‘সুদিন’ (অচ্ছে দিন) এসে গিয়েছে- দু’বছরের মাথাতেও তা তাল ঠুকে বলতে পারছে না কেন্দ্রের নরেন্দ্র মোদী সরকার।
এ মাসের ২৬ তারিখে নরেন্দ্র মোদী সরকার দু’বছর পূর্ণ করতে চলেছে। কী ভাবে গোটা দেশে সরকারের সাফল্য মেলে ধরা যায়, তা নিয়ে সরকারের অন্দর মহলে চলছে যুদ্ধকালীন তৎপরতা। কিন্তু যে ‘অচ্ছে দিন’ আনার স্লোগান তুলে নরেন্দ্র মোদী লোকসভায় বিপুল সংখ্যা নিয়ে জিতে এসেছিলেন, দু’বছরের মাথায় সেই শব্দগুচ্ছ ঘুণাক্ষরেও উচ্চারণ করছে না সরকার। ২৬ তারিখকে মাথায় রেখে সরকারের যে প্রস্তুতি চলছে, তার মূল থিম হল ‘ভারতের পরিবর্তন’। রাজধানী দিল্লিতে ইন্ডিয়া গেটে বলিউডের খান-বচ্চনের মতো তারকাদের নিয়েও একটি অনুষ্ঠানের পরিকল্পনা করা হচ্ছে, সেখানের থিম হল ‘জারা মুসকুরা দো’ (একটু হাসুন)।
সরকারের দু’বছর পূর্তি উপলক্ষে বেঙ্কাইয়া নায়ডু, নিতিন গডকড়ী, পীযূষ গয়াল, রাজ্যবর্ধন রাঠোরদের নিয়ে একটি কমিটি গঠন করেছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। প্রতিটি মন্ত্রীকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে নিজেদের মন্ত্রকের সাফল্যসূচি তৈরি করতে। তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রকের তত্ত্বাবধানে সোশ্যাল মিডিয়ায় এই সাফল্য তুলে ধরতে #TransformingIndia চালু করা হয়েছে। প্রতিটি মন্ত্রী তাতে নিজেদের মন্ত্রকের উপলব্ধি তুলে ধরছেন। কিন্তু প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশ, শুধুমাত্র দিল্লি ও সোশ্যাল মিডিয়াতেই নয়, গোটা দেশের ২০০টি এলাকা বেছে নিতে হবে, যেখানে সব মন্ত্রী সশরীরে উপস্থিত থেকে সরকারের সাফল্য তুলে ধরবেন। বিশেষ করে, গরিব, দলিত, মহিলা, কৃষক, যুবক ও প্রান্তিক এলাকার মানুষজনের জন্য সরকার কী কী পদক্ষেপ করেছে, তা পৌঁছে দিতে হবে সাধারণ মানুষের কাছে।
তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রক এর পাশাপাশি দিল্লির ইন্ডিয়া গেটে একটি অনুষ্ঠান করতে চাইছে। সেখানে বলিউডের তিন খান, অমিতাভ বচ্চনদের আনা যায় কি না, তা নিয়েও ভাবনাচিন্তা চলছে। প্রায় আট ঘণ্টার সেই অনুষ্ঠানে মোদী সরকারের বিভিন্ন মন্ত্রীকে বসিয়ে দেওয়া হবে। চলবে প্রশ্নোত্তর পর্ব। মোদী সরকারের এক মন্ত্রীর কথায়, ‘‘প্রধানমন্ত্রী শুধুমাত্র সাফল্য মেলে ধরার জন্য কিছু হিসেবনিকেষে সীমাবদ্ধ রাখতে চাইছেন না। কতজনের জনধন অ্যাকাউন্ট খোলা হল, কতজন গরিব পরিবারে রান্নার গ্যাস এল, শুধু সেই পরিসংখ্যানে আবদ্ধ রাখতে চাইছেন না। তিনি চান, গ্রাম-গঞ্জে সরকারি প্রকল্পে যাঁরা লাভবান হয়েছেন, তাঁদের কাহিনি রেকর্ড করে জনসমক্ষে রাখতে। যাতে এটি আরও বিশ্বাসযোগ্য হয় ও বিরোধীদের মুখও বন্ধ করা যায়।’’
গত দু’বছর ধরে বিরোধীরা লাগাতার বলে আসছে, লোকসভা নির্বাচনের সময় নরেন্দ্র মোদী যে ভুরি ভুরি প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন, সেটি কিছুই বাস্তবায়িত হয়নি। মানুষ সেই তিমিরেই থেকে গিয়েছেন। আর প্রধানমন্ত্রী শুধু বড় বড় কথা বলে মায়াজাল বিস্তার করেন। আদপে কারওই ‘অচ্ছে দিন’ আসেনি। সেই বদনাম ঘোচাতেই এখন গ্রাম থেকে ‘জীবন্ত দৃষ্টান্ত’ তুলে আনতে নেমে পড়েছে মোদীর তন্ত্র। কিন্তু সরকারের কর্তাব্যক্তিরা কবুল করছেন, এখনই তাল ঠুকে বলবার সময় আসেনি ‘অচ্ছে দিন’ এসে গিয়েছে। গত বছর সরকারের এক বছর পূর্তি উপলক্ষে প্রধানমন্ত্রী সরকারের রিপোর্ট কার্ড পেশ করার জন্য চলে গিয়েছিলেন উত্তরপ্রদেশের মথুরার কাছে দীনদয়াল উপাধ্যায়ের জন্মভিটে নাঙ্গলা চন্দ্রভান গ্রামে। সেখানে গিয়ে তিনি ‘সুদিন এসেছে’র বদলে নতুন স্লোগানের আশ্রয় নিয়ে বলেছিলেন ‘দুর্দিন ঘুচেছে’। এ বারেও সরকারের যাবতীয় প্রস্তুতির থিম ঘোরাফেরা করছে ‘ভারতের পরিবর্তন’ বা ‘একটু হাসুন’-এর মধ্যে।
বিজেপি নেতারা বলছেন, নরেন্দ্র মোদী সরকার ক্ষমতায় এসেছেন পাঁচ বছরের জন্য। প্রধানমন্ত্রী নিজেই বারবার বলেছেন, কংগ্রেস যে গর্ত খুড়ে গিয়েছে, তা বোজাতেই অনেকটা সময় লেগে যাবে। ফলে দিনরাত মেহনত করে নরেন্দ্র মোদী সেই কাজটি করছেন। পাঁচ বছর আসতে আসতে ‘অচ্ছে দিন’ও চলে আসবে।
আরও পড়ুন...
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy