অমরনাথ হামলার পরে গোয়েন্দা ব্যর্থতা নিয়ে যখন গোটা দেশ জুড়ে তুলকালাম চলছে, তখন এই দুর্বলতা কাটাতে পৃথক গোয়েন্দা ক্যাডার গঠনের বিষয়ে সক্রিয় হলো নরেন্দ্র মোদী সরকার।
খসড়া নীতি তৈরি হয়েছিল ইউপিএ জমানাতেই। সম্প্রতি বিষয়টি নিয়ে তৎপর হন জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা অজিত ডোভাল। এই বিষয়ে চূড়ান্ত একটি প্রস্তাব ছাড়পত্রের জন্য পাঠানো হয়েছে ন্যাশনাল সিকিউরিটি কাউন্সিলের সচিবালয়ে। যা প্রধানমন্ত্রীর সচিবালয়ের অধীনে। আলাদা গোয়েন্দা ক্যাডার গঠনের বিষয়টি তাই প্রধানমন্ত্রীর সচিবালয়ের চূড়ান্ত ছাড়পত্রের অপেক্ষায়।
বতর্মানে ইনটেলিজেন্স ব্যুরো (আইবি) এবং রিসার্চ অ্যান্ড অ্যানালিটিক্যাল উইং (র’) ছাড়াও ভারতীয় সামরিক বাহিনীর প্রতিটি শাখা, রাজস্ব দফতর, কাস্টমস শাখার আলাদা করে গোয়েন্দা বাহিনী রয়েছে। আলাদা গোয়েন্দা বাহিনী রয়েছে নারকোটিক্স শাখারও। রয়েছে সাইফার ব্যুরোও। সবক’টি বাহিনীর মধ্যে সমন্বয়ের জন্য তৈরি হয়েছে মাল্টি এজেন্সি সেন্টার বা ‘ম্যাক’। রাজ্য ও কেন্দ্রের মধ্যে তথ্য আদানপ্রদানের জন্য বানানো হয়েছে ন্যাশনাল ইনটেলিজেন্স গ্রিডও। কিন্তু সরকারের একাংশের মতে তা সত্ত্বেও সমন্বয়ের বড়সড় ঘাটতি রয়ে যাচ্ছে। তার স্পষ্ট প্রমাণ হল অমরনাথের পথে বাসে হামলা কিংবা সুকমায় জওয়ানদের উপরে মাওবাদী নাশকতার ঘটনা।
এর সমাধানে গোয়েন্দা বাহিনীর জন্য একটি পৃথক ক্যাডার বাহিনী গড়ার বিষয়ে অনেক দিন ধরেই চিন্তাভাবনা করছে কেন্দ্র। এই পরিকল্পনায় একেবারে তৃণমূল স্তর থেকে যুবকদের এই বাহিনীতে নিয়োগ করা হবে। ভর্তির পর থেকেই দেওয়া হবে গোয়েন্দাগিরির পাঠ। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের মতে, বর্তমানে অধিকাংশ গোয়েন্দাবাহিনীর মাঝারি ও শীর্ষ স্তরে সরকারের বিভিন্ন বিভাগ থেকে কর্মীদের তুলে নিয়ে এসে বসিয়ে দেওয়া হয়। অন্য সংস্থা থেকে আসা অফিসারদের অনেক ক্ষেত্রেই তৃণমূল স্তরে গোয়েন্দা সংস্থার কাজ করার অভিজ্ঞতা থাকে না। এতে অনেকাংশেই ‘ফিল্ড এজেন্ট’-দের সঙ্গে শীর্ষ অফিসারদের মতানৈক্য হয়। বহু ক্ষেত্রে নীচুতলা থেকে আসা রিপোর্টকে গুরুত্ব দেওয়া হয় না। কার্গিল হল যার অন্যতম উদাহরণ। বিষয়টি নিয়ে ওয়াকিবহাল কেন্দ্রও। তাই একটি পৃথক গোয়েন্দা বাহিনী গড়ার কথা ভাবা হচ্ছে যার দায়িত্বে থাকবেন সেই বাহিনীতে নিয়োগ হওয়া কর্মীরাই। বাইরে থেকে অন্য ক্যাডারের কাউকে চাপিয়ে দেওয়া হবে না। ধাপে ধাপে সেই বাহিনী থেকেই অন্যান্য গোয়েন্দা বাহিনীগুলিতেও কর্মী নিয়োগ করা হবে।
কার্গিল যুদ্ধের পরে অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তার ক্ষেত্রে প্রাক্তন প্রতিরক্ষা সচিব এন এন ভোহরার নেতৃত্বাধীন টাস্ক ফোর্স প্রথম এই পৃথক ক্যাডারের কথা বলেছিল। এরপর ইউপিএ আমলে তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সুশীল শিণ্ডের সময়েও এই বিষয়ে কাজ এগোয়। কিন্তু তারপরে ধামাচাপা পড়ে যায়। মোদীর আমলে ফের ওই বিষয়টি কাজ শুরু হয়।
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের মতে, গোয়েন্দা তথ্য সংগ্রহের ক্ষেত্রে অন্যান্য উন্নত দেশের তুলনায় ভারত অনেকটাই পিছিয়ে রয়েছে। ভারতে প্রতি ৪০ হাজার ব্যক্তি পিছু মাত্র এক জন করে গোয়েন্দা অফিসার রয়েছেন। ফলে তথ্য সংগ্রহের প্রশ্নে ঘাটতি যে রয়েছে তা মেনে নিচ্ছে সরকারও। তবে এই বাহিনী কেন্দ্রের পাশাপাশি রাজ্যগুলিতেও থাকবে কি না তা এখনও ঠিক হয়নি। তবে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক সূত্রের মতে, কেন্দ্র চাইছে রাজ্যেও এই বাহিনী থাকুক। এতে রাজ্য ও কেন্দ্রের মধ্যে সমন্বয় বজায় থাকবে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy