বাংলাদেশের ‘ক্রমশ খারাপ হওয়া আইন শৃঙ্খলার পরিস্থিতির’ কথা তুলে আজ উদ্বেগ প্রকাশ করল নয়াদিল্লি। সেই সঙ্গে জানানো হল, ‘গুরুতর অপরাধের’ জন্য শাস্তিপ্রাপ্ত জঙ্গি চরমপন্থীদের জেল থেকে মুক্তি দেওয়ার ঘটনায় পরিস্থিতি আরও খারাপ হয়েছে।
আজ সাংবাদিক সম্মেলনে বিদেশ মন্ত্রকের মুখপাত্র রনধীর জয়সওয়াল বলেন, “শান্তিপূণ, স্থিতিশীল, সবাইকে সঙ্গে নিয়ে চলা এবং প্রগতিশীল বাংলাদেশের প্রতি আমাদের সমর্থন রয়েছে যেখানে সমস্ত সঙ্কট গণতান্ত্রিক পথে মেটানো সম্ভব। সবাইকে সঙ্গে নিয়ে সবার প্রতিনিধিত্বে নির্বাচনের মাধ্যমেই এটা সম্ভব।” পাশাপাশি তাঁর বক্তব্য, “বাংলাদেশের ক্রমশ খারাপ হওয়া আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে আমরা উদ্বিগ্ন। গুরুতর অপরাধের জন্য শাস্তিপ্রাপ্ত জঙ্গি চরমপন্থীদের জেল থেকে ছেড়ে দেওয়ায় হাল আরও খারাপ হয়েছে।”
অন্যদিকে নয়াদিল্লির কাছে আসা রিপোর্ট বলছে, বাংলাদেশের সাধারণ মানুষকে আরও বিপদে ফেলতে বড় ধরনের ষড়যন্ত্রের জাল বিছানোর প্রক্রিয়া চলছে পুরোদমে। সেই ষড়যন্ত্রের ফলে বাংলাদেশের সার্বভৌমত্ব বিপন্ন হতে পারে বলে মনে করা হচ্ছে। সেটা বুঝেই সম্প্রতি সে দেশের সেনাপ্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ় জ়ামান দেশবাসীকে আগেই সতর্ক করে দিয়েছেন। জানা গিয়েছে, গোটা বিষয়ে বর্তমান কোয়ার্টার মাষ্টার জেনারেল লেঃ জেনারেল ফাইজুর রহমানের ভূমিকা নিয়ে চর্চা হচ্ছে। তাঁকে পিছন থেকে মদত দিচ্ছে পাকিস্তানি গুপ্তচর সংস্থা আইএসআই। ঢাকার রাওয়া কনভেনশন হলে জেনারেল ওয়াকার-উজ় জ়ামানের বক্তব্যে যে ভাষা প্রয়োগ করা হয়েছে তাতে স্পষ্ট ইঙ্গিত, ষড়যন্ত্রের বিষয়ে তিনিও অবগত আছেন। দেশ বিদেশের রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন, তাই সামরিক বাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত ও বর্তমান অফিসারদের সামনেই দৃঢ় ভাবে নিজের অবস্থান ব্যক্ত করেন সেনাপ্রধান।
সূত্রের খবর, কোয়ার্টার মাস্টার জেনারেল ফায়জুর রহমানের সঙ্গে বহু দিন ধরেই পাকিস্তানের সম্পর্ক মধুর। তিনি অন্তর্বর্তী সরকারের আমলে লেফট্যানেন্ট জেনারেল পদ পেয়ে পাকিস্তান সফর করে আসেন। অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান মুহাম্মদ ইউনূসই তাঁকে প্রতিরক্ষা গোয়েন্দা মহাপরিদপ্তর (ডিজিএফআই)-এর মহাপরিচালকের দায়িত্ব দেন। তার পর থেকেই শুরু হয় ঘোঁট পাকানোর প্রক্রিয়া। নির্বাচন নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলি তাগাদা দিলেও অন্তর্বর্তী সরকার এখনও কোনও পথ নির্দেশিকা দেয়নি। ঘোঁট পাকানোর প্রশ্নে সামনে এসেছে, সাবেক সেনা প্রধান জেনারেল (অবঃ) ইকবাল করিম ভুঁইয়া ও জেনারেল (অবঃ) আবু বেলাল মোহাম্মদ শফিউল হক, লেফটেনেন্ট জেনারেল (অবঃ) চৌধুরী হাসান সারওয়ার্দী, মেজর জেনারেল (অবঃ) এহতেশামুল হক এবং ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অবঃ) শামিম কামালের নাম। ওয়াকার-বিরোধী সেনাকর্তাদের সহযোগিতা এবং জামায়াতের মদতে তাঁরা নতুন রাজনৈতিক দল গড়াও শুরু করেছেন।
পাশাপাশি বাংলাদেশের সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের পরিস্থিত নিয়েও আজ উদ্বেগ প্রকাশ করেছে সাউথ ব্লক। বিদেশ মন্ত্রকের মুখপাত্র জানিয়েছেন, বাংলাদেশের পুলিশ সংখ্যালঘুদের বিরুদ্ধে ২০২৪-এর অগস্ট থেকে ২০২৫-র ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত হওয়া মোট ২,৩৭৪টি ঘটনার মধ্যে ১২৫৪টি খতিয়ে দেখেছে। তার মধ্যে ৯৮ শতাংশ ঘটনাকে ‘রাজনৈতিক’ আখ্যা দেওয়া হয়েছে। জয়সওয়ালের কথায়, “আমরা আশা করব হত্যা, অগ্নিকাণ্ড এবং হিংসার সঙ্গে জড়িত সমস্ত অপরাধীর যেন বিচার হয়, কোনও পক্ষপাত যেন না করা হয়।”
এই খবরটি পড়ার জন্য সাবস্ক্রাইব করুন
5,148
1,999
429
169
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)