আমেরিকা থেকে তেল আমদানি বাড়ানো হয়েছে। বিপুল পরিমাণ রান্নার গ্যাস আমদানির কথা ঘোষণা হয়েছে। খুব শীঘ্র ক্ষেপণাস্ত্র আমদানির চুক্তি হতে চলেছে। এ বার আমেরিকার বেসরকারি সংস্থা থেকে পরমাণু বিদ্যুৎ তৈরির চুল্লি আমদানি করার রাস্তাও খুলতে চলেছে নরেন্দ্র মোদী সরকার।
সংসদের আসন্ন শীতকালীন অধিবেশনে পরমাণু বিদ্যুৎ আইন ও পরমাণু চুল্লিতে দুর্ঘটনায় দায়বদ্ধতা আইনে সংশোধন করতে পরমাণু বিদ্যুৎ বিল পেশ করতে চলেছে মোদী সরকার। শীতকালীন অধিবেশনেই এই বিল পাশ করিয়ে নেওয়ার পরিকল্পনাও রয়েছে। এই বিলে পরমাণু চুল্লিতে দুর্ঘটনা ঘটলে বেসরকারি সংস্থাগুলির উপরে যে আর্থিক দায় চাপবে, তার কোনও ঊর্ধ্বসীমা রাখা হয়নি। এ বার মোদী সরকার এই আইন শিথিল করতে চলেছে।গত ১ ফেব্রুয়ারি অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামন তাঁর বাজেটে পরমাণু দুর্ঘটনা দায়বদ্ধতা আইনে সংশোধন করার ইঙ্গিত দিয়েছিলেন। তার পরেই ওয়াশিংটনে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর সঙ্গে বৈঠকের পরে আমেরিকার প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প নিজেই ঘোষণা করে দেন, ভারত পরমাণু বিদ্যুৎ ক্ষেত্রে দুর্ঘটনার দায়বদ্ধতা সংক্রান্ত আইন শিথিল করতে চলেছে। ফলে আমেরিকার সংস্থাগুলি ভারতকে পরমাণু বিদ্যুৎ চুল্লি জোগান দিতে পারবে। যার ফলে ভারতের মানুষ সস্তায় পরিবেশবান্ধব বিদ্যুৎ পাবেন।
সরকারি সূত্রের ব্যাখ্যা, ভারত-আমেরিকার দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য চুক্তির প্রথম দফায় আমেরিকা যাতে ভারতের উপরে ৫০ শতাংশ শুল্ক-জরিমানা তুলে নেয়, তার চেষ্টা চলছে। তার বিনিময়ে ভারতকেও আমেরিকা থেকে আরও আমদানি বাড়ানোর দাবি মানতে হচ্ছে। সেই কারণেই তেল, গ্যাস, সমরাস্ত্র আমদানি বাড়ানোর সিদ্ধান্তের পরে এ বার পরমাণু চুল্লি আমদানির রাস্তা খোলা হচ্ছে।
মোদী সরকারের যুক্তি, ২০০৮-এ মনমোহন সিংহের আমলে ভারত ও আমেরিকার মধ্যে পরমাণু চুক্তি হলেও ভারতে পরমাণু চুল্লি নিয়ে আসার ক্ষেত্রে কোনও অগ্রগতি হয়নি। কারণ পরমাণু দুর্ঘটনা দায়বদ্ধতা আইনে পরমাণু চুল্লি নির্মাতা সংস্থার উপরে দুর্ঘটনার ক্ষেত্রে সীমাহীন আর্থিক দায়বদ্ধতার শর্ত চাপানো রয়েছে। অন্য দিকে পরমাণু বিদ্যুৎ আইনে বেসরকারি সংস্থাকে এ দেশে পরমাণু বিদ্যুৎ কেন্দ্র চালানোর অনুমতি দেওয়া হয়নি। দেশীয় বিদ্যুৎ কেন্দ্রে বিদেশি লগ্নির অনুমতিও দেয় না। সেই কারণেই পরমাণু আইন বিল এলে এই দু’টি আইনে সংশোধন করা হবে। কংগ্রেস অবশ্য মনে করিয়ে দিচ্ছে, মোদী সরকার এখন যে পরমাণু দুর্ঘটনা দায়বদ্ধতা আইন শিথিল করতে চাইছে, মনমোহন সরকারের সময় সেই আইন তৈরি করতেই তৎকালীন লোকসভা ও রাজ্যসভার বিরোধী দলনেতা ও দলনেত্রী হিসেবে সুষমা স্বরাজ ও অরুণ জেটলি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নিয়েছিলেন।
এই খবরটি পড়ার জন্য সাবস্ক্রাইব করুন
5,148
1,999
429
169
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)