজস্ব চিত্র

পিজুর সাহসের সামনে নতমস্তক অরুণাচলের মুখ্যমন্ত্রী কালিখো পুল। ছবি: নিজস্ব চিত্র

টলমলে, পিছল বাঁশ-দড়ির সেতু থেকে বন্যার জলে ফুঁসতে থাকা পাহাড়ি নদীতে পড়ে যাচ্ছিল দুই বন্ধু। তাদের বাঁচাতে প্রাণপণে চেষ্টা করে ন’বছরের টার পিজু। দুই বন্ধুকে বাঁচাতে পারলেও সে নিজে সেতু থেকে নদীতে পড়ে ভেসে যায় জলের তোড়ে। কিন্তু পিজুর মৃত্যু একেবারে বিফলে গেল না। ঘটনার কথা জানতে পেরে রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী পিজুর বাড়িতে হাজির হন। ঘোষণা করেন, জুলাং গ্রামের যে নদীতে ভেসে গিয়েছে পিজু, সেই পাচিন নদীর উপরে সরকার পাকা সেতু গড়ে দেবে। আর সেতুর নাম হবে পিজুর নামেই।

টানা বৃষ্টির জেরে অরুণাচল প্রদেশের পাহাড়ি নদীগুলিতে এখন তীব্র স্রোতের টান। নামছে ধস। তার মধ্যেই পাহাড়ি গ্রামের বাসিন্দারা হাতেগড়া সেতু পার হয়ে যাতায়াত করছেন রুজির টানে।

নিরজুলির জুলাং গ্রামের বাসিন্দা ছোট্ট টার পিজু অ্যালফাবেট পাবলিক স্কুলে পড়ত। বৃহস্পতিবার সে তার দুই বন্ধু, ন’বছরের টার চারু আর ১০ বছরের ফাসাং মেরির সঙ্গে বাঁশ-দড়ির সেতু পার করে নদীর ওপারে যাচ্ছিল। বৃষ্টিতে
পিছল বাঁশ-দড়ির সেতু থেকে আচমকা ফাসাং ও চারুর হাত ফস্কে যায়। তাদের টেনে ধরতে চেষ্টা করে পিজু। দুই বন্ধুকে বাঁচাতে পারলেও ফুঁসতে থাকা নদীতে পড়ে যায় সে। পরে নদী থেকে তাঁর মৃতদেহ উদ্ধার করা হয়।

ঘটনার কথা জানতে পেরে গত কালই অরুণাচলের মুখ্যমন্ত্রী কালিখো পুল ইটানগর থেকে ছোট্ট জুলাং গ্রামে হাজির হন। পিজুর পরিবারের পাশে দাঁড়িয়ে তিনি বলেন, ‘‘মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে নয়, সমব্যথী হিসেবে এখানে এসেছি। ছোট্ট মেয়েটি আমাদের সবার কাছে সাহস ও আত্মত্যাগের অমর উদাহরণ।’’ পিজুর বাবা-মাকে সান্তনা দিয়ে পুল বলেন, ‘‘পিজুকে ফিরিয়ে আনার ক্ষমতা আমার নেই। কিন্তু তাঁর নাম অমর করে রাখতে ওই নদীর উপরে একটি পাকা সেতু গড়া হবে। সেতুর নাম হবে ‘টার পিজু সেতু’।’’ সাহসিকতার ক্ষেত্রে জাতীয় পুরস্কারের জন্যও পিজুর নাম সুপারিশ করবে রাজ্য সরকার। মুখ্যমন্ত্রীর ত্রাণ তহবিল থেকে তিনি পিজুর পরিবারকে চার লক্ষ টাকা ক্ষতিপূরণ দেওয়ার কথাও ঘোষণা করেন। পিজুর মা জানান, মেয়ে খুব ভাল নাচত, গাইত। স্কুলে ভাল খেলোয়াড় হিসেবেও পরিচিত ছিল। এই বয়সেই তার ঘরে বিভিন্ন কৃতিত্বের স্বীকৃতি হিসেবে আটটি স্বর্ণ পদক ও তিনটি রৌপ্য পদক রয়েছে। মুখ্যমন্ত্রী সে সবও দেখেন।

শৈশবে অনাথ হওয়া মুখ্যমন্ত্রী পুল অতি কষ্টে লেখাপড়া করে বড় হয়েছেন। দারিদ্র্য ও অসুস্থতার জেরে একাধিকবার আত্মহত্যার চেষ্টাও করেন তিনি। লোকের বাড়ি তৈরি করে পয়সা জোগাড় করা কিশোর পুল বিভিন্ন মানুষের অর্থসাহায্য পেয়ে বড় হয়েছেন। তাঁর বক্তব্য, তাই দরিদ্র ও ছোটদের প্রতি তাঁর অসম্ভব টান। মুখ্যমন্ত্রী হওয়ার পরে তিনি একটি অসুস্থ মেয়ের বিদেশে স্কিন গ্রাফটিং চিকিৎসা করানোর জন্য ৩০ লক্ষ টাকার ব্যবস্থা করেন। হাসপাতালে থাকা এক শিশুর চিকিৎসার জন্য নিজের চপারে তাঁকে গুয়াহাটি পাঠানোর ব্যবস্থা করেন।

তাঁর দয়ার কথা জানাজানি হওয়ার পর এখন তাঁর সরকারি আবাসের সামনে নিত্য লম্বা লাইন পড়ে অসুস্থদের। খালি হাতে ফেরে না কেউ। প্রতি মাসের দ্বিতীয় শনিবার ‘জনতা দরবার’ও বসান তিনি। অবশ্য সরকারি আমলারা মৃদু আপত্তি তুলেছিলেন, এমন খয়রাতির জেরে রাজকোষে টান পড়তে পারে। কিন্তু পুল পাল্টা জানিয়ে দিয়েছেন, ‘‘আগের সরকার স্বজনপোষণ ও বিভিন্ন প্রকল্পের টাকা যে ভাবে নয়ছয় করেছে তার তুলনায় এই দাতব্য কিছুই নয়।’’

Road mishap Bridge
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy